বাসস
  ২০ মে ২০২৫, ১০:০৪

ইউক্রেন আলোচনা নিয়ে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের নিবিড় সমন্বয়ের ঘোষণা, পোপের আলোচনার প্রস্তাবও গৃহীত

ঢাকা, ২০ মে, ২০২৫ (বাসস) : রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফোনালাপের পর ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে নিবিড় সমন্বয়ের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পরপরই ট্রাম্প পৃথকভাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েন মাখোঁ , ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার স্টাব, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডের লায়েনের সঙ্গে কথা বলেন।

জার্মান চ্যান্সেলরের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, এই আলোচনায় নেতারা যুদ্ধবিরতির পথে ইউক্রেনকে ঘনিষ্ঠভাবে সঙ্গ দেওয়ার বিষয়ে একমত হন এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন।

এর আগে ট্রাম্পের সঙ্গে দীর্ঘ ফোনালাপের পর পুতিন বলেন, রাশিয়া 'শান্তিচুক্তি সংক্রান্ত একটি মেমোরান্ডাম’ প্রস্তাব করবে এবং তা নিয়ে কিয়েভের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে। তার ভাষায়, এতে সমঝোতার মূলনীতি, শান্তিচুক্তির সময়সূচি ও সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির সময়সীমা নির্ধারণ করা হতে পারে।

তিনি বলেন, 'আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই সংকটের মূল কারণগুলো দূর করা।'

পুতিনের বক্তব্য অনুযায়ী, এই প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সমন্বয় করে দেওয়া হবে।

ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ লেখেন, 'রাশিয়া ও ইউক্রেন তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি এবং এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, যুদ্ধের সমাপ্তির লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করবে।' তিনি আরও বলেন, 'আলোচনার পরিবেশ ও মনোভাব অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল।'

এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানান, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে পৃথকভাবে দু’দফা ফোনে কথা বলেন—একবার পুতিনের সঙ্গে আলাপের আগেই এবং আবার পরে, ইউরোপীয় নেতাদের উপস্থিতিতে।

তবে রাশিয়ার প্রস্তাবিত ‘মেমোরান্ডাম’ সম্পর্কে তিনি এখনও 'কোনো স্পষ্ট তথ্য পাননি' বলেও উল্লেখ করেন।

জেলেনস্কি বলেন, 'আমরা রাশিয়ার পক্ষ থেকে প্রস্তাব বা মেমোরান্ডাম পেলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করব। আলোচনা প্রক্রিয়ার অংশ হতে আমরা প্রস্তুত ।'

তিনি জানান, ইউক্রেন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর অংশগ্রহণে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন করার বিষয়টি বিবেচনায় আছে এবং এটি যত দ্রুত সম্ভব হওয়া দরকার।

এদিকে ভ্যাটিকান এই আলোচনার আয়োজক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রথম আমেরিকান পন্টি, নবনির্বাচিত পোপ  চতুর্দশ লিও আলোচনার আয়োজক হতে 'অত্যন্ত আগ্রহী' বলে জানান ট্রাম্প।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনির দপ্তর জানায়, 'শান্তির ভিত্তি তৈরিতে আলোচনা শুরুর প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে এবং এ জন্য পোপের উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ইতালি যোগাযোগ ও শান্তি প্রচেষ্টায় নিজ ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত আছে।'

এছাড়া জেলেনস্কি রোমে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও'র সঙ্গে আলোচনায় বসেন। ওই আলোচনায় তুরস্কে ব্যর্থ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার প্রতিনিধিদের দায়িত্বহীন ভূমিকা, প্রয়োজনীয় নিষেধাজ্ঞা, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, এবং আসন্ন যুদ্ধবন্দি বিনিময় ইস্যুতে মতবিনিময় হয়।

তিনি বলেন, 'যতক্ষণ না রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে আগ্রহী হয়, ততক্ষণ চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।'

এদিকে, পুতিন সম্প্রতি জেলেনস্কির ব্যক্তিগত বৈঠকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ইউক্রেন ও পশ্চিমা মিত্রদের দাবি ছিল ৩০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতির। তবে তুরস্কে শুক্রবারের বৈঠক দুই ঘণ্টারও কম স্থায়ী হয় এবং যুদ্ধবিরতির কোনো চুক্তি হয়নি, যদিও উভয় পক্ষ ১,০০০ করে যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে রাজি হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষে দেশে ফেরার পথে ট্রাম্প বলেন, 'পুতিন তুরস্কে যাননি, কারণ আমি সেখানে ছিলাম না। তবে আমি ও উনি দেখা করব—সমাধান করতে পারি, আবার নাও পারি। অন্তত বোঝা যাবে।'