শিরোনাম
ঢাকা, ২০ মে, ২০২৫(বাসস) : বর্তমান বিশ্বে স্তনক্যান্সার একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশ্বে প্রতি ৮ জন নারীর মধ্যে একজনের স্তনক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
এছাড়া সারা বিশ্বে প্রতি বছর দশ লাখেরও বেশি নারী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক রোগীই মারা যায়।
সঠিক কোন পরিসংখ্যানের ব্যবস্থা না থাকলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার ৭৪১ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। যার মধ্যে এক লাখ আট হাজার ১৩৭জন মৃত্যুবরণ করছে। এসব রোগীর ৮ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১২ হাজার ৭৬৪ জনই স্তন ক্যান্সারের রোগী। স্তনক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনদিনই বাড়ছে।
স্তন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা: অসীম কুমার দাস জানান, বেশিরভাগ স্তন ক্যান্সারই নারীদের ৫০ বছরের পরে হয়ে থাকে। পরিবারে মা, খালা, মেয়ে বা বোনের স্তনক্যান্সার হয়ে থাকলে তবে তারও ঝুঁকি বেশি। এছাড়া যেসব নারী বয়স ৫০ বছরের পর প্রথম গর্ভধারণ করে তাদের সাধারণত স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে। অল্প বয়সে মাসিক শুরু হওয়া, বেশি বয়সে মাসিক বন্ধ হওয়া বা মাসিক বন্ধ হওয়ার পর হরমোনথেরাপি নেয়া স্তন ক্যান্সারের সম্ভাব্য কারণ। আবার অধিক ওজন এবং চর্বি জাতীয় খাবার, এ্যালকোহল ইত্যাদি এবং কায়িক পরিশ্রম না করা স্তনক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
নারীর স্তনক্যান্সার নির্ণয়ের কিছু উপায়: স্তনে বা বগল তলায় শক্ত চাকা হওয়া যা সাধারণত ব্যথাহীন হয়, স্তনের আকার অথবা আকৃতির পরিবর্তন হওয়া, চামড়ার পরিবর্তন যেমন- চামড়া শক্ত হয়ে যাওয়া, চামড়ায় গর্ত হওয়া, চামড়া লাল হওয়া বা গরম হওয়া, স্তনের বোঁটায় কোন পরিবর্তন যেমন- বোঁটা ভেতর দিকে চলে যাওয়া, বোঁটা দিয়ে অস্বাভাবিক রক্ত বা পুঁজ জাতীয় পদার্থ বের হওয়া।
এ বিষয়ে থেরাপি বিশেষজ্ঞ ডা: সুলতানা বলেন,‘একবার এ রোগ হলে সারাজীবনই চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হয়। চিকিৎসা হিসেবে অপারেশন, কেমোথেরাপি, রোডিওথেরাপি উল্লেখযোগ্য।’
অপারেশন: ছোট অবস্থায় ধরা পড়লে সাধারণত শুরুতেই অপারেশন করে পুরো স্তন ফেলে দিতে হয়। তবে আংশিক স্তন ফেলেও চিকিৎসা সম্ভব, যদি ক্যান্সারের অন্যান্য ব্যবস্থা সহজতর হয়। চাকা যদি বড় হয়ে যায় অথবা বগল তলায়ও চাকার অস্তিত্ব ধরা পড়ে, তখন শুরুতেই অপারেশন করা হয় না। সে ক্ষেত্রে কেমোথেরাপির মাধ্যমে চাকাকে ছোট করে সফল অপারেশনের জন্য যোগ্য করে তোলা হয়।
কেমোথেরাপি: রোগের শুরুতেও ক্যান্সার শুধু স্তনেই সীমাবদ্ধ থাকে না বলে ধারণা করা হয়। সে জন্য প্রায় প্রতিটি স্তনক্যান্সারের রোগীর কেমোথেরাপি বা চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। অতিমাত্রায় হরমোন সংবেদনশীল টিউমার হলে অধিক কেমোথেরাপির পরিবর্তে হরমোথেরাপি দেয়া যেতে পারে। যাদের রোগ স্তন বা বগল ছাড়াও অন্যান্য অঙ্গ যেমন- ফুসফুস, লিভার ইত্যাদিতে ছড়িয়ে পড়েছে তাদের কেমোথেরাপি বা অন্যান্য চিকিৎসা চলবে।
রেডিওথেরাপি: উচ্চমাত্রায় এক্স-রে দ্বারা ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করাকে রেডিওথেরাপি বলে। স্তনক্যান্সারে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীরই রেডিওথেরাপির প্রয়োজন হয়। যাদের রোগ অন্য কোথাও ছড়ায়নি তাদেরকে আরোগ্য করার জন্য রেডিওথেরাপি দেয়া হয়।
বাংলাদেশে স্তনক্যান্সারের পূর্ণ চিকিৎসা সম্ভব কি না জানতে চাইলে ডা: সুলতানা বলেন, ‘রোগ নির্ণয়, অপারেশন, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি অথবা হরমোনথেরাপি এর সবগুলো চিকিৎসাই বাংলাদেশে সম্ভব। দেশে প্রতি বছর প্রশিক্ষিত সার্জন এবং ক্লিনিক্যাল অনকোলজিস্ট তৈরি হচ্ছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় দেশে রেডিওথেরাপি মেশিনের স্বল্পতা রয়েছে। কিন্তু দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো এখন দেশেই স্বল্পমূল্যে ক্যান্সারের ওষুধ তৈরি করছে।’