শিরোনাম
ঢাকা, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ১২ বছর ধরে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে কাজ করা এক অভিজ্ঞ কূটনীতিক, কার্ডিনাল পিয়েত্রো পারোলিন রোম এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে সুপরিচিত এবং পরবর্তী পোপ হওয়ার ক্ষেত্রে একজন শক্তিশালী প্রার্থী।
ভ্যাটিকান সিটি থেকে এএফপি জানায়, ৭০ বছর বয়সী এই ইতালীয় নাগরিক পোপ ফ্রান্সিসের পুরো সময়জুড়ে ভ্যাটিকানের কার্যত ‘নম্বর টু’ হিসেবে পরিচিত সেক্রেটারি অব স্টেটের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বৈশ্বিক মঞ্চে ভ্যাটিকানের সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রতিনিধি ছিলেন।
শান্ত স্বভাব এবং সূক্ষ্ম রসবোধের অধিকারী পারোলিন একজন দক্ষ কূটনীতিক, যিনি এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকায় কাজ করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের মধ্যস্থতা এবং চীনের সঙ্গে বিশপ নিয়োগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ এক চুক্তি সম্পাদনে ভূমিকা রেখেছেন।
পোপ ফ্রান্সিস ২১ এপ্রিল মারা যাওয়ার পর ৭ মে শুরু হতে যাওয়া কার্ডিনালদের কনক্লেভে পারোলিন পোপ হওয়ার দৌড়ে সবার আগে আছেন বলে বিবেচিত।
বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও কূটনীতিকদের কাছে তিনি সুপরিচিত। রোমান কুরিয়া তথা ভ্যাটিকানের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের জটিলতা সম্পর্কে তার গভীর ধারণা রয়েছে এবং তিনি ফ্রান্সিসের পরামর্শক কার্ডিনালদের দলেও ছিলেন।
তার মধ্যপন্থি সামাজিক অবস্থান ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে পোপ হলে পোপ ফ্রান্সিসের নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বলা হচ্ছে, তিনি চার্চের বিভিন্ন মতাদর্শিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে সক্ষম।
এক ধর্মীয় সূত্র এএফপিকে বলেছেন, 'তিনি সবচেয়ে পরিচিত কার্ডিনাল। তবে প্রশ্ন হলো, এই পরিচিতি তাকে ঐকমত্য তৈরিতে সাহায্য করবে, না তা তার বিপরীতে যাবে।'
তবে ওই সূত্র এটাও বলেন যে, পারোলিন কখনও প্যারিসে দায়িত্ব পালন করেননি এবং সামাজিক ইস্যুতে খুব কমই অবস্থান প্রকাশ করেছেন। তিনি বরাবরই একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকায় থেকেছেন, ফলে তিনি কী ভাবেন, তা বোঝা কঠিন এটিই হতে পারে তার দুর্বলতা।
-ভিয়েতনাম থেকে চীন-
ফরাসি, ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় দক্ষ পারোলিন সতর্ক স্বভাবের, প্রকাশ্যে এমন কিছু বলেন না যা ভুল ব্যাখ্যার জন্ম দিতে পারে যা প্রাক্তন পোপ ফ্রান্সিস প্রায়ই করতেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পোপের কিছু বক্তব্যের পরে পারোলিনকে প্রায়ই বিবৃতি সংশোধনে এগিয়ে আসতে হয়েছে।
২০১৩ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর পোপ ফ্রান্সিস পারোলিনকে সেক্রেটারি অব স্টেট নিয়োগ দেন এবং ২০১৪ সালে তাঁকে কার্ডিনাল করেন।
পারোলিন ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে ভ্যাটিকানের মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
তিনিই ২০১৮ সালে চীনের সঙ্গে বিশপ নিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তির নেতৃত্ব দেন, যা পরে নবায়নও করা হয়।
চুক্তিটি দুই পক্ষকেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ভূমিকা দেওয়ার সুযোগ দেয় এবং সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।
তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু রক্ষণশীল পক্ষ পারোলিনকে সমালোচনা করে বলেন, তিনি চীনের ভূগর্ভস্থ গির্জার ক্যাথলিকদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে চুক্তিটি করেছেন।
পারোলিন ভিয়েতনামের সঙ্গেও একই ধরনের চুক্তির পক্ষপাতী।
-বিশ্বাসে পরিপূর্ণ জীবন-
পারোলিন ১৯৫৫ সালের ১৭ জানুয়ারি ইতালির উত্তরাঞ্চলের ভেনিসের কাছাকাছি এক গভীরভাবে ক্যাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা একটি হার্ডওয়্যারের দোকান চালাতেন এবং মা ছিলেন শিক্ষক।
মাত্র ১০ বছর বয়সে এক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবাকে হারান এবং এরপরই তাঁর ধর্মীয় অনুরাগ গড়ে ওঠে।
১৪ বছর বয়সে সেমিনারিতে যোগ দেন, ২৫ বছর বয়সে পুরোহিত হিসেবে অভিষিক্ত হন এবং এরপর রোমে গিয়ে ক্যাথলিক আইন ও কূটনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৮৬ সালে ভ্যাটিকানের কূটনৈতিক দপ্তরে যোগ দেন এবং গত চার দশকজুড়ে বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি নাইজেরিয়ায় (১৯৮৬ু৮৯), মেক্সিকোতে (১৯৮৯ু১৯৯২), যুদ্ধবিধ্বস্ত রুয়ান্ডা এবং ভেনেজুয়েলায় (২০০৯ু২০১৩) দায়িত্ব পালন করেন।
যদিও সামাজিক ইস্যুতে তার মন্তব্য খুবই কম, তবে তিনি বলেছেন, পুরোহিতদের সেলিবেসি কোনো 'ডগমা’ নয়। ২০২৩ সালে তিনি চার্চে যৌন নির্যাতনের বিষয়কে সমকামিতার সঙ্গে যুক্ত করার প্রচেষ্টাকে ‘অপমানজনক’ বলে অভিহিত করেন।
তিনি সেলিবেসিকে ‘ঈশ্বরের উপহার’ বলেও বর্ণনা করেন এবং গর্ভপাত ও সারোগেসিকে মানব মর্যাদার গুরুতর লঙ্ঘন বলে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, লিঙ্গ ও জৈবিক যৌনতার বিভাজনমূলক ধারণা গ্রহণযোগ্য নয়।