শিরোনাম
ঢাকা ১৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : বিশ্ব চলচ্চিত্রে সবচেয়ে আয় করা অভিনেত্রীদের একজন স্কারলেট জোহানসন এ বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে দুইবার লালগালিচায় হাঁটবেন।
প্রথমবার তিনি উপস্থিত থাকবেন তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘এলেনর দ্য গ্রেট’-এর প্রদর্শনীতে, আর দ্বিতীয়বার ওয়েস অ্যান্ডারসনের নতুন ছবি ‘দ্য ফিনিশিয়ান স্কিম’-এর প্রিমিয়ারে, যা সোমবার অনুষ্ঠিত হবে।
প্যারিস থেকে এএফপি'র পাঠানো প্রতিবোন অনুযায়ী জোহানসনের জীবনের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো—
১. ছোট্ট স্কারলেটের তারকা হয়ে ওঠা
১৯৮৪ সালে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে একটি ইহুদি পরিবারে জন্ম স্কারলেট জোহানসনের। তারকা হওয়ার আভাস মিলেছিল শৈশবেই। নাম রাখা হয়েছিল ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’ চলচ্চিত্রের নায়িকা স্কারলেট ও’হারার নামে। খুব অল্প বয়সেই তিনি থিয়েটার ও ট্যাপ নৃত্যে আকৃষ্ট হন।
মাত্র ১০ বছর বয়সে বড় পর্দায় তার অভিষেক ঘটে, এবং কিছুদিন পর রবার্ট রেডফোর্ডের 'দ্য হর্স হুইস্পারার'-এ প্রথম বড় চরিত্রে অভিনয় করেন।
আর কুড়ি-র নিচেই উঠে আসেন আন্তর্জাতিক খ্যাতির শীর্ষে, সোফিয়া কপোলার 'লস্ট ইন ট্রান্সলেশন'ুএর মাধ্যমে। টোকিওর এক হোটেলে একাকিত্বের পটভূমিতে নির্মিত এ চলচ্চিত্রে তিনি বিল মারের সঙ্গে অনবদ্য অভিনয় করে দর্শক-সমালোচকদের হৃদয় জয় করেন।
২. হলিউডের কোটি ডলারের নারী
এরপরের দুই দশকে জোহানসন অভিনয় করেছেন একের পর এক ব্লকবাস্টারে। ওয়েস অ্যান্ডারসন, কোয়েন ব্রাদার্স, জোনাথন গ্লেজার, ক্রিস্টোফার নোলান—সবার ছবিতেই জায়গা পেয়েছেন তিনি।
তাকে আকাশচুম্বী খ্যাতিতে পৌঁছে দেয় মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের ‘ব্ল্যাক উইডো’ চরিত্রটি। ২০১০ সাল থেকে আটটি মার্ভেল ছবিতে এই চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
এই সময় তিনি ফোর্বস-এর সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেত্রীর তালিকায় উঠে আসেন। তার অভিনীত ‘অ্যাভেঞ্জার্স: ইনফিনিটি ওয়ার’ ইতিহাসের সর্বোচ্চ আয়ের চলচ্চিত্রগুলোর একটি।
৩. যেসব চরিত্র পাননি
তারকাখ্যাতির মধ্যেও জোহানসন কিছু বিখ্যাত চরিত্র হাতছাড়া করেছেন। এক সময় ‘মিশন ইম্পসিবল’ ছবির একটি কিস্তিতে তাঁকে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল, তবে তা বাতিল হয় সময়সূচি না মেলার কারণে।
‘লা মিজারেবল’-এ প্রধান চরিত্র পাননি; পেয়েছিলেন অ্যান হ্যাথাওয়ে, যিনি পরে সেই ভূমিকায় অস্কারও জেতেন। একইভাবে ‘মিলেনিয়াম’ সিরিজে লিসবেথ সালান্ডারের চরিত্রও তার হাতে আসেনি।
৪. স্বরযন্ত্র
জোহানসনের কণ্ঠস্বরে এক ধরনের আলাদা গভীরতা রয়েছে, যা তিনি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেছেন। স্পাইক জোনজ পরিচালিত ‘হার’ (২০১৩) ছবিতে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চরিত্রে—যার প্রেমে পড়ে যায় জোয়াকিন ফিনিক্সের চরিত্রটি।
তবে এই কণ্ঠস্বর ঘিরে বিতর্কও হয়েছে। ২০২৪ সালে তিনি অভিযোগ করেন, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই তার কণ্ঠস্বর ব্যবহার করেছে তাদের চ্যাটজিপিটি প্রযুক্তিতে। পরে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ভয়েস পরিবর্তন করে।
জোহানসনের কণ্ঠ শোনা গেছে ‘দ্য জাঙ্গল বুক’ এবং ‘সিং’ সিরিজের মতো জনপ্রিয় অ্যানিমেটেড ছবিতেও।
এছাড়া তিনি ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দুইটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন—‘অ্যানিহোয়ার আই লে মাই হেড’ এবং ‘ব্রেক আপ’। যদিও সেগুলো তেমন বাণিজ্যিক সাফল্য পায়নি, তবুও সংগীত সমালোচকরা তার কণ্ঠের ‘বিস্তৃত টেক্সচার’ এবং বৈচিত্র্েযর প্রশংসা করেছেন।
৫. সাহসী অবস্থান
জোহানসন বরাবরই তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে বলতে দ্বিধা করেননি। তিনি যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, নারী-পুরুষের সমান পারিশ্রমিকের পক্ষে আন্দোলন করেছেন, এবং স্ট্রিমিংয়ের কারণে প্রেক্ষাগৃহ-নির্ভর চলচ্চিত্র শিল্পের ক্ষতির বিষয়টিও তুলে ধরেছেন।
তবে সবচেয়ে বিতর্কিত হয়েছে তাঁর ওডি অ্যালেনকে ঘিরে মন্তব্য। যখন পুরো হলিউড অ্যালেনকে দূরে ঠেলে দিচ্ছিল, তখন জোহানসন বলেন:
"আমি ওডিকে ভালোবাসি। আমি তাঁকে বিশ্বাস করি, এবং আমি যে কোনো সময় তাঁর সঙ্গে কাজ করব।" — দ্য হলিউড রিপোর্টারকে ২০১৯ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব বলেন।