বাসস
  ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৩:৩৮
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৩:৪৩

মার্কিন চীন বাণিজ্য আলোচনার প্রথম দিন শেষে শুল্ক যুুদ্ধের মেয়াদ বাড়ানোর ইঙ্গিত

ঢাকা, ২৯ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোমবার স্টকহোমে নতুন করে বাণিজ্য আলোচনার প্রথম দিন শেষ করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে চলমান বৈশ্বিক শুল্ক যুদ্ধে কিছুটা বিরতি এনে একটি ভঙ্গুর চুক্তিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় আছে উভয় পক্ষ। স্টকহোম থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে।

স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা ৮টা (১৮০০ জিএমটি) কিছু আগে সুইডেনের আলোচনাটি শেষ হয়। তবে উভয় পক্ষ তাদের অগ্রগতির বিষয়ে কোনো বিবরণ দেয়নি। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের একজন মুখপাত্র জানান, আলোচনা মঙ্গলবার আবার শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

এই আলোচনা এমন এক সময়ে শুরু হলো যখন ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছেন, যার অধীনে ইউরোপের রপ্তানির ওপর ১৫ শতাংশ আমেরিকান শুল্ক আরোপ করা হবে।

এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বছরের শুরুতে একে অপরের ওপর শতকরা তিন অঙ্কের শুল্ক আরোপ করেছিল, যা মে মাসে সম্পাদিত একটি সাময়িক চুক্তির মাধ্যমে স্থগিত রাখা হয়। সেই ৯০ দিনের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হবে ১২ আগস্টে।

শুল্ক চুক্তির মেয়াদ বাড়ানা হতে পারে: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট সূত্র জানিয়েছে, ওয়াশিংটন ও বেইজিং উভয়েই বর্তমান শুল্ক স্থগিতাদেশ আরও ৯০ দিনের জন্য বাড়ানোর আশায় রয়েছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশ এবং চীনও পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নিয়ে এসেছে।

তবে, এই সপ্তাহের শুক্রবারের মধ্যে বহু দেশকে ট্রাম্পের নির্ধারিত সময়সীমার মুখোমুখি হতে হবে, হয় তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাবে, নতুবা শুল্ক বৃদ্ধির মুখোমুখি হবে।

চীনের শান্তিপূর্ণ বার্তা: আলোচনার আগে বেইজিং জানিয়েছিল তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে "পারস্পরিক সহযোগিতা" ভিত্তিক সম্পর্ক চায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, ’ভুল বোঝাবুঝি কমিয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতা জোরদার করার মাধ্যমে চীন-মার্কিন সম্পর্ককে স্থিতিশীল, সুস্থ এবং টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে চায় চীন।”

স্টকহোম আলোচনায় মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এবং চীন দলের নেতৃত্ব দেন ভাইস-প্রিমিয়ার হে লাইফেং।
আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয় সুইডিশ সরকারের সরকারি বাসভবন রোজেনবাদ ভবনে, যেখানে চীনা ও মার্কিন পতাকা উত্তোলন করা হয়।

মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন: এই আলোচনার আগের ধাপ হয়েছিল লন্ডনে।

মিনার্ভা টেকনোলজি ফিউচারের কৌশল প্রধান এমিলি বেনসন বলেণ,"লন্ডনের বৈঠকের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনে চীন সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গিতে যথেষ্ট ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে,।

তিনি বলেন, ‘এখন অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে উত্তেজনা হ্রাস, বাস্তব অর্জন ও ভবিষ্যতের সম্পর্কের ভিত্তি গড়ে তোলার দিকে।"

বেনসন বলেন, যদিও এখনও কোনও পূর্ণাঙ্গ চুক্তি হয়নি, তবে কিছু অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। যেমন, সেমিকন্ডাক্টর ও বিরল খনিজের সরবরাহ আবার শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ’সেক্রেটারি বেসেন্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ৯০ দিনের শুল্ক স্থগিতাদেশ আরও বাড়ানো হতে পারে, যা একটি সম্ভাব্য ইতিবাচক ফলাফল।”

শীর্ষ পর্যায়ে সাক্ষাতের আশাবাদ

মার্কিন-চীন ব্যবসা পরিষদের সভাপতি শন স্টেইন বলেন, ’স্টকহোম আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে আলোচনার পরিবেশ ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে।’

তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘চলতি বছরের শেষের দিকে দুই দেশের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে একটি সম্মেলন, সম্ভবত বেইজিংয়ে, অনুষ্ঠিত হতে পারে।’

বাকি দেশগুলোর জন্য সতর্ক বার্তা

ট্রাম্প ইতিমধ্যেই বেশিরভাগ দেশের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, এবং ঘোষণা দিয়েছেন যে ১ আগস্ট থেকে নির্দিষ্ট কিছু দেশের ক্ষেত্রে তা আরও বাড়ানো হবে যদি তারা চুক্তি না করে।

ব্রাজিল ও ভারতের মতো দেশগুলোর জন্য শুল্ক হার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
শুল্ক বৃদ্ধির নতুন যুগ

য়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ল্যাব অনুসারে, ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির ওপর এমনভাবে প্রভাব ফেলেছে, যা ১৯৩০ সালের পর আর দেখা যায়নি।

এই মুহূর্তে, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, ভিয়েতনাম, জাপান, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি করেছে বলে জানিয়েছে, যদিও বিস্তারিত তথ্য এখনও অপ্রকাশিত।

একই সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া দ্রুত চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যে এক চুক্তি প্রকাশ করেছে।

এপ্রিল মাসে ট্রাম্প যখন হঠাৎ করে বহু দেশের ওপর শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেন এবং পরে তা স্থগিত করেন, তখন থেকেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিস্থিতি আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।