বাসস
  ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৩৭

সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ছাড়া দেশের সংবিধানকে পরিবর্তন করার অধিকার কারো নেই : সালাহউদ্দিন

বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ফাইল ছবি

ঢাকা, ৪ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘যেকোন একটা আইনানুগ বৈধ এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানকে পরিবর্তন করার কোন অধিকার আমাদের কারো নেই।’

জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দলের জুলাই সনদ ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি নিয়ে চলমান আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে আজ এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই মন্তব্য করেন।

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা, সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচনে গণতান্ত্রিক উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে এনডিপি।

তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ছাড়া সংবিধান পরিবর্তন করা হলে, পরে এমন একটি পরিস্থিতির নজির সৃষ্টি হবে- যে নজিরটা আগামী দুই বছর পরে, পাঁচ বছর পরে, বারবার কোন না কোন দাবির মুখে পড়বে- যে এইভাবে এই প্রক্রিয়ায় আবার সংবিধান পরিবর্তন করেন।’

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্র কোন ছেলে খেলা নয়। ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে আমরা ছিনিমিনি খেলতে পারি না। এই রাষ্ট্রকে একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলতে দিতে হবে। কোন রাজনৈতিক দলের অভিসন্ধির কাছে আমরা কোনদিন মাথা নত করতে পারি না। এই জনগণের স্বার্থ এবং এই জনগণের অভিপ্রায়ই চূড়ান্ত। এই দেশের সার্বভৌম জনগণই হচ্ছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার মালিক। আসুন আমরা তাদের কাছে যাই।’

জুলাই সনদ সম্পর্কে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা বলেছি নির্বাচনের দিনে একই দিনে আরেকটা ব্যালেটের মাধ্যমে গণভোটের সেই রায়টা নেয়া যাবে যে, এই সংস্কারের মধ্যে ঐক্যমত কমিশনের কাছে আমরা যারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি, সকল রাজনৈতিক দলের সেই প্রতিশ্রুতির পক্ষে জনগণ আছে কিনা, সেই সনদের পক্ষে জনগণ আছে কিনা, হ্যাঁ অথবা না বলুন।’

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘যদি জনগণ হ্যাঁ বলে তাহলে সেই পার্লামেন্ট সেই নির্বাচিত সংসদের প্রত্যেকটা সংসদ সদস্য আইনানুগ ভাবে ম্যান্ডেট প্রাপ্ত হবেন এই সনদ বাস্তবায়নের জন্য তারা বাধ্য থাকবেন, সেই সনদ বাস্তবায়নের জন্য আমরা এই প্রক্রিয়ার কথা বলেছি। কিন্তু না, তাদের কথাই মানতে হবে যে, সাংবিধানিক আদেশের মধ্য দিয়ে অবৈধভাবে এই ঘোষণা নাকি এখনই জারি করতে হবে উইথ ইমিডিয়েট এফেক্ট যে, আজকে থেকে কার্যকর হলো ধরে নিয়ে। সংবিধান তো কোন কচু পাতার পানি নয় যে, যা খুশি, যেভাবে খুশি সেভাবে আমরা বলে দিলেই পরিবর্তন হবে।’

বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘যখন সংবিধান ছিল না, দেশে যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে হয়েছিল, বাংলাদেশের উপরে যখন যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল, তখনকার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এই ভূখন্ডের জন্য গণপরিষদ গঠন করে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করেন। সেখানেই জনগণের সামনে তারা বললেন, তারা গণপরিষদ গঠন করলেন। তারাও রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রিপরিষদ গঠনের জন্য তারা এখতিয়ার দিলেন এবং তারা জনগণের পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনা করলেন।’

তিনি বলেন, ‘তারা জনগণের পক্ষে সমস্ত আইন কানুন প্রেসিডেন্ট অর্ডারের মাধ্যমে জারি করলেন। সেই বৈধ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ চলেছে। পরে সংবিধান হয়েছে। সেই সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের পর প্রকৃত পর পরই সেই সাংবিধানিক প্রক্রিয়া রাষ্ট্র রেগুলারলি এসেছে, এখানে কোন অনিয়ম হয়নি। এখন পর্যন্ত ১৭ বার এই রাষ্ট্রের সংবিধান পরিবর্তন হয়েছে, আগামীতেও এমেন্ডমেন্ট হবে 

সালাহউদ্দিন আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আসুন নতুন সংবিধান বলি বা সংশোধিত সংবিধান বলি, গণপরিষদের মাধ্যমে বলি বা জাতীয় সংসদের মাধ্যমে বলি, ঘটনা তো একই। এই যে জনগণ ঐক্যমতে আসলো, সেই রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে আসলো, সংবিধানের কিছু বিষয় সংশোধন, একটা সাংবিধানিক বৈধ এবং আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই হতে হবে, এটাই হচ্ছে আমাদের বক্তব্য।’ 

তিনি বলেন, ‘এই ৫ তারিখে আবার আলোচনা ডেকেছে। আমরা আশা করি সাংবিধানিক অংশগুলো যেগুলো সংশোধনের জন্য সবাই একমত হয়েছে ‘উইথ সাম নোট অফ ডিসেন্ট’  সেই বিষয়গুলো একটা বৈধ আইনানুগ এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় আমরা গ্রহণ করতে পারব। সেই আশাবাদ আমি এখনো ব্যক্ত করি।’

সালাহউদ্দিন প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যারা আজকে পিআর পিআর করছে তাদের উদ্দেশ্যে শুধু বলি- যে কয়টা রাজনৈতিক দল নিয়ে আপনারা মাঠে এ সমস্ত বক্তব্য দিচ্ছেন তারা কারা? আপনাদের অন্তর্ভুক্ত একটি রাজনৈতিক দল নাম নেবো না, আপনারা নাম খুঁজে বের করবেন, তারা ৭ জানুয়ারির ‘আমি-ডামি’ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে তারা আপনাদের দোসর হয় কিভাবে আন্দোলনে?'

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘যে সমস্ত রাজনৈতিক দল নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থে জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে, দেশের স্বার্থকে জনগণের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে তাদেরকে বলব, আপনারা বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে সঠিক রাস্তায় ফেরত আসুন। জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না।’

তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আপনারা কি জানেন পিআর পদ্ধতিতে কোন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোন জায়গা আছে? আপনারা যে কেউ যদি কোন নির্বাচনী এলাকার মধ্যে কেউ একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতে চান তার জন্য পিআর পদ্ধতিতে তো কোন খানা নাই। তারা কি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য সাংবিধানিক অধিকার রাখে না? আমরা স্পর্শই দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দানে এবং নির্বাচনে অস্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য এবং পারতপক্ষে বানচাল করার জন্য যে শক্তি কাজ তার পক্ষেই এই রাজনৈতিক দলটি কাজ করছে বলে আমাদের সন্দেহ। কারণ বাংলাদেশে যদি নির্বাচন বিলম্বিত হয় তাহলে আবার  ফ্যাসিবাদের উৎপাত হবে।’

এনডিপির সভাপতি আবদুল্লাহ আল হারুনের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব জামিল আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, গণ দলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান, ডেমোক্রেটিক লীগের খোকন চন্দ্র দাস, জনতার অধিকার পার্টির তরিকুল ইসলাম, ন্যাপের আবদুল বারেক, এনডিপির আওলাদ হোসেন প্রমুখ বক্তৃতা করেন।