শিরোনাম
ঢাকা, ৭ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): নাট্যকার, গবেষক ও নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের পদক, পুরস্কার, পাণ্ডুলিপি, স্মৃতিস্মারক ও অন্যান্য ব্যক্তিগত সংগ্রহ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের দাবি জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৫১ জন নাগরিক।
তারা অভিযোগ করে বলেন, বাংলা নাট্যজগতের এই কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বের অমূল্য সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক দলিল দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে অবহেলায়, অযত্নে এবং এক পরিবারের কাছে কুক্ষিগত অবস্থায় পড়ে আছে।
বিবৃতিতে নাগরিকরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান নাট্যকার সেলিম আল দীনের পদক, পুরস্কার, পাণ্ডুলিপি ও স্মৃতিস্মারক রাষ্ট্রীয় কোনো সংরক্ষণাগারে নেই, বরং তা অযত্নে পড়ে আছে। এটি আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির প্রতি অবমাননা এবং নাট্য ইতিহাসের প্রতি অবহেলার দৃষ্টান্ত।’
তারা বলেন, ‘সেলিম আল দীন আমাদের নাট্যশিল্পের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার নাটক, গবেষণা, শিক্ষাদান ও শিল্পচিন্তা বাংলা নাট্যচর্চাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তিনি শুধু মঞ্চনাটকের নির্মাণেই নতুন ধারার সূচনা করেননি, বরং আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও জাতিসত্তার সঙ্গে নাট্যচর্চার গভীর যোগসূত্র স্থাপন করেছিলেন। বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে তার অবদান অনস্বীকার্য, যা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সংরক্ষণের দাবিদার।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিল্প, সাহিত্য ও নাটকের ক্ষেত্রে যেসব কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব জাতীয় সম্পদে পরিণত হয়েছেন, তাদের ব্যক্তিগত স্মৃতিস্মারক রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। সেই তুলনায় আমাদের দেশে সেলিম আল দীনের মতো বিশ্বমানের নাট্যকারের স্মৃতিস্মারক অযত্নে পড়ে থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য।’
বিবৃতিদাতারা মনে করেন, নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের জীবন ও কর্ম শুধু নাট্যচর্চার ইতিহাস নয়, বরং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চেতনা ও জাতিগত গর্বের অংশ। তাই তার পদক, পুরস্কার, নাটকের পাণ্ডুলিপি, চিঠিপত্র, নোটবুক, ব্যবহার্য দ্রব্য এবং অন্যান্য স্মৃতিস্মারক রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।
তারা বলেন, ‘এই মহান নাট্যকারের প্রতি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। তার স্মৃতি ও কর্ম আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনুপ্রেরণার উৎস।’
তারা দাবি জানান, সরকার যেন জরুরি ভিত্তিতে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের পদক, পুরস্কার ও পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করে জাতীয় জাদুঘর বা বাংলা একাডেমির মতো কোনো রাষ্ট্রীয় সংরক্ষণাগারে নিরাপদে সংরক্ষণ করে। একই সঙ্গে তার জীবন ও কর্মকে কেন্দ্র করে একটি স্থায়ী গবেষণা ও প্রদর্শনী কেন্দ্র স্থাপন করা হোক, যেখানে নাট্যপ্রেমী, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা তার নাট্যভুবন সম্পর্কে জানতে পারবেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সেলিম আল দীনের স্মৃতিস্মারক সংরক্ষণ কেবল তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন নয়, এটি হবে বাংলাদেশের নাট্য ঐতিহ্যের প্রতি দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে তার পদক ও পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ করলে দেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ হবে।
এই দাবিতে স্বাক্ষর করেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কবি, লেখক, গবেষক, সংস্কৃতিকর্মী, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অধিকার কর্মীরা।
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন- কবি কাজল শাহনেওয়াজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রায়হান রাইন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক হাবিব উল্লাস জাকারিয়া ও শুসমিন আফসানা, লেখক ও বিশ্লেষক ড. মারুফ মল্লিক, লেখক ও শিক্ষক ফাহমিদুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার, অভিনয়শিল্পী কাজী নওশাবা আহমেদ, অভিনয়শিল্পী সিকদার মুকিত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আনিছা পারভীন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল ফজল, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইন্সটিটিউটের পরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুজ্জামান কাজল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সঙ্গীতজ্ঞ কৌশিক আহমেদ, কবি ও লেখক নাহিদ ইসলাম, লেখক ও গবেষক মীর হুযাইফা আল মামদূহ, কবি রহমান হেনরী, কথাসাহিত্যিক ও সংগঠক পাপড়ি রহমান, লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী বাকী বিল্লাহ, লেখক ও অধিকার কর্মী ফেরদৌস আরা রুমী, সংস্কৃতিকর্মী জাহেদুল আলম হিটো, সংস্কৃতিকর্মী রঘু অভিজিৎ রায়, চলচ্চিত্র নির্মাতা রজত তন্ময় পাল, সঙ্গীতশিল্পী ও নির্মাতা ইমামুল বাকের এপোলো, লেখক ও চলচ্চিত্র গবেষক ওয়াহিদ সুজন, কবি ও সংগঠক চিনু কবির, অভিনেতা সোহেল তৌফিক, সংস্কৃতিকর্মী আব্দুল মজিদ অন্তর, চলচ্চিত্র গবেষক হারুন অর রশিদ, লেখক জুবায়ের ইবনে কামাল, দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক শাহাদত হোসেন, চলচ্চিত্র নির্মাতা অনার্য মুর্শিদ, গবেষক ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট মমিনুর রহমান, কবি জাহিদ জগৎ, কবি ও কথাসাহিত্যিক রাসেল রায়হান, কবি নকিব মুকশি, লেখক এনামূল হক পলাশ, কবি ও সংগঠক মাসুম মুনাওয়ার, কবি সুলতান আকন, কবি ও কথাসাহিত্যিক শাদমান শাহিদ, থিয়েটার কর্মী সামিউন জাহান দোলা, লেখক ও শিক্ষক শামীমা নাজনিন তনিমা, সর্বজনের সংস্কৃতির আহ্বায়ক জাহিদ হাসান, কবি পলিয়ার ওয়াহিদ, কবি উপল বড়ুয়া, লেখক ও গবেষক রাহুল বিশ্বাস, কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মী রহমান মুফিজ, মানবাধিকার কর্মী জাহিন জামাল, সংস্কৃতিকর্মী জাহিন ইবনে জামাল, কবি ও লেখক সাজ্জাদ বিপ্লব এবং কবি ও শিক্ষক রাকিব লিখন।