শিরোনাম
ঢাকা, ৩১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার হাইকমিশনার প্রফেসর অনীল সুকলাল আজ বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন। দুদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্ভাবনাময় হলেও এখনও তা পূর্ণতা পায়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনৈতিক প্রতিবেদক সমিতি, বাংলাদেশ (ডিক্যাব)-এর সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় উভয় পক্ষেই এই সম্পর্ক দৃশ্যমান নয়। আমাদের তা আরও দৃশ্যমান করতে হবে। আমরা জানি না একে অপরের বাজার কী কী অফার করতে পারে। না জানার কারণে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
প্রফেসর সুকলাল একই সঙ্গে ভারত ও নেপালে দক্ষিণ আফ্রিকার হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেনঅ তিনি বলেন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও ওষুধ শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে দুই দেশ সম্পর্ক আরও গভীর করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বেসরকারি খাতই চালিত করবে। সরকার হিসেবে আমরা সহায়ক পরিবেশ তৈরি করি। আমি মনে করি, সেই সহায়ক পরিবেশ বিদ্যমান। কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ভিসা ইস্যু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে।’
তিনি জানান, যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার ঢাকায় স্থায়ী দূতাবাস নেই, তারা ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণে বিকল্প পথ খুঁজছে। ‘আমরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছি কীভাবে প্রাথমিকভাবে এটি সহজ করা যায়, যেন দূতাবাস না থাকাটাই প্রতিবন্ধক না হয়।’
এই লক্ষ্যে প্রফেসর সুকলাল বলেন, বাংলাদেশি আবেদনকারীদের জন্য ভিসা প্রসেসিং সহজ করতে তারা ভিএফএস-এর সঙ্গে একটি প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছেন।
তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার ঢাকায় একটি দূতাবাস স্থাপন পরিকল্পনায় থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ‘এটি এখনও আমাদের অগ্রাধিকারে আছে। আমরা এর গুরুত্ব বুঝি, এবং সেটি বাস্তবায়নের কারণও অনেক,’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতি পুনরুদ্ধারে জরুরি ভিত্তিতে ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) আয়োজন প্রয়োজন। ‘এফওসি যত দ্রুত সম্ভব, এই বছরের শেষের আগেই হওয়া উচিত। এটি সম্পর্কের অগ্রগতি পরিমাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক,’ যোগ করেন তিনি।
প্রফেসর সুকলাল স্বীকার করেন যে গত তিন দশকে দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা উন্নত হয়েছে, তবে তা আরও শক্তিশালী করার জন্য বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নতুন উদ্যম দরকার।
তিনি জানান, চলতি বছরের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি প্রধান ব্যবসায়িক চেম্বার এবং বাংলাদেশের একটি চেম্বারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামী অক্টোবর অথবা নভেম্বর মাসে পরবর্তী ফরেন অফিস কনসালটেশন হবে।’ তিনি প্রস্তাব দেন, ওই সফরে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরাও যেন অন্তর্ভুক্ত হন, যাতে এমওইউ স্বাক্ষর করা যায়।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, সময়ে সময়ে নির্দিষ্ট কিছু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা হয়েছে... কিন্তু তা একটি ছোট গোষ্ঠী দ্বারা উসকানিমূলকভাবে সংঘটিত হয়, এবং সরকার খুবই কার্যকরভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’
তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ‘আমি বলবো, দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রেও একইভাবে বাংলাদেশের দূতাবাসকে আরও সক্রিয়ভাবে আমাদের মন্ত্রণালয় ও নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। এটি ফলপ্রসূ হবে।’
প্রায় ৪ লাখ বাংলাদেশি বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাস করছেন বলে জানান তিনি। ‘এটি একটি বড় জনগোষ্ঠী। আমি মনে করি, এই উপস্থিতিই আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের একটি সুযোগ তৈরি করে,’ বলেন তিনি।
যৌথ উদ্যোগের সম্ভাব্য খাতগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আপনারা এই অঞ্চলে একটি বিশাল বাজার। দক্ষিণ আফ্রিকাকে বৃহত্তর সাব-সাহারান অঞ্চলের একটি হাব হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, কারণ আমাদের অবকাঠামোগত সুবিধা অন্য দেশগুলোর তুলনায় বেশি।’
তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে কৃষি খাতে এখনও অনেক অমুল্য সম্ভাবনা রয়েছে। ‘আমি মনে করি, আপনাদের কৃষি খাত খুবই শক্তিশালী। এটি একটি খাত যেখানে আমাদের আরও এগিয়ে যাওয়া উচিত... আমাদের জমি আছে, যৌথ উদ্যোগের অনেক সুযোগ আছে।’
এছাড়াও, খনিজ ও খনন খাতেও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাপক অভিজ্ঞতা থাকায় পারস্পরিক সহযোগিতার প্রস্তাব দেন তিনি।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বাইরেও প্রফেসর সুকলাল জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন। “ছাত্র, শিক্ষক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক— এরা এই সম্পর্ককে আরও দৃশ্যমান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে,’ বলেন তিনি।