শিরোনাম
ঢাকা, ১৮ মে, ২০২৫, (বাসস) : বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্র লিনাক মেশিন (লিনিয়ার এক্সিলেটর) দিয়ে রেডিওথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়েছে।
আজ রোববার বিএমইউ এর এফ ব্লকে অনকোলজি বিভাগের উদ্যোগে এ বিষয়ে (লিনিয়ার এক্সিলেটর পুনরায় চালুকরণ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম এবং অনকোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. নাজির উদ্দিন মোল্লাহ। অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জামাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সারোয়ার আলম, সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাদিয়া শারমীন, অতিরিক্ত পরিচালক (অডিট) খন্দকার শফিকুল হাসান (রতন)সহ বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্ট, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনস্বার্থে চিকিৎসা শিক্ষা, সেবা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করার তাগিদ দেন ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো: শাহিনুল ইসলাম। রোগীদের প্রতি বৈষম্যপূর্ণ আচরণ বন্ধ ও উচ্চবিত্তের মানসিকতা ত্যাগ করার জন্য সেবাদানকারী সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
একই সঙ্গে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় ব্যয়ের বিষয়ে রোগীকে অবহিতকরণ, রোগীর মতামত প্রদান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ, চিকিৎসার সম্ভাব্য অগ্রগতির বিষয়ে রোগী বা তার স্বজনকে অবহিতকরণ ইত্যাদি বিষয়েও খেয়াল রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন ভিসি।
ক্যান্সার বিভাগ থেকে গবেষণা কার্যক্রমে অধিকতর মনোযোগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, চিকিৎসক ও রেসিডেন্টদের নির্দেশ দেন অধ্যাপক ডা. শাহিনুল ইসলাম।
ভিসি তার বক্তব্যে বিদ্যমান গাইডলাইন অনুসরণ করে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার পাশাপাশি দেশের মানুষের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট ও বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত এমন নিজস্ব গাইডলাইন, প্রোটকল তৈরির পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানান।
একই সঙ্গে চিকিৎসাসেবা ও গবেষণায় সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগসমূহকে সংযুক্ত করা ও শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সকল সাপোর্টিং স্টাফদের সমন্বয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসাসেবা ও গবেষণাকে জোরদার করা এবং বিশ্বমানে উন্নীত করার তাগিদ দেন তিনি।
অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ক্যান্সারের চিকিৎসায় অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। রোগীরা অনেক আশা নিয়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। বিদ্যমান সুযোগ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে রোগীদের আশা পূরণে সচেষ্ট হতে হবে। রোগীদের সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করাই আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।
অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বলেন, ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য রেডিওথেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পুনরায় লিনিয়ার এক্সিলেটর মেশিন চালু করা হলো। আয় করা বিএমইউর উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হলো গবেষণা কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করা, রোগীরা যাতে সহজে ও স্বল্প ব্যয়ে চিকিৎসাসেবা নিয়ে আরোগ্য লাভ করে সন্তুষ্টি নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারে তা নিশ্চিত করা। সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। দেশেই যাতে রোগীরা সেবা নিয়ে সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন, সে দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন কারো অনিয়মের দায় নেবে না। রোগীদের প্রতি সংশ্লিষ্ট সকলকে আরও সদয় হতে হবে। রোগীদেরকে যেন অযথা আর্থিকভাবে চাপে ফেলা না হয়। তারা যেন প্রতারিত না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন তার বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগকে ইনস্টিটিউটে উন্নীত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
অধ্যাপক ডা. মো নাজির উদ্দিন মোল্লাহ তার বক্তব্যে বিএমইউর অনকোলজি বিভাগে আরো একটি লিনিয়ার এক্সিলেটর মেশিন চালু, ব্র্যাকিথেরাপি মেশিন চালু, দুই শিফটে রেডিওথেরাপি কার্যক্রম চালু, অনকোলজি বিভাগে কর্মরত সংশ্লিষ্টদের জন্য ঝুঁকিভাতা চালুর ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহায়তা কামনা করেন।
সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জামাল উদ্দিন জানান, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনকোলজি বিভাগে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি রোগীকে কেমোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে রেডিওথেরাপির মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ২০২৩ সালে ব্র্যাকিথেরাপির মাধ্যমে ৭০ জন রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।