বাসস
  ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৩:০৭

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তি খুঁজে পেল ইইউ গাড়ি শিল্প

ঢাকা, ২৯ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : ইউরোপীয় ইউনিয়নের গাড়ি শিল্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তিকে একদিকে স্বস্তির নিঃশ্বাস হিসেবে দেখছে, অন্যদিকে এতে নতুন আশঙ্কার ছাপও স্পষ্ট। বিশেষ করে জার্মান গাড়ি নির্মাতারা বড় ধরনের রপ্তানি ক্ষতির মুখোমুখি, যার প্রভাব ইতোমধ্যে তাদের শেয়ার মূল্যে পড়েছে। 

সোমবার লেনদেনে পোর্শে, ভক্সওয়াগেন, বিএমডব্লিউ ও মার্সিডিজ বেঞ্জের শেয়ার তিন শতাংশের বেশি পড়ে যায়।

ফ্রাঙ্কফুর্ট, জার্মানি থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে।

ইউরোপীয় অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এসিইএ) এক বিবৃতিতে চুক্তিটিকে ‘নীতিগতভাবে ইতিবাচক’ বলে স্বাগত জানালেও, তারা সতর্ক করে জানিয়েছে যে ১৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক ইউরোপীয় গাড়ি শিল্পের পাশাপাশি মার্কিন ভোক্তাদের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ সরাসরি বলেছেন, এই চুক্তির ফলে ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ‘গভীর ক্ষতির’ সম্মুখীন হবে। তবে, তিনি বাস্তববাদী মন্তব্য করে বলেন, ‘এর চেয়ে বেশি কিছু প্রত্যাশা করা অবাস্তব।’
২০২৪ সালে ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাতারা প্রায় ৭.৫ লাখ গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছিল, যা তাদের মোট রপ্তানির প্রায় এক-চতুর্থাংশ। যদিও ১৫ শতাংশ শুল্ক হার পূর্ববর্তী ২৭.৫ শতাংশ হার থেকে কম, তবুও এটি ট্রাম্পের আগের ২.৫ শতাংশ হারের তুলনায় অনেক বেশি।

মূল্যবৃদ্ধির বোঝা কে বইবে?

জার্মান বিশ্লেষক স্টেফান ব্রাটজেলের মতে, শুল্ক বৃদ্ধির কারণে গাড়ির দাম বেড়ে যাওয়ায় এর দুই-তৃতীয়াংশ খরচ মার্কিন ভোক্তাদের বহন করতে হবে এবং বাকি এক-তৃতীয়াংশ গাড়ি কোম্পানিকেই ক্ষতিপূরণ হিসেবে মেনে নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলোর উচিত অন্য খরচ কমানোর উপায় খুঁজে বের করা।’
এই ১৫ শতাংশ শুল্ক হারটি যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যকার সাম্প্রতিক চুক্তির অনুরূপ, যেখানে জাপানও প্রধান গাড়ি রপ্তানিকারক।

‘বিলিয়ন বিলিয়ন’ ইউরো ক্ষতি: জার্মান গাড়ি নির্মাতারা তাদের রপ্তানির ১৩ শতাংশ মার্কিন বাজারে করে থাকেন। ভিডিএ প্রধান হিলডেগার্ড মুলার বলেন, এই শুল্ক ব্যবস্থা স্বল্পমেয়াদে শিল্পকে ‘বছরে বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো ক্ষতিগ্রস্ত করবে’।

এই পরিস্থিতিতে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২৫ সালের লাভের পূর্বাভাস কমিয়ে আনতে বাধ্য হচ্ছে এবং বিকল্প পদক্ষেপ নিয়ে ভাবছে।

বিএমডব্লিউর প্রধান অলিভার জিপসে প্রস্তাব দিয়েছেন, ইউরোপে আমদানিকৃত আমেরিকান গাড়ির উপর শুল্ক প্রত্যাহার করা যেতে পারে।  যা তার কোম্পানির জন্য ইতিবাচক হবে।

তারা গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৫৩,০০০ গাড়ি রপ্তানি করে এবং ৯২,০০০ গাড়ি আমদানি করেছিল।

ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে নীতিনির্ধারকদের উপর: মার্সিডিজ-এর একজন মুখপাত্র বলেন, ‘এই চুক্তিটি এক গুরুত্বপূর্ণ সূচনা হলেও পরবর্তীতে আরও পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। রাজনীতিকদের উচিত মুক্ত বাণিজ্যের পথে বাধাগুলো দূর করতে সচেষ্ট হওয়া।’

ভক্সওয়াগেন জানিয়েছে, তারা মেক্সিকোতে তৈরি গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে শুল্কের বোঝা বহন করছে, যার ফলে তাদের প্রথম ত্রৈমাসিকের আয় ১.৩ বিলিয়ন ইউরো কমে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন কেন্দ্র না থাকায় পোর্শে ও অডি গাড়িও এই সমস্যার সম্মুখীন। ইতোমধ্যে অডি এই বছরের আয় ও মুনাফার পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে, যদিও আগামী বছরে বৃদ্ধির আশা রেখেছে।

ভক্সওয়াগেনের সিইও অলিভার ব্লুম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ নিয়ে আলাদা একটি চুক্তির কথা ভাবা যেতে পারে।

এদিকে, চীনা মালিকানাধীন সুইডিশ ব্র্যান্ড ভলভো কারস বলেছে, তারা দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে শুল্কের কারণে বড় ধরনের ক্ষতি দেখেছে।

সম্ভাব্য কারখানা বন্ধ ও বেকারত্বের আশঙ্কা: ইউরোপীয় গাড়ি শিল্প এখন ইউরোপীয় কমিশনের কাছে দাবি জানাচ্ছে, যাতে সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক গাড়ির দিকে রূপান্তরের সময়সীমা পেছানো হয় এবং শিল্পে সহায়তা দেওয়া হয়। 

সেন্টার ফর অটোমোটিভ রিসার্চ-এর পরিচালক ফার্ডিনান্ড ডুডেনহোফার বলেছেন, যদি কোনও সহায়তা না আসে, তাহলে ইউরোপীয় কারখানাগুলোকে উৎপাদন হ্রাস করতে হতে পারে। তার মতে, কেবল জার্মানিতেই এটি প্রায় ৭০,০০০ চাকরির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।