শিরোনাম
ঢাকা, ২২ মে, ২০২৫ (বাসস) : চীন ২০২৫ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে নদী ও হ্রদ রক্ষায় এবং ‘সুন্দর জলাশয়’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। এতে জলজ পরিবেশের গুণগত মান উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে।
বেইজিং থেকে সিনহুয়া জানায়, পরিকল্পনাটি বুধবার দেশটির পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার যৌথভাবে প্রকাশিত হয়। এতে ২০৩০ সালের মধ্যে ‘সুন্দর নদী ও হ্রদ’ সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনের এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে পুরো উদ্যোগ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জলবাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ বিভাগে উপপরিচালক লিউ জিং জানান, সুন্দর নদী ও হ্রদের জন্য কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হয়।
জলের উৎসের দিক থেকে এমন নদী ও হ্রদের প্রয়োজন যেগুলোতে প্রবাহমান পানি থাকে, পুনঃপূরণ নিশ্চিত হয় এবং পরিবেশগতভাবে প্রয়োজনীয় পানি সংরক্ষিত থাকে। এই অবস্থাকে বলা হয় ‘প্রবাহমান নদী’।
জলবাস্তুতন্ত্রের ক্ষেত্রে নদী ও হ্রদের বাস্তুতন্ত্র ও তার আশপাশের বাফার অঞ্চল সংরক্ষণ বা পুনরুদ্ধার করতে হবে, জীববৈচিত্র্য রক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং স্থানীয় প্রতিনিধিত্বমূলক প্রজাতিগুলোর ফিরে আসা নিশ্চিত করতে হবে। এর মাধ্যমে ‘মাছ ও জলজ উদ্ভিদসহ নদী’ নিশ্চিত হবে।
জলপরিবেশের দিক থেকে পরিকল্পনায় বলা হয়, অববাহিকার মধ্যে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, পানির গুণমান উন্নত বা স্থায়ীভাবে ভালো রাখতে হবে, জনসাধারণের জন্য জলাধার কেন্দ্রিক অবকাশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা করতে হবে এবং জনসাধারণের পরিবেশগত উদ্বেগ যথাযথভাবে সমাধান করতে হবে—যার মাধ্যমে ‘মানুষ ও জলের সহাবস্থান’ সম্ভব হবে।
পরিকল্পনায় বিজ্ঞানভিত্তিক, লক্ষ্যভিত্তিক ও আইনি দূষণ নিয়ন্ত্রণ, পানি সম্পদ, জলপরিবেশ ও জলবাস্তুতন্ত্রের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, এবং নদীর উজান-ভাটির মধ্যে সমন্বিত পরিবেশ সংরক্ষণ কাঠামো গঠনের কথা বলা হয়েছে।
এতে মোট ১৯টি নির্দিষ্ট পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে পানির গুণমান ব্যবস্থাপনা আরও সুসংহত করা, মৌলিক পরিবেশগত পানি সংরক্ষণ নিশ্চিত করা এবং সমন্বিতভাবে নদী ও হ্রদ সংরক্ষণ ও গঠন কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া।
চীন ২,৫৭৩টি জলাশয়কে এই কর্মসূচির আওতায় এনেছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রধান নদী, গুরুত্বপূর্ণ উপনদী, পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হ্রদ ও জলাধার।
এর মধ্যে ইয়াংসি নদীর ৬,৩০০ কিলোমিটার এবং হোয়াংহো নদীর ৫,৪০০ কিলোমিটার মূল প্রবাহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
চীন গত তিন বছর ইয়াংসি অববাহিকায় জলবাস্তুতন্ত্র মূল্যায়নের পাইলট কর্মসূচি পরিচালনা করেছে এবং হোয়াংহো নদীতেও একই ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের মধ্যে ইয়াংসি নদীর জলে জৈবিক অখণ্ডতা সূচক উন্নত হবে, হোয়াংহো অববাহিকায় জীববৈচিত্র্েযর অবনমন রোধে প্রাথমিক সাফল্য আসবে এবং বড় বড় নদীতে পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ কাঠামো চালু করা হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, জলবাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত সহায়তা জোরদার করতে হবে, উদ্ভাবনে অগ্রগতি আনতে হবে, গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা বাড়াতে হবে, পরিবেশ বিষয়ক প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়াতে হবে এবং গবেষণা ফলাফল বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে।
এ কাজে কেন্দ্রীয় অর্থায়ন থাকবে, এবং স্থানীয় সরকার ও বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সেবা ক্রয়, তৃতীয় পক্ষের পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে সামাজিক বিনিয়োগ উৎসাহিত করার কথা বলেন লিউ।