হোবার্ট, ১৬ জানুয়ারি ২০২২ (বাসস) : বোলারদের দুর্দান্ত নৈপুন্যে হোবার্টে প্রথমবারের মত হওয়া অ্যাশেজের টেস্টও জিতে নিলো স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। আজ সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্টেও তৃতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়া ১৪৬ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে ইংল্যান্ডকে । অ্যাশেজের শেষটাও ভালো হল না সফরকারীদের । আর পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৪-০ ব্যবধানে জিতে অ্যাশেজ ধরে রাখলো অসিরা।
প্রথমবারের মত হোবার্টে অ্যাশেজের কোন টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দিন শেষেই এগিয়ে ছিলো অস্ট্রেলিয়া। তবে লড়াইয়ে ভালোভাবেই টিকে ছিলো ইংল্যান্ড। প্রথম ইনিংস থেকে ১১৫ রানের লিড নিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে দ্বিতীয় দিন শেষে ৩ উইকেটে ৩৭ রান করেছিলো অস্ট্রেলিয়া। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ১৫২ রানে এগিয়েছিলো অসিরা। দিন শেষে স্টিভেন স্মিথ ১৭ ও নাইচওয়াচম্যান স্কট বোল্যান্ড ৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।
তৃতীয় দিনের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেন ইংল্যান্ডের পেসার মার্ক উড। উডের বোলিং তোপে ১৬ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারায় অসিরা। দিনের চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে বোল্যান্ডকে ৮ রানে থামেন ইংল্যান্ডের পেসার মার্ক উড। ৮ রানে প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ট্রাভিড হেডকে আটকে দেন উড। আর স্মিথকে ২৭ রানের বেশি করতে দেননি উড।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বার সেঞ্চুরি বিহীন অ্যাশেজ শেষ করতে হলো গত সিরিজে ৭ ইনিংসে ৭৭৪ রান করা স্মিথকে। এর আগে ২০১০-১১তে অভিষেক অ্যাশেজে সেঞ্চুরি পাননি স্মিথ।
দলীয় ৬৩ রানে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে আউট হন স্মিথ। এরপর দলের হাল ধরেন ক্যামেরুন গ্রিন ও উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি। দেখেশুনে খেলে দলের স্কোর তিন অংকে পৌঁছে দেন তারা। এই জুটি হাফ-সেঞ্চুরির পথেই ছিলো। কিন্তু ১ রান দূরে থাকতে জুটি ভাঙ্গে গ্রিন ও ক্যারির। ২৩ রান করা গ্রিনকে শিকার করেন ব্রড।
জুটির মত নিজেও ১ রানের জন্য হাফ-সেঞ্চুরি মিস করেন ক্যারি। ব্রডের তৃতীয় শিকার হবার আগে ৮৮ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৪৯ রানে থামেন ক্যারি।
শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেট নিজের ঝুলিতে ভরেন । স্টার্ককে ১ ও অধিনায়ক কামিন্সকে ১৩ রানে শিকার করেন উড। এই ২ উইকেট শিকারে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৫তম ম্যাচে তৃতীয়বারের মত পাঁচ উইকেট নেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটাই প্রথম পাঁচ উইকেট শিকারের নজির গড়েন উড।
উডের বোলিং তোপে ১৫৫ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ফলে ইংল্যান্ডকে ২৭১ রানের টার্গেট দিতে সক্ষম হয় অসিরা। এই ইনিংসে ইংল্যান্ডের পক্ষে ৩৭ রানে ৬ উইকেট নেন তিনি। ২০২০ সালে জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ ইনিংসে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিয়েছিলেন উড। এছাড়া ব্রড ৩টি ও ওকস ১টি উইকেট নেন।
২৭১ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দারুন শুরু ছিলো ইংল্যান্ডের। দুই ওপেনার ররি বার্নস ও জ্যাক ক্রলি ১৬ ওভারে ৬৮ রানের জুটি গড়েন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধান তিন পেসার যখন ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গতে ব্যর্থ, তখন বল হাতে বার্নস-ক্রলি জুটি ভাঙ্গেন মিডিয়াম পেসার গ্রিন। ২৬ রান করা বার্নসকে বোল্ড করেন গ্রিন।
বার্নসকে শিকার করেই ক্ষান্ত হননি গ্রিন। পরবর্তীতে ২ ওভারের ব্যবধানে ডেভিড মালান ও ক্রলির বিদায়ও নিশ্চিত করেন । ৭টি চারে ৩৬ রান করা ক্রলিকে ও মালানকে ১০ রানে আউট করেন গ্রিন। এতে ৬৮ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর ৮৩ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ইংল্যান্ড।
গ্রিনের পর ভয়ংকর হয়ে উঠে ইংল্যান্ডের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেন স্টার্ক ও বোল্যান্ড। ইংলিশ অধিনায়ক জো রুটকে ১১ রানে বোল্যান্ড ও ৫ রান করা বেন স্টোকসকে শিকার করেন স্টার্ক। এমন অবস্থায় ১০১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে ইংল্যান্ড।
তারপরও পরের দিকের ব্যাটারদের জ¦লে উঠার অপেক্ষায় ছিলো ইংল্যান্ড। কিন্তু শেষ বিকেলে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের তোপে মাত্র ২৩ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত ১২৪ রানে গুটিয়ে লজ্জার হার বরণ করে ইংলিশরা।
১৬ দশমিক ১ ওভারে ১ উইকেটে ৬৮ রান চা-বিরতিতে যায় ইংল্যান্ড। সেখান ৩৮ দশমিক ৫ ওভারে অলআউট হয় ইংলিশরা। পরের দিকে ওলি পোপ ৫, মার্ক উড ১১ ও ওলি রবিনসন শুন্য রানে কামিন্সের শিকার হন। আর স্যাম বিলিংস ১ ও ক্রিস ওকসকে ৫ রানে আউট করেন বোল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে কামিন্স-বোল্যান্ড ও গ্রিন ৩টি করে উইকেট নেন।
ম্যাচ ও সিরিজ সেরা হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড। ৪ ম্যাচের ৬ ইনিংসে ২টি সেঞ্চুরি ও ১টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৫৯ দশমিক ৫০ গড়ে ৩৫৭ রান করেছেন হেড। এবারের অ্যাশেজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও হেড।
অ্যাশেজ শেষে বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ৫ ম্যাচ খেলে ৪ জয়-১ ড্রতে ৫২ পয়েন্ট রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। জয়ের শতাংশ ৮৩ দশমিক ৩৩। এতে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে আছে অসিরা। ২ ম্যাচে ২ জয়ে ২৪ পয়েন্টে শতভাগ জয়ের শতাংশ নিয়ে টেবিলের শীর্ষে শ্রীলংকা।
আর অ্যাশেজ হারের পর ১০ ম্যাচে ১ জয়, ৬ হার ও ২ ড্রতে ১০ পয়েন্ট ইংল্যান্ডের। তাদের জয়ের শতাংশ ১০ দশমিক ৪১। ফলে পয়েন্ট টেবিলের তলানি নবমস্থানে রয়েছে ইংলিশরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর কার্ড (টস-ইংল্যান্ড) :
অস্ট্রেলিয়া : ৩০৩ ও ১৫৫, ৫৬.৩ ওভার (ক্যারি ৪৯, স্মিথ ২৭, উড ৬/৩৭)।
ইংল্যান্ড : ১৮৮ ও ১২৪, ৩৮.৫ ওভার (ক্রলি ৩৬, বার্নস ২৬, বোল্যান্ড ৩/১৮)।
ফল : অস্ট্রেলিয়া ১৪৬ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : ট্রাভিস হেড (অস্ট্রেলিয়া)।
সিরিজ সেরা : ট্রাভিস হেড (অস্ট্রেলিয়া)।
সিরিজ : পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৪-০ ব্যবধানে জিতলো অস্ট্রেলিয়া।