বাসস
  ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৯:২০
আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৯:২৭

স্থায়ী চাকরি চান জুলাই যোদ্ধা মিশন

শাহাদাত হোসেন মিশন. ছবি : বাসস

।। বেলাল রিজভী।। 

মাদারীপুর, ৯ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : শাহাদাত হোসেন মিশন। বয়স ৩০। মাদারীপুর জেলার শিবচরের সন্তান। পল্লী চিকিৎসক বাবা হুমায়ুন কবির খানের বড় ছেলে তিনি। কাজ করতেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনের। থাকতেন ঢাকার শাহজাদপুরের খিলবাড়ির টেক। জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার আন্দোলনে নিজেকে আটকে রাখতে পারেননি তিনি। 

১৯ জুলাই আন্দোলনে গিয়ে প্রথম দিনই রাবার বুলেটে আহত হন। এরপর ৪ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় গুলিবিদ্ধ হন পায়ে। দীর্ঘ ১০ মাস ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। তবে আর কোনো কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না তার। থমকে গেছে তার স্বাভাবিক জীবন, থেমে গেছে উপার্জনের চাকাও। 

জানান, মানুষের ভালোবাসা নিয়ে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চাই। তার দাবি, সরকার যেন তার মতো অসংখ্য আহত জুলাই যোদ্ধাদের দ্রুত স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে।  

সম্প্রতি শিবচরের শরুয়াইল ইউনিয়নের পূর্বকাকৈর গ্রামে আহত শাহাদাত হোসেন মিশনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশের রাস্তায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছেন তিনি। সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে বসে থাকতে ভালো না লাগায় মাঝে মধ্যেই বাড়ির বাইরে বের হন বলে জানান। 

তারা দুই ভাই, এক বোন। বোনের বিয়ে হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। ছোট ভাই আর মা, বাবাকেই নিয়ে মিশনের সংসার। জীবনের অনেক রোমাঞ্চকর পথ এখনো বাকি, অথচ এর আগেই অন্ধকার হয়ে আসছে মিশনের ভবিষ্যৎ।

মিশন জানান, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয় তাকে। ক্রাচে ভর দিলে সেই গতি কিছুটা বাড়ে। খুব দরকার না হলে বাড়ির বাইরে খুব একটা বের হন না। কখনো ক্রাচে ভর দিয়ে আবার কখনও ক্রাচ ছাড়া বাড়ির আঙিনা, পাশের রাস্তায় হেঁটে বেড়ান। এখন শুধুই অপেক্ষা; কবে সুস্থ্য হবেন, হাঁটতে পারবেন স্বাভাবিক গতিতে। 

ভয়াবহ ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আহত মিশন বলেন, ১৮ জুলাই কাজের জন্য চট্টগ্রামে ছিলাম। ঢাকার অবস্থা ফেসবুকে দেখি। তখনও ইন্টারনেট ছিল। আন্দোলনের শুরু থেকেই আমি স্বৈরাচার হটানোর পক্ষে ছিলাম। মনে মনে প্রার্থনা করতাম স্বৈরাচারের অবসান হোক এ দেশে। এরপর আন্দোলন যখন বেগবান হচ্ছে তখন আর নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি। ওই রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই। 

১৯ জুলাই ঢাকায় ফিরে সরাসরি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেই। তখন আমি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে যাই। ছাত্রদের সঙ্গে মিশে যাই আন্দোলনে। তুমুল আন্দোলন, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। তাদের সঙ্গে রামপুরার দিকে যখন যাই, তখনই পুলিশের গুলিবর্ষণ শুরু হয়। রাবার বুলেট লাগে ডান পায়ে। বাসায় ফিরে যাই ওই অবস্থায়। চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে কাজ শুরু করি। কাজ শেষে আন্দোলনে যাই, খোঁজ-খবর রাখি নিয়মিত।
তিনি বলেন, এরপর ৪ আগস্ট আন্দোলন তখন তুমুল পর্যায়ে। বন্ধুদের নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি। যোগ দেই আন্দোলনে। প্রথমে শাহবাগে পিজি হাসপাতালে যাই। তখন হাসপাতালে আগুন জ্বলছিল। সেখান থেকে বিকেল ৫ টার দিকে তেজগাঁও-কারওয়ান বাজারের মাঝামাঝি স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছিলাম। 

মিশন বলেন, স্বৈরাচার হটানোর স্লোগানে রাজপথ তখন উত্তাল। মনে হচ্ছে আমরা জয়ের দ্বার প্রান্তে! ওই মুহূর্তে আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ-বিজিবির মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ শুরু। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এরইমধ্যে পর পর দুটি বুলেট এসে বিদ্ধ হয় আমার বা পায়ে। মুহূর্তেই ভেঙে টুকরো হয়ে যায় বাম পা।

সেই থেকে ১০ মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। কাজ করতে পারি না। জুলাই ফাউন্ডেশন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ সরকারি-বেসরকারি অনুদান পেয়েছি। কিন্তু আমাদের মতো আহতদের স্থায়ী কর্মসংস্থান দরকার। 

বর্তমান সরকারের কাছে এই দাবি জানাচ্ছি। যাতে করে আমরা ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারি।

মিশনের বাবা মো. হুমায়ুন কবির খান বলেন, ৪ আগস্ট বিকেলে ওর গুলি লাগার ২/৩ মিনিট আগে আমি ওকে কল করি। আমার ছেলে বলে,‘বাবা আমার লাশ খুঁজতে আইসেন না। আমার জীবন আমি দিয়ে দেব, তবুও রাজপথ ছাড়বো না!’ ।

আমার ছেলে পরিবারের ভরণপোষণের একজন ছিল। আজ গুলি লেগে পঙ্গু হয়ে আছে। আমার ছেলের জন্য সরকার কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিক, এখন এটাই একমাত্র চাওয়া।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোসা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি আমাদের বিশেষ নজর রয়েছে। সরকার তার চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে।