বাসস
  ২৫ নভেম্বর ২০২২, ১৭:০৯

ডেনমার্ককে হারিয়ে নক আউট পর্ব নিশ্চিত করতে চায় ফ্রান্স

দোহা, ২৫ নভেম্বর ২০২২ (বাসস) : আগামীকাল শনিবার দোহার ৯৭৪ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময়  রাত ১০ টায়  গ্রুপ-ডি’র নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে ডেনমার্ক ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। লেস ব্লুজরা প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে টুর্নামেন্টের উড়ন্ত সূচনা করেছে। এদিকে কাসপার হুলমান্ডের ডেনমার্ক দল তিউনিশিয়ান সাথে গোলশুন্য ড্র করে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছেড়েছে।
প্রথম ম্যাচে দুই গোল করে ফ্রান্সের হয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় সাবেক তারকা থিয়েরি অঁরিকে স্পর্শ করেছেন অলিভার গিরুদ। আর্সেনালের দুই সাবেক স্ট্রাইকার এখন দারুন এই রেকর্ডের ভাগীদার হলেও অঁরিকে ছাড়িয়ে যাবার সুযোগ রয়েছে গিরুদের সামনে।
পুরো গ্রীষ্ম জুড়ে দিদিয়ের দেশ্যমের দল উয়েফা নেশন্স লিগে নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ^কাপের শুরুটাও হতাশার ছিল। ক্রেইগ গুডউইনের গোলে ৯ মিনিটেই এগিয়ে গিয়েছিল সকারুজরা। কিন্তু গিরুদের ৫০ ও ৫১তম আন্তর্জাতিক গোলের সাথে আদ্রিয়ের রাবোয়িত ও কিলিয়ান এমবাপ্পের গোল শেষ পর্যন্ত ফ্রান্স বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে।
ইনজুরির কারনে পুরো টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়া ব্যালন ডি’অর বিজয়ী করিম বেনজেমার অনুপস্থিতিতে এমবাপ্পে ও আঁতোয়ান গ্রীজম্যানের সাথে আক্রমনভাগ সামলানোর দায়িত্ব পড়ে গিরুদের উপর। কোচের আস্থার পূর্ন প্রতিদান দিয়েছেন গিরুদ। এখন তার সামনে সুযোগ অঁরিকে ছাড়িয়ে ফ্রান্সের হয়ে রেকর্ড ৫২তম গোলের মালিক হবার। ডেনমার্ককে হারাতে পারলে ফ্রান্সের শেষ ১৬ নিশ্চিত হয়ে যাবে। এক ম্যাচ শেষ ডি-গ্রুপের শীর্ষে অবস্থান করছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। নিজেদের ম্যাচে জিতলে এবং অপর ম্যাচে যদি তিউনিশিয়া-অস্ট্রেলিয়া ড্র করে তবে গ্রুপের শীর্ষস্থানও নিশ্চিত হয়ে যাবে ফ্রান্সের।
ফরাসি বিশ^কাপের ইতিহাসে টানা ছয়টি ম্যাচ জয়ের নতুন রেকর্ড গড়েছে ফ্রান্স। এর আগে এই কৃতিত্ব দেখিয়েছিল স্বর্নালী প্রজন্মের  স্পেন দলটি ২০১০ সালে ।
ইউরো ২০২০’এ হৃদরোগে আক্রান্ত হবার পর তারকা উইঙ্গার ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন ডেনমার্কের হয়ে তিউনিশিয়ার বিপক্ষে প্রথম বড় কোন আসরে খেলতে নেমেছিলেন। মধ্যমাঠে তিনি যথারীতি ড্যানিশদের হয়ে নিজের দায়িত্বটুকু পালন করেছেন। আফ্রিকান দল তিউনিশিয়ার সাথে গোলশুন্য ড্র করলেও ডেনমার্কের সার্বিক পারফরমেন্স নিয়ে সন্তুষ্ট হবার মত কিছু ছিলনা। বরং তিউনিশিয়া যোগ্য দল হিসেবে তিন পয়েন্ট ছিনিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। শেষ মুহূর্তে অবশ্য ডিফেন্ডার ইয়ানি মেরিয়াহর একটি সম্ভাব্য হ্যান্ডবল ভিএআর প্রযুক্তিও ধরতে না পারায় সৌভাগ্যক্রমে পেনাল্টি থেকে রক্ষা পেয়েছে তিউনিশিয়া।
ড্যানিশ কোচ স্বীকার করেছেন গ্রপ-ডি’তে তার দল এখন কঠিন এক সমীকরণের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তে তৃতীয় স্থানে থাকা ডেনমার্ককে এগিয়ে যেতে হলে ফ্রান্সের বিপক্ষে ইতিবাচক কিছু করে দেখাতে হবে। যদিও তাদের সামনে এখনো গ্রুপের দ্বিতীয় স্থান পাওয়া খুব একটা কঠিন কাজ নয়।
দুই দলের লড়াইয়ের আগে স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দলটি কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছে। বিশ^কাপে শেষ চারটি ম্যাচ ড্র করেছে ডেনমার্ক। শেষ চারটি ম্যাচে কোন গোল হজম না করা ডেনমার্ক সেই আত্মবিশ^াস নিয়ে বিশ^ চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে মাঠে নামবে। বিশ^কাপে আসার আগে নেশন্স লিগের শেষ ম্যাচে ফ্রান্সকে ২-০ গোলে হারিয়েছির ডেনমার্ক। জুনেও ২-১ গোলে জয়ী হয়েছিল ড্যানিশরা। ২০০২ বিশ^কাপে গ্রুপ পর্বে লেস ব্লুজদের হারিয়েছিল ২-০ গোলে, ঐ সময় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ড্যানিশদের মোকাবেলা করেছিল ফ্রান্স।
তার উপর ফ্রান্স দল ইনজুরির কারনে কিছুটা হলেও দু:শ্চিন্তায় রয়েছে। প্রথম ম্যাচে গুরুতর লিগামেন্ট ইনজুড়িতে পড়ে দল থেকে ছিটকে গেছেন লেফট-ব্যাক লুকাস হার্নান্দেজ। প্রায় মাসখানেক মাঠ বাইরে থাকতে হবে বায়ার্ন মিউনিখের এই ডিফন্ডারকে। তার অনুপস্থিতে ছোট ভাই থিও হার্নান্দেজের উপর রক্ষনভাগ সামলানোর অনেকটাই দায়িত্ব পড়বে। তার সাথে ইনজুরি কাটিয়ে ফিটনেস প্রমান করা রাফয়েল ভারানে থাকতে পারেন। একইসাথে ডায়ট উপামেকানো ও ইব্রাহিমা কোনাতে তো রয়েছেনই। অবশ্য ভারানাকে জয়গা করে দিতে এই দুজনের যেকোন একজনকে বদলী বেঞ্চে চলে যেতে হতে পারে।
প্রায় একই গল্প রয়েছে ড্যানিশ শিবিরেও। তিউনিশিয়ার বিপক্ষে প্রথমার্ধে হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছেন সেভিয়া মিডফিল্ডার থমাস ডিলানি। তাকেও মাস খানেক পুনর্বাসনে থাকতে হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ডিলানির ইনজুরিতে কোচ  হুলমান্ড নতুন করে দু:শ্চিন্তায় পড়েছেন। কারন তার পরিকল্পনা ছিল মূল একাদশ থেকে এরিকসেনকে কিছুটা বিশ্রাম দিতে।
ডেনমার্কের ম্যাচের আগে দলের তরুণ তুর্কি কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে আলাদাভাবে কথা বলেছেন ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশ্যম। তার মতে বিশ^কাপই হলো এমবাপ্পের জন্য যথার্থ টুর্নামেন্ট। ২০১৮ সালে ফ্রান্সের ফাইনালের পথে চার গোল করেছিলেন বিশ^কাপে অভিষিক্ত এমবাপ্পে। দেশ্যম বলেন, ‘এই মুহূর্তে অবশ্যই আমার চোখে এমবাপ্পে বিশে^র অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। তার মধ্যে দারুন আত্মবিশ^াস কাজ করছে, যা তার খেলার মধ্যেই প্রমানিত হচ্ছে। আমি জানি এবারের বিশ^কাপের জন্য সে পুরোপুরি প্রস্তুত। এটা তার টুর্নামেন্ট, সে জানে কিভাবে পার্থক্য গড়ে দিতে হয়।’

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়