বাসস
  ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ২০:২৬

সিরামিক কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি নিয়ে ডিএসই ও বিসিএমইএ’র বৈঠক 

প্রতীকী ছবি

ঢাকা, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): বাজার উন্নয়নের ধারাবাহিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আজ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছে। 

বিসিএমইএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মামুনুর রশিদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সিরামিক খাতের কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির কাঠামো, প্রক্রিয়া ও সম্ভাব্য সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বৈঠকের শুরুতে ডিএসই’র প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান, এফসিএস প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বর্তমানে একটি রূপান্তরের যাত্রায় রয়েছে। যেখানে প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা নয় বরং একটি আধুনিক, সেবা ও কাস্টমার-সেন্ট্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে।

তিনি জানান, প্রাইমারি মার্কেট তথা আইপিও প্রক্রিয়ায় ডিএসই বৃহত্তর ডিজিটাল রূপান্তর আনছে। অতীতে যেখানে একটি আইপিও সম্পন্ন হতে দুই থেকে চার বছর সময় লাগত, এখন সেটি ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। নতুন আইপিও রুলস অনুমোদনের পর পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, ডিএসই একটি সেন্ট্রাল ডিজিটাল সাবমিশন সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে, যার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের পিএসআই, শেয়ারহোল্ডিং ও ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তনসহ সকল তথ্য এক জায়গায় জমা দিতে পারবে। দীর্ঘদিন নতুন কোম্পানি লিস্টিংয়ের ঘাটতির কারণে বাজারের সরবরাহপক্ষ দুর্বল হয়ে পড়লেও, ডিএসই এখন গুণগতমানসম্পন্ন নতুন কোম্পানি আনার উদ্যোগ নিয়েছে।

মোহাম্মদ আসাদুর রহমান বলেন, ডিএসই এখন ওয়ান-টু-ওয়ান সার্ভিস প্রদানের জন্য প্রস্তুত। কোনো প্রতিষ্ঠান মেইন বোর্ড বা এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হলে তাদের জন্য ডেডিকেটেড টিমের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হবে। টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম ভিত্তি হলো একটি শক্তিশালী ক্যাপিটাল মার্কেট, এবং শিল্পখাতকে এতে সম্পৃক্ত করাই ডিএসই’র রূপান্তর অভিযানের মূল লক্ষ্য।

বৈঠকে ডিএসই’র উপ-মহাব্যবস্থাপক সাঈদ মাহমুদ জুবায়ের একটি প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের কাঠামো, তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া, বিভিন্ন বিনিয়োগ সুযোগ ও চলমান সংস্কার উদ্যোগ তুলে ধরেন।

বিসিএমইএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মামুনুর রশিদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিগত পাঁচ দশকে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও ইকুইটি ফাইন্যান্সিং এখনো সীমিত। বর্তমানে শিল্প বিনিয়োগের প্রায় ৯৮ শতাংশই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হয়, যা টেকসই পুঁজিবাজার গঠনে বড় বাধা।

তিনি বলেন, আইপিও প্রক্রিয়া সহজীকরণ, লিস্টিংয়ের নিয়ম ও কাগজপত্রের চেকলিস্ট সংক্ষিপ্ত করা, কর ও ডিভিডেন্ড নীতিমালা আরও বিনিয়োগবান্ধব করা এবং কমপ্লায়েন্স কস্ট হ্রাসে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

মো. মামুনুর রশিদ ডিএসই’র ডিজিটাল উদ্যোগ- যেমন অনলাইন এজিএম, হাইব্রিড মিটিং এবং ইলেকট্রনিক ফাইলিং ব্যবস্থাকে প্রশংসনীয় উল্লেখ করে বলেন, এসব পদক্ষেপ কোম্পানিগুলোর প্রশাসনিক জটিলতা কমিয়েছে এবং ব্যবসায়িক আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।

বক্তারা কর্পোরেট গভর্নেন্স চর্চা জোরদার, ইস্যু ম্যানেজারদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বিদেশে রোডশো আয়োজনের আহ্বান জানান। তাদের মতে, এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে পুঁজিবাজারে মানসম্মত কোম্পানির লিস্টিং বাড়বে, বাজারে আস্থা পুনস্থাপিত হবে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও ত্বরান্বিত হবে। 

বৈঠকে ডিএসই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন সিরামিক কোম্পানির সিএফও ও কোম্পানি সেক্রেটারিরা উপস্থিত ছিলেন।