বাসস
  ২২ মে ২০২৫, ১২:৪২

গাজায় প্রায় ৯০টি ত্রাণবাহী ট্রাক পাঠানো হয়েছে : জাতিসংঘ

ঢাকা, ২২ মে, ২০২৫ (বাসস) : ইসরাইলের নতুন করে হামলা ও অবরোধ শুরুর প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক চাপ বেড়ে যাওয়ার মধ্যে জাতিসংঘ বুধবার জানিয়েছে, তারা গাজা উপত্যকায় প্রায় ৯০টি ত্রাণবাহী ট্রাক ‘প্রেরণ’ করেছে।

গাজা সিটি থেকে এএফপি জানায়, চলতি বছরের মার্চের শুরু থেকে গাজায় এই প্রথমবারের মতো ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলো।

এদিন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, তিনি ‘অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির’ ব্যাপারে উন্মুক্ত রয়েছেন, তবে আবারও জোর দিয়ে বলেন যে, ইসরাইল গাজার পুরো ভূখণ্ডকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যেই কাজ করছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্তেফান দুজারিক জানান, ইসরাইল তিন দিন আগে সীমিত পরিসরে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর জাতিসংঘ ‘কেরেম শালোম সীমান্ত পারাপার পথ থেকে প্রায় ৯০টি ট্রাকের পণ্য সংগ্রহ করে গাজায় প্রেরণ করা হয়েছে।

এই খবরটি এমন এক সময় এলো, যখন ইসরাইলি সেনারা অধিকৃত পশ্চিম তীরে বিদেশি কূটনীতিকদের একটি প্রতিনিধিদলের কাছাকাছি ‘সতর্কতামূলক গুলি’ চালায় বলে দাবি করেছে।  এর ফলে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে।

গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকারপন্থী মিডিয়া অফিস জানায়, বুধবার ৮৭টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে, যা আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ‘জরুরি মানবিক প্রয়োজন’ পূরণের উদ্দেশ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

নেতানিয়াহু বলেন, গাজায় ‘অপারেশন পরিচালনার স্বাধীনতা রক্ষায়’ মানবিক সংকট এড়ানো প্রয়োজন।

গত কয়েক সপ্তাহের প্রায় পূর্ণাঙ্গ বিচ্ছিন্নতার ফলে গাজার জনগণ মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য হাহাকার করছে। ইসরাইলি অবরোধের ফলে খাদ্য ও ওষুধের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে ইসরাইলি বাহিনী গাজায় বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। বুধবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় ৮২টি মরদেহ বিভিন্ন হাসপাতালে পৌঁছেছে।

দিনে একবারই খাবার জোটে

গাজা শহরে আশ্রয় নেওয়া ৫৩ বছর বয়সী উম্মে তালাল আল-মাসরি বলেন, পরিস্থিতি সহ্য করার মতো নয়।

'কেউই আমাদের কাছে কিছু পৌঁছাচ্ছে না। সবাই অপেক্ষায় আছে ত্রাণের, কিন্তু আমরা এখনও কিছুই পাইনি।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা দিনে কেবল একবারই খাবার জোটাতে পারি।'

মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় যে পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশ করছে তা এই সংকট নিরসনের জন্য যথেষ্ট নয়।

মার্কিন-সমর্থিত বেসরকারি সংস্থা ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) বলেছে, তারা ঠিকাদারদের মাধ্যমে ‘কয়েক দিনের মধ্যেই’ ত্রাণ সরবরাহ শুরু করবে।

জাতিসংঘ ও ঐতিহ্যবাহী সংস্থাগুলো এই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অনেকে ফাউন্ডেশনটিকে ইসরাইলের সঙ্গে কাজ করার অভিযোগও তুলেছে।

জিএইচএফ জানিয়েছে, তারা প্রথম ৯০ দিনে প্রায় ৩০ কোটি খাবার বিতরণ করবে।

ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়ছে

গত সপ্তাহান্তে ইসরাইল হামলা জোরদার করে জানায়, তারা হামাসকে পরাজিত করতেই এই অভিযান চালাচ্ছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইল আক্রমণ করার পর এই যুদ্ধ শুরু হয়।

তবে সম্প্রতি ইসরাইলকে তাদের অভিযান বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে—এমনকি তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও চাপ দিচ্ছে।

মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি (যার আওতায় বাণিজ্য রয়েছে) পুনঃমূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই সিদ্ধান্ত ‘ইসরাইল যে জটিল বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার প্রতি পুরোপুরি অজ্ঞতা প্রকাশ করে’।

সুইডেন বলেছে, তারা ইসরাইলি মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ২৭ দেশের ইইউ জোটকে চাপ দেবে। অন্যদিকে ব্রিটেন ইসরাইলের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে এবং ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে।

পোপ চতুর্দশ লিও গাজার পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক ও বেদনাদায়ক’ বলে অভিহিত করে ‘যথেষ্ট পরিমাণে মানবিক সহায়তা প্রবেশের’ আহ্বান জানান।

জার্মানি ইইউ-ইসরাইল সহযোগিতা চুক্তিকে ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছে, গাজার সংকট নিয়ে সমালোচনামূলক প্রশ্ন তোলার জন্য এই চুক্তিই হতে পারে সঠিক মাধ্যম।

গাজায় ইসরাইল ১৮ মার্চ থেকে অভিযান ফের শুরু করে, দুই মাসের যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটিয়ে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় ১,২১৮ জন ইসরাইলি নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক।

হামাস ও তাদের মিত্ররা ২৫১ জনকে জিম্মি করেছিল, যাদের মধ্যে ৫৭ জন এখনো গাজায় রয়েছেন। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলছে, এদের মধ্যে ৩৪ জন মৃত।

নেতানিয়াহু বলেন, 'যদি জিম্মিদের মুক্তি দিতে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির কোনো সুযোগ থাকে, তাহলে আমরা প্রস্তুত।' ইসরাইলি গোয়েন্দারা বিশ্বাস করে, কমপক্ষে ২০ জন জিম্মি এখনও জীবিত।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ১৮ মার্চ থেকে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৩,৫০৯ জন নিহত হয়েছেন, ফলে চলমান যুদ্ধে মোট প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩,৬৫৫ জনে—যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।

এদিকে, প্রতিবেশী লেবাননে ইসরাইলি হামলায় বুধবার তিনজন নিহত হয়েছে। ইসরাইল জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ লেবাননে হামাসের মিত্র হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে—যদিও ওই অঞ্চলে ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চলছিল।