বাসস
  ২৯ নভেম্বর ২০২১, ১০:৩০

নোয়াখালীর উড়িরচরে ঘরে-ঘরে বিদ্যুৎ : নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করার স্বপ্ন দেখছেন এলাকাবাসী

॥ বিকাশ সরকার ॥
নোয়াখালী, ২৯ নভেম্বর, ২০২১ (বাসস) : এখন সন্ধ্যা নামতেই আর ঘরে কুপিবাতির আলো জ্বালাতে হয় না অজিফা খাতুনের। কিছুদিন আগেও বাড়ির প্রাত্যহিক কাজকর্ম ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ায় একমাত্র ভরসা ছিল কেরোসিনের কুপিবাতি কিংবা হারিকেন। কারণ এ চরে কোনো বিদ্যুৎ ছিল না। তবে এখন আর কুপিবাতি বা হারিকেনের আলোয় চলতে হয় না জেলার উড়িরচরের এ গৃহবধূকে। তার ঘর আলোকিত করছে বিদ্যুতের আলো। যার পর নাই খুশি অজিফা খাতুন। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ পেয়ে আমাদের চেয়ে বেশি খুশি হয়েছে ছেলে-মেয়েরা। এখন তারা বিদ্যুতের আলোয় স্বাচ্ছন্দে লেখাপড়া করতে পারছে।’
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা ইউনিয়ন চর এলাহী। এই ইউনিয়নের একটি অংশ উড়িরচর ও চর বালুয়া। মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় জনবসতি গড়ে ওঠার পর থেকে বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলো ২৫  হাজার মানুষ। অবস্থাসম্পন্ন হাতেগোনা কিছু বাড়িতে নিজস্ব সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানকার অধিকাংশ বাসিন্দাদের রাত কাটে প্রায় অন্ধকারে। সম্প্রতি মেঘনা নদীর তলদেশ দিয়ে সাব মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতের আলো পৌঁছেছে এ চরে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে শতভাগ বিদ্যুতায়নের অংশ হিসেবে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে এ চরকে আলোকিত করেছে নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। কাঙ্খিত বিদ্যুৎ পেয়ে খুশি এ চরের বাসিন্দারা। এখন বিদ্যুতের আলোয় নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করার স্বপ্ন দেখছেন তারা। সন্ধ্যার পর ঘুমিয়ে পড়া চর এখন জেগে থাকে মধ্য রাত পর্যন্ত। বেড়েছে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। গতি আসতে শুরু করেছে মানুষের জীবনে। সারাদিন ক্ষেত-খামার আর গৃহস্থালীর কাজ শেষে রাতে বিদ্যুতের আলোয় কাজ করে বাড়তি রোজগার করছেন অনেকে।   
নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুত সূত্রে জানা যায়, সাড়ে চার কিলোমিটার নদীর তলদেশ পাড়ি দিয়ে চর বালুয়ায় ১০ মেঘাওয়াট বিদ্যুত উপকেন্দ্র স্থাপন করে সংযোগ দেয়া হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার পরিবারকে। তবে সক্ষমতা রয়েছে ১ লাখ পরিবারকে বিদ্যুতের আওতায় আনার।
সরেজমিনে দেখা যায়, চর বালুয়ার সমিতি বাজার ও বারো আউলিয়া বাজারে প্রবেশের মুখেই সড়কের পাশে  বসানো হয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য টানানো হয়েছে বিদ্যুতের তার। বাজারের দোকানগুলোতে চলছে টিভি। কম্পিউটারে কাজ করছে কয়েকজন যুবক। 
চর বালুয়ার বাসিন্দা মো. জসিম উদ্দিন ও বারো আউলিয়া বাজারের দোকানীরা জানান, তারা কোনোদিন ভাবেননি তাদের ঘর আলোকিত হবে বিদ্যুতের আলোয়। চরবাসীর স্বপ্ন পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদ্যুৎ সুবিধার কারণে এখন তারা কৃষিসহ সব সেক্টরে উন্নতি করতে পারবেন।
নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, মেঘনা নদীর তলদেশ দিয়ে সারমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুত সঞ্চালন করা হয়েছে উড়িরচরে। গত ১৫ নভেম্বর পুরো চরকে আলোকিত করার কাজ শেষ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। 
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক মীর বলেন, বিদ্যুতের কারণে চরের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। ডিজিটাল সুবিধাসহ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবন-মান উন্নয়নের আওতায় আসবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত গ্রাম হবে শহর সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়