বাসস
  ১৯ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৩৬
আপডেট  : ২০ অক্টোবর ২০২১, ০৯:৪৩

কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ পরিদর্শন করবে বিডা

ঢাকা, ১৯ অক্টোবর, ২০২১ (বাসস) : কল কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহে অগ্নি-দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নেতৃত্বে কল-কারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে অগ্নি-দুর্ঘটনা রোধ ও কল-কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর বিডার মাল্টি পারপাস হলে শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা রোধ এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে গঠিত সম্বনিত পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ টিমের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
বিডা এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর যৌথভাবে কর্মশালার আয়োজন করে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহছানে এলাহীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন, বিডার নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক নাছির উদ্দিন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান ফজলুর রহমান বলেন, বিডার নেতৃত্বে পরিদর্শন টিম মাঠপর্যায় থেকে কল কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহে অগ্নি-দুর্ঘটনার মূল কারণ কিংবা সেখানের সমস্যা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে। এই তথ্য ব্যবহার করে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি পরিদর্শকের উদ্দেশ্যে বলেন,‘অগ্নি দুর্ঘটনার কারণ কি-প্রথমে আমাদের সেটা বুঝতে হবে।এর জন্য মাঠপর্যায়ে গিয়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা আপনাদের দায়িত্ব। সেই তথ্য ব্যবহার করে আমরা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে পারব।’ তিনি জানান,প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অগ্নি-দুর্ঘটনা ও অন্যান্য-দুর্ঘটনা নিরোধে গঠিত জাতীয় কমিটি বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে সুপারিশমালা প্রস্তুত করবে। যেটি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিল্প-কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে দেশের শিল্প কলকারখানাসমূহে বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত অগ্নিকান্ডের প্রেক্ষাপটে শিল্প কলকারখানাসমূহের অবকাঠামোগত এবং অগ্নি-দুর্ঘটনা ও অন্যান্য-দুর্ঘটনা নিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমানকে প্রধান করে ২৪ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। 
উপদেষ্টা বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে পরিবেশসম্মত কারখানা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিপ্লব হয়েছে। পোশাক শিল্পখাতে পরিবেশসম্মত কারখানা তৈরি করতে পারলে, অন্যখাতের শিল্পে কেন আমরা পারব না। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, পোশাক শিল্পের বাইরে অন্যান্যখাতে পরিবেশসম্মত কমপ্লায়েন্ট কল-কারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সক্ষম হব।  
তিনি আরও বলেন, গত ১২ বছরে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কৃষি, বিদ্যুৎসহ অর্থনীতির নানাক্ষেত্রে বিপুল অগ্রগতি হয়েছে, এখন এই উন্নয়নের ধারা ধরে রাখার জন্য কলকারখানাগুলোকে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে হবে। সেক্ষেত্রে কলকারখানায় নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতকরণের কোন বিকল্প নাই।
সালমান রহমান সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে বলেন,আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের মোট জনগোষ্ঠির ৩০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা হবে। পাশ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কোভিড মহামারি সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে রাজউককে আরও উদ্যোগি ভুমিকা পালনের পরামর্শ দেন এবং জানান কেমিক্যাল পল্লীতে জমি বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারিরা কোন সমস্যায় পড়লে, সরকার খুব দ্রুত তার সমাধান করবে।
অনুষ্ঠানে বিডার নির্বাহী চেয়াম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, পোশাক শিল্প ও রপ্তানীমুখী শিল্প ব্যতিত বিভিন্ন খাতে ৪৬ হাজার শিল্প কারখানা ও বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে পরিদর্শনের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার শিল্প কলকারখানা পরিদর্শনের লক্ষে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার জন্য মোট ২৭টি পরিদর্শন টিম গঠন করা হয়েছে। 
তিি বলেন, ২৭টি পরিদর্শন টিমকে তাদের কাজের প্রকৃতি, কার্যপদ্ধতি ও সামগ্রিকভাবে করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদানের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। পরবর্তীতে আরও ৮১টি টিম গঠন করে  বিভাগীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দায়িত্ব ও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হবে। 
তিনি আরও বলেন, যারা কারখানা পরিদর্শন করবেন তাদেরকে মনে রাখতে হবে,এই পরিদর্শন কার্যক্রম কোনভাবেই কোন অভিযান নয় বরং কলকারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কেবলমাত্র তথ্য সংগ্রহ করা।  

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়