শিরোনাম
ঢাকা, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের দখলদারির হুমকি মোকাবিলা এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক নির্ধারণের লক্ষ্যে নতুন সরকার গঠনের জন্য সোমবার ভোট দেওয়া শুরু করেছে কানাডার জনগণ।
অটোয়া ও মন্ট্রিয়াল থেকে এএফপি জানায়, ট্রাম্পের নেতৃত্বে শুরু হওয়া বাণিজ্য যুদ্ধ পুরো নির্বাচনী প্রচারণাকে প্রভাবিত করেছে।
বিশাল এই দেশের ছয়টি টাইম জোনজুড়ে প্রথম ভোটকেন্দ্র খুলেছে আটলান্টিক প্রদেশ নিউফাউন্ডল্যান্ড অ্যান্ড ল্যাব্রাডরে।
নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টি কনজারভেটিভ দলের পিয়েরে পোইলিভ্রের কাছে পরাজিত হওয়ার পথে ছিল, তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দেশটির প্রতি আক্রমণের ফলে ভোটের পূর্বাভাসে হঠাৎ পরিবর্তন আসে।
৬০ বছর বয়সী কার্নি কখনও নির্বাচিত পদে আসীন হননি। গত মাসে তিনি প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিসিক্ত হন। তিনি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার হিসেবে একটি লাভজনক ক্যারিয়ার গড়েছিলেন এবং কানাডা ও ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে কাজ করেছিলেন।
কার্নি দাবি করেছেন যে তার বৈশ্বিক আর্থিক অভিজ্ঞতা তাকে ট্রাম্পের শুল্কের প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য প্রস্তুত করেছে।
তিনি এছাড়াও দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য পুনরুজ্জীবিত করার এবং কানাডার বৈদেশিক অর্থনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমানো যায়। যুক্তরাষ্ট্রকে 'আমরা আর বিশ্বাস করতে পারি না' উল্লেখ করে তিনি সতর্ক করেছেন, :যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ভাঙতে চায়, যাতে তারা আমাদের অধিকারী হতে পারে।'
'আমরা বিশৃঙ্খলা চাই না, শান্তি চাই। আমরা রাগ চাই না, একজন পরিণত ব্যক্তিকে চাই,' প্রচারণার শেষ দিনে তিনি বলেছেন।
৪৫ বছর বয়সী একজন পেশাদার রাজনীতিবিদ পোইলিভ্র চেষ্টা করেছেন দেশীয় সমস্যা, যেমন ট্রুডোর শাসনামলে যেসব বিষয় কানাডিয়ানদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল, বিশেষত জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, তার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে।
তিনি বলেছেন, 'কার্নি যে ‘হারানো লিবারেল দশক’কে অব্যাহত রাখবে, এবং কেবল একটি নতুন কনজারভেটিভ সরকারই অপরাধ, বাসস্থানের ঘাটতি এবং অন্যান্য ট্রাম্প সম্পর্কিত বিষয়গুলো মোকাবেলায় ব্যবস্থা নিতে পারবে, যেগুলো কানাডিয়ানরা তাদের অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।'
'আপনি আর এটি আরও চার বছর সহ্য করতে পারবেন না,' তিনি সপ্তাহান্তের শেষে বলেছেন।
পোইলিভ্র ট্রাম্পকে সমালোচনা করেছেন, তবে দাবি করেছেন যে লিবারেলদের দশ বছরের দুর্বল শাসন কানাডাকে নতুন শত্রুপ্রতিপন্ন দক্ষিণের প্রতিবেশীর কাছে বিপদগ্রস্ত করেছে।
- 'ভাল পছন্দ' -
চূড়ান্ত জরিপগুলো সংকটময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখাচ্ছে, তবে কার্নিকে এগিয়ে রেখেছে।
জরিপগুলোতে এটি ব্যাপকভাবে প্রদর্শিত হয়েছে যে ভোটাররা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাকে ট্রাম্পের মোকাবেলায় সবচেয়ে উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে দেখছেন।
কেবেকের কাছে অটোয়ার বাসিন্দা জেফ সিমস রোববার এএফপিকে বলেছেন, 'তার কাছে 'পেডিগ্রি' রয়েছে, তাই আমি মনে করি এটি একটি ভাল পছন্দ।'
- ঐতিহাসিক পরিবর্তন -
লিবারেলরা যদি জয়ী হন, তবে এটি কানাডিয়ান রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম নাটকীয় পরিবর্তন হবে।
৬ জানুয়ারি, যখন ট্রুডো ঘোষণা করেন যে তিনি পদত্যাগ করবেন, কনজারভেটিভরা বেশিরভাগ জরিপে লিবারেলদের থেকে ২০ পয়েন্টের বেশি এগিয়ে ছিল, এবং পোইলিভ্র কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে ছিলেন।
কিন্তু কার্নির ট্রুডোকে স্থলাভিষিক্ত হওয়া এবং দেশব্যাপী ট্রাম্পের প্রতি অস্বস্তি এই দৌড়কে পাল্টে দিয়েছে।
সিবিসির জরিপকারী রোববার লিবারেলদের জাতীয় সমর্থন ৪২.৮ শতাংশ এবং কনজারভেটিভদের ৩৮.৮ শতাংশ বলে উল্লেখ করেছে।
দুটি ছোট দলের, বামপন্থী নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী ব্লক কুয়েবেকোয়া, পারফরম্যান্স খুব গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
অতীত নির্বাচনে, অন্টারিও এবং ব্রিটিশ কলম্বিয়াতে শক্তিশালী এনডিপি পারফরম্যান্স এবং কুইবেকে ব্লকের ভাল প্রদর্শন লিবারেলদের আসন সংখ্যা কমিয়েছিল, তবে জরিপগুলো নির্দেশ করছে যে উভয় ছোট দলই বাধার সম্মুখীন হতে পারে।
কানাডার আনুমানিক ৪১ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ২৯ মিলিয়ন ভোট দিতে সক্ষম। এর মধ্যে রেকর্ড ৭.৩ মিলিয়ন মানুষ আগাম ভোট দিয়েছে।
কানাডিয়ানরা ৩৪৩ সদস্যবিশিষ্ট পার্লামেন্ট নির্বাচন করবেন, যার মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য ১৭২টি আসন প্রয়োজন হবে। লিবারেলরা ২০১৫ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল, তবে ২০১৯ সাল থেকে তারা সংখ্যালঘু সরকার হিসেবে শাসন করছে।
সাধারণত কানাডায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই (স্থানীয় সময় রাতেই) আংশিক ফলাফল প্রকাশ পেতে শুরু করে, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভোট শেষের ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে বিজয়ী দলের চিত্র স্পষ্ট হয়ে যায়।
এবার যেহেতু ভোট শেষ হচ্ছে কানাডার স্থানীয় সময় সোমবার রাত ৮টায় (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকাল ৬টায়), তাই আংশিক ফলাফল বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকাল থেকেই আসতে থাকবে এবং চূড়ান্ত ফলাফল জানা যেতে পারে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে।
তবে যদি ফল খুব কাছাকাছি হয় বা কিছু আসনের গণনা বিলম্বিত হয়, তাহলে চূড়ান্ত ফলাফল পেতে আরও কয়েক ঘণ্টা বা পুরো দিনও লাগতে পারে।