শিরোনাম
চাঁদপুর, ২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। পদ্মা-মেঘনার ৭০ কিলোমিটার অংশ ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে।
সরকারের এই অভিযান বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে সবধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্ব উপকূলীয় এলাকায় চালানো হচ্ছে সচেতনামূলক প্রচারণা।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণে জড়িত জেলায় নিবন্ধিত জেলে প্রায় ৪৩ হাজার। মাছ ধরা বন্ধ থাকাকালীন সময়ে এসব জেলেদের ৪০ কেজি করে খাদ্যসহায়তা প্রদান করা হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জেলেদের কাছে পৌঁছে যাবে এই খাদ্যসহায়তা।
এদিকে সাগর থেকে নদীর মিঠা পানিতে বছরের এই সময়ে ইলিশের বিচরণ ঘটে। যার ফলে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় দিন ও রাতে অভিযান পরিচালনা করবে টাস্কফোর্স।
প্রজনন রক্ষার এ ২২ দিন অভয়াশ্রম এলাকায় মাছ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুত নিষিদ্ধ থাকবে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার করলে মৎস্য আইনে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের এই অভিযান সফল করার বিষয়ে সদর উপজেলার রামদাসদী এলাকার জেলে আইয়ুব আলী বলেন, সরকারের দেয়া নিষেধাজ্ঞা আমরা মানি। তবে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। কারেন্ট জাল নিষিদ্ধ করতে হবে। আমাদের নৌকা ও জাল ইতোমধ্যে ডাঙ্গায় উঠিয়ে রেখেছি। কারণ এ বছর মৌসুমে ইলিশ তেমন পাওয়া যায়নি।
একই এলাকার জেলে ফরিদ হোসেন বলেন, আমরা সরকারের আদেশ মেনে চলি কিন্তু কতিপয় অসাধু লোক এই নিষেধ মানে না। তারা নদীতে নেমে মা ইলিশ নিধন করে। তাদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
সদর উপজেলার হরিণা মাছঘাটের প্রবীণ মাছ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম সৈয়াল বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমরা আড়তগুছিয়ে চলে যাই। তবে টাকার বিনিময়ে কিছু জেলে নদীতে নামে। জেলে পল্লী এলাকায় প্রশাসনের অবস্থান নিশ্চিত হলে অভিযান সফল হবে।
হরিণার আড়ত মালিক আবুল কাসেম কালু বলেন, অভিযানের সময় আমরা বাসাবাড়িতে থাকি। কিন্তু কতিপয় লোক টাকার লোভে নদীতে নেমে মাছ ধরে। প্রশাসনের উচিত হবে অগ্রীম তথ্য নিয়ে তাদের নদীতে নামার আগেই আটক করা।
চাঁদপুর সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মির্জা ওমর ফারুক বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ ২২ দিন নদীতে কঠোর নজরদারিতে থাকবে। নৌকাগুলো নদীতে না নামার ব্যবস্থা করা হবে। অর্থাৎ পদ্মা-মেঘনা সংযুক্ত খালগুলোর মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে। খালের অভ্যন্তরে থাকা নৌকা একত্রিত করে বেঁধে রাখা হবে। প্রশাসনের কেউ অনৈতিক কাজে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, ২২ দিন জেলেদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং মা ইলিশ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এই সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিকল্প কর্মসংস্থান ও সহায়তা প্রদান করা হবে। এরপরেও কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে নামলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন জেলেদের উদ্দেশ্যে বলেন, উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মা ইলিশকে নিরাপদে ডিম ছাড়ার জন্য সুযোগ করে দিতে হবে। কারণ ইলিশের জন্যই চাঁদপুর জেলা সারা দেশে পরিচিত। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ধরা হলে ভবিষ্যতে মাছের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আইন অমান্য করলে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে।
তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু শাস্তির জন্য নয়, বরং আপনাদের (জেলে) ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য। আজ যদি আমরা মা ইলিশ রক্ষা করি, আগামী দিনে নদীতে আরও বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে এবং উপকৃত হবেন আপনারাই।