শিরোনাম

ঢাকা, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ১৬ বছর পর ফের দর্শকদের মুগ্ধ করতে আসছে ‘অ্যাভাটার’ সিরিজের তৃতীয় ছবি। এই মাসেই এটি বড় পর্দায় মুক্তি পাচ্ছে । আশা করা হচ্ছে এটিও যথারীতি সিরিজের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ধরে রাখবে। পরিবেশ ও প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে ভিজ্যুয়াল চমক এবারও থাকছে।
প্যারিস থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে একযোগে মুক্তি পাবে জেমস ক্যামেরনের পরিচালিত ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’ সিনেমাটি।
প্রথম ‘অ্যাভাটার’ মুক্তির ১৬ বছর পর সিরিজের নতুন সিনেমাটি দর্শকদের মুগ্ধতা ছড়াতে আসছে। ২০০৯ সালে সিরিজের প্রথম সিনেমা ‘অ্যাভাটার’ বিশ্বব্যাপী ২.৯ বিলিয়ন ডলার আয় করে।
২০২২ সালে মুক্তি পায় সিরিজের দ্বিতীয় ছবি ‘দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’। দ্য হলিউড রিপোর্টার-এর তথ্যমতে, এটি করোনা পরবর্তী সময়েও প্রায় ২.৩ বিলিয়ন ডলার আয় করে।
চলতি সপ্তাহে নতুন ছবির প্রিমিয়ার শো হয়েছে হলিউড ও প্যারিসে।
-পরিবার ও অভিবাসন-
দর্শকরা দেখতে পাবেন নায়ক জ্যাক (স্যাম ওয়ার্থিংটন) এখন ‘টোরুক ম্যাকটো’, প্যান্ডোরার কিংবদন্তি যোদ্ধা। তার স্ত্রী নেটিরি (জো সালদানা)। তারা তাদের বড় ছেলে নেটেয়ামের মৃত্যুর শোক সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তারা তাদের তিন সন্তান নিয়ে নতুন করে জীবন গড়ার চেষ্টা করছেন। যাদের মধ্যে রয়েছে কিরি, একজন দত্তক নেওয়া নাভি কিশোরী, যার চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিগার্নি উইভার এবং আরেকজন মানব স্পাইডার (জ্যাক চ্যাম্পিয়ন), যাকে নেটিরি ছাড়া সবাই পরিবারের অংশ হিসেবে গণ্য করে।
ক্যামেরন শুক্রবার প্যারিসে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দর্শকরা দেখবেন, সন্তানরা বড় হয়ে নিজেদের পরিচয় খুঁজছে। কারণ তাদের মা পুরোপুরি নাভি প্রজাতির। আর বাবা অন্য গ্রহ থেকে আসা। এই সংকর জীবন তাদের হাসি-আনন্দের সঙ্গে এক ঝাঁক চ্যালেঞ্জও নিয়ে আসে।
৭১ বছর বয়সী কানাডিয়ান পরিচালক আরও বলেন, আমরা মূলত শরণার্থী বা বাস্তুচ্যুত অভিবাসীদের পারিবারিক অবস্থাকে দেখানোর চেষ্টা করেছি। মানুষ এটি দেখে সহজেই বাস্তবতার সংযোগ স্থাপন করতে পারবে।
-নতুন প্রতিপক্ষ-
ভ্রমণের পথে নায়করা মুখোমুখি হন মাংকওয়ান বা অ্যাশ পিপল-এর সঙ্গে। এটি একটি নাভি সম্প্রদায়, যার এলাকা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন তারা জীবনধারণের জন্য লুটপাট করে।
মাংকওয়ানদের নেতৃত্ব দেন ভ্যারাং। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিশ্বখ্যাত কৌতুক অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের নাতনি উনা চ্যাপলিন।
তিনি নাভির অন্ধকার দিক দেখান, যা আগে শুধুই কল্যাণময় ও প্রকৃতির সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ হিসেবে চিত্রিত হয়েছিল। এর বিপরীতে মানুষ লুটপাটে আসক্ত এবং প্রকৃতির সম্পদ শোষণ করতে চাইছে।
তিনি নাভি সম্প্রদায়ের অন্ধকার দিক দেখান। আগে তারা শুধুই শান্তিপ্রিয় ও প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করত। এবার তাদের আরও জটিল ও ভিন্ন দিক দেখা যাবে।
মানুষের লুটপাটের লোভ আবারও প্রকৃতির সঙ্গে সংঘর্ষের গল্পে নতুন মোড় নিয়ে আসবে।
-পরিবেশ ও ভিজ্যুয়াল চমক-
প্যান্ডোরার বাসিন্দাদের ফের লড়তে হবে ‘স্কাই পিপল’ বা রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মানুষদের বিরুদ্ধে। তারা তুলকুন নামের সামুদ্রিক প্রাণী শিকার করতে চাইছে। লক্ষ্য তাদের মস্তিষ্ক থেকে ‘অ্যামরিটা’ সংগ্রহ।
তুলকুন হল প্যান্ডোরা গ্রহের বিশাল ও বুদ্ধিমান সামুদ্রিক প্রাণী, যাদের মস্তিষ্ক থেকে ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণে মূল্যবান পদার্থ পাওয়া যায়।
মূল ‘অ্যাভাটার’ গল্প ১৯৯৫ সালে ক্যামেরন নিজেই লিখেছিলেন। পরিচালকের মতে, সেটিতে পরিবেশ বিষয়ক বার্তা অনেক বেশি স্পষ্ট ছিল।
ক্যামেরন আরও বলেন, প্রকৃতি সংরক্ষণ যে মানুষের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা মূল গল্পটি থেকে বোঝা যায়।
সিগারনি উইভার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ক্যামেরন কোনো রহস্য রাখেননি। তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে একটি কর্পোরেট কর্পোরেশন তুলকুন শিকার করছে। তিনি এই দৃশ্যপট পৃথিবীর সঙ্গে তুলনা করে তৈরি করেছেন। সমুদ্র ক্রমেই বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। অথচ এই সমুদ্র ছাড়া আমরা বাঁচতেও পারব না।
-কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নয়, অভিনয়ই মূল-
দ্বিতীয় ও তৃতীয় ‘অ্যাভাটার’ ছবির শুটিং হয়েছে ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ১৮ মাস ধরে। তখন জেনারেটিভ এআই-এর উত্থান হয়নি।
এই দশকের শেষের দিকে আরও দুই ছবি মুক্তির জন্য তৈরি হচ্ছে।
ক্যামেরন মার্কিন ওয়েবসাইট কমিকবুক ডটকমকে বলেন, আমি জেনারেটিভ এআই-এর বিরোধী নই। শুধু বলতে চাই, ‘অ্যাভাটার’ ছবিতে আমরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করি না। অভিনেতারা নিজেরাই অভিনয় করেছেন।
এতে অভিনেতাদের নড়াচড়া ধরে নাভির চরিত্রের ওপর স্থানান্তর করা হয়।
ক্যামেরন তার ‘পারফরম্যান্স ক্যাপচার’ কৌশল ব্যবহার করেছেন। এতে অভিনেতাদের নড়াচড়া রেকর্ড করে নাভির চরিত্রে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
-প্রতিক্রিয়া-
মুক্তির আগে সমালোচকরা সীমিত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তবে যেগুলো প্রকাশিত হয়েছে, তা মোটামুটি ইতিবাচক।
কিছু মার্কিন সমালোচক সামাজিক মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত আকারে মতামত প্রকাশ করেন। বেশিরভাগের মত, ক্যামেরন আরও একবার ভিজ্যুয়াল চমক দেখিয়েছেন। তবে, মূল সমালোচনা হয়েছে চিত্রনাট্য ও আগের দুই ছবির থিমের পুনরাবৃত্তি ঘিরে।
এর জবাবে ক্যামেরন হাসতে হাসতে বলেন, আমার জীবনে মাত্র পাঁচটা ভালো আইডিয়া আছে। সেগুলোই প্রতিবার নতুন মোড়কে উপস্থাপন করার চেষ্টা করি।