শিরোনাম
।। মাহামুদুর রহমান নাযীদ।।
ঢাকা, ৩ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : রাজধানীর পুরান ঢাকায় এখন শুধুই স্মৃতিতে নয়, সংরক্ষণে ও চর্চায়ও বেঁচে আছে ঢাকা কেন্দ্র। ঢাকা কেন্দ্রে রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক সংগ্রহ।
পুরান ঢাকার ২৩নং মোহিনী মোহন দাস লেনের মাওলা বখশ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত এই অনন্য সংগ্রহশালা বা গ্যালারি এবং লাইব্রেরি হয়ে উঠেছে ঢাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য চর্চার এক পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র।
ঐতিহাসিক ঢাকা কেন্দ্রের মাওলা বখশ সরদার পারিবারিক গ্যালারি রয়েছে দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য প্রায় ৩০০ পুরোনো কয়েন বা প্রাচীন মুদ্রা , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার রেডিও, ঢাকা টেলিভিশন সেন্টারের শুরুর যুগের দ্বিতীয় প্রজন্মের টেলিভিশন, ঢাকার প্রথম ট্রাফিক লাইটের কন্ট্রোল বক্স, ও বাহাদুর শাহ পার্কের ‘আল্টা খেলা’র সামগ্রী।
ঢাকা কেন্দ্রের প্রধান আকর্ষণ এর ঐতিহাসিক গ্যালারি। আরও রয়েছে বন্দুকের কার্টুজসহ ব্যাগ, হাতল-বিশিষ্ট ব্যাগ, কলের গানের মেশিন, টাইপ রাইটার, পিতল-রূপার তৈরি আসবাবপত্র, শঙ্খ, খুরচুন, পুরাতন ইট, চীনামাটির পোলাও ডিস, ঔষধ তৈরির যন্ত্র, ওজন মাপার বিশেষ যন্ত্র, আতরদানি, গোলাপজল দানী, রেকারী ও নিমন্ত্রণ বাটা, পুরাতন ক্যামেরা, ঘড়ি ও নানা যুগের মানচিত্র।
ঢাকা কেন্দ্রের এক বিশেষ আকর্ষণ হলো ‘ঢাকার পঞ্চায়েত গ্যালারি’, যেখানে সংরক্ষিত রয়েছে ঢাকার প্রাচীন পঞ্চায়েত পরিচালনার দলিল, চিঠিপত্র, ব্যবহৃত আসবাবপত্র ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র।
এছাড়াও এখানকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ লাইব্রেরিতে রয়েছে ঢাকাকে নিয়ে ৮ হাজারের বেশি বই যাতে ঢাকা বিষয়ক ইতিহাস, ঐতিহ্য, গবেষণা ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ও জীবনকথা বিষয়ক গ্রন্থ। এতে গবেষণাকেন্দ্র, পাঠকক্ষ, বই বিক্রয় কেন্দ্র, বিলকিস বানু স্মৃতি মিলনায়তন ও একটি প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্মত বাগান রয়েছে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ভাস্কর্য রয়েছে।
ঢাকা কেন্দ্রের মূল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ঢাকা বিষয়ক গবেষণা, প্রকাশনা, প্রদর্শনী ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ। তারা নিয়মিত আয়োজন করছে আলোচনা সভা, পাঠচক্র, বই প্রকাশনা অনুষ্ঠান ও গবেষণাভিত্তিক প্রদর্শনী।
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার, মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন ও কর্ম সংরক্ষণ, পরিবেশ-সচেতনতা সৃষ্টি এবং তরুণ প্রজন্মকে ঢাকা চর্চায় আগ্রহী করে তুলতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
দর্শনার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা কেন্দ্রের ভিতরে প্রবেশ করে মনে হলো যেন অতীত আমার চোখের সামনে চলে এসেছে । প্রতিটি নিদর্শন শুধু ইতিহাস নয়, আমাদের সংস্কৃতির গভীর রূপও তুলে ধরে।
তিনি আরো বলেন, এখানে প্রতিটি বস্তু, প্রতিটি বই, প্রতিটি কাচের প্রদর্শনী ঢাকার ইতিহাসের কথা বলে।
তিনি বলেন, একজন নৃবিজ্ঞান শিক্ষার্থী হিসেবে এখানে আসাটা আমার জন্য যেমন গবেষণার খোরাক, তেমনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতারও ভাণ্ডার।
ঢাকা কেন্দ্রের সমন্বয়ক মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা চাই না যে, মানুষ এখানে শুধু বই পড়তেই আসুক, আমরা চাই বই পড়ার পাশাপাশি মানুষ ঢাকা শহরকে জানুক। ঢাকার অতীত, তার অলিগলি, সংস্কৃতি, নেতৃত্ব ও প্রতিরোধ সব কিছু এর পাঠাগার, সংগ্রহশালা ও গ্যালারিতে পাওয়া যাবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের স্বপ্ন, এখানে বই নিয়ে আড্ডা হোক, গবেষণা হোক, প্রশ্ন-উত্তর হোক। ঢাকা কেন্দ্র ঢাকাকে ভালোবাসার একটি চর্চাকেন্দ্র। এই ভালোবাসা বইয়ের ভেতর দিয়ে, বইয়ের পাতার শব্দ দিয়ে ও প্রদর্শনীর দেখা ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি দিয়ে গড়ে উঠুক। আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।