শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): দেশের শীর্ষ উদ্যোক্তা ও বাণিজ্য সংগঠনগুলো এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের জন্য আরও পাঁচ থেকে ছয় বছর সময় বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে।
তাদের মতে, এই সময় বাড়ানো গেলে রপ্তানি বহুমুখীকরণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং গুণগত মানসম্পন্ন প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ সম্ভব হবে।
আইসিসি বাংলাদেশ সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে দেশের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। তবে আমরা ৫ থেকে ৬ বছরের সময় বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছি। এতে সরকার ও বেসরকারি খাত প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পাবে এবং কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।’
তিনি বলেন, দেশের রপ্তানি খাতকে যদি বহুমুখী করা না যায় এবং বিদ্যমান সম্ভাবনা আরও বাড়ানো না যায়, তাহলে দেশ খুব বেশি এগিয়ে যেতে পারবে না।
রাজধানীর একটি হোটেলে আজ আইসিসি বাংলাদেশ এবং প্রধান জাতীয় বাণিজ্য সংস্থাগুলো আয়োজিত ‘এলডিসি উত্তরণ: সামনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সফল ও টেকসই উত্তরণের জন্য অন্তত পাঁচ থেকে ছয় বছর সময় প্রয়োজন। বাড়তি সময়ের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, এ সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আঘাত মোকাবিলায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাজ্য, আসিয়ান জোট এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি নিশ্চিত সম্ভব হবে।
এছাড়াও এই সময়ের মধ্যে যাতে ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি), চামড়া, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং হালকা প্রকৌশল খাতে রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনা। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা, অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আধুনিক উৎপাদন প্রযুক্তিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আসে। গুণগত মানসম্পন্ন প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা যেখানে বিনিয়োগকারীরা শুধু মূলধন নয়, টেকসই প্রযুক্তি ও উন্নয়ন কৌশল নিয়ে আসবে। সুশাসন জোরদার এবং জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলার সক্ষমতা তৈরি করা, যাতে অস্থির বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে একটি যৌথ সুপারিশ পত্র সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে।
মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, শুধু পোশাক রপ্তানির ওপর নির্ভর না করে নতুন খাত গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। সরকারকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তবে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সরকারের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। অপরিণত উত্তরণ হলে দেশ সমস্যায় পড়তে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
তিনি সফল উত্তরণের জন্য করণীয় হিসেবে স্মার্ট বাণিজ্য কূটনীতির মাধ্যমে বাজারে প্রবেশাধিকার রক্ষা, প্রযুক্তি, দক্ষতা ও অবকাঠামোর মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি, জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ, ‘ব্র্যান্ড বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা, আর্থিক খাত সংস্কার, ব্যবসা করার সহজ পরিবেশ সৃষ্টি, নির্ভরযোগ্য জ্বালানি ও আধুনিক লজিস্টিকস, মুদ্রা স্থিতিশীলতা, ঋণ ব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা গেলে বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জকে সুযোগে রূপান্তরিত করতে পারবে এবং ২০৩১ সালের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। তবে মনে রাখতে হবে, উত্তরণ নিশ্চিত কিন্তু সফলতা নির্ভর করছে আমরা কতটা দ্রুত এবং সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারছি তার ওপর।’
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, এই উত্তরণ প্রক্রিয়ায় পোশাক খাত সবচেয়ে বড় উপকারভোগী এবং সবচেয়ে বড় অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও সঠিক সময়ে উত্তরণ না হলে এ খাত সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্তও হতে পারে।
আইসিসি বাংলাদেশের সহ-সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, সরবরাহ চেইন বিঘ্ন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জলবায়ু ঝুঁকি বিবেচনায় এলডিসি থেকে উত্তরণের সময় বৃদ্ধি করা যৌক্তিক।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই এলডিসি থেকে উত্তরণে জাতিসংঘের নির্ধারিত তিনটি শর্ত যথা: মাথাপিছু আয়ের মানদণ্ড (জিএনআই), মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচক পরপর দুইবার পূরণ করেছে। এর ফলে ২০২৬ সালের নভেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে এলডিসি থেকে উত্তরণ নির্ধারিত হয়েছে।
এই অর্জন জাতীয় গৌরবের বিষয়, যা বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের দৃঢ়তা, অগ্রগতি ও শিল্পায়নের সাফল্য প্রমাণ করে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, আইসিসি সহসভাপতি এ. কে. আজাদ, ডিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি রাজীব এইচ চৌধুরী, এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি. রহমান, এফআইসিসিআই বোর্ড সদস্য রুবাবা দৌলা, এবং ব্যবসায়ী নেতা আবদুল হাই সরকার, সাঈদ আহমেদ, মোহাম্মদ হাতেম, মোহাম্মদ নজমুল হাসান, আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ), আবদুল মুক্তাদির, মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী, এম. ই. চৌধুরী শামীম প্রমুখ।