শিরোনাম
মো. আয়নাল হক
রাজশাহী, ২৪ আগস্ট, ২০২৫(বাসস): রাজশাহী হাই-টেক পার্ক আগামী ছয় মাসে প্রায় তিন হাজার তরুণের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর ক্রমবর্ধমান আগ্রহের ফলে বিনিয়োগে গতি পেয়েছে।
পদ্মা নদীর চমৎকার অববাহিকায় অবস্থিত পার্কটি দক্ষ কর্মশক্তি এবং আধুনিক কর্মসংস্থানের নতুন পথ উন্মুক্ত করছে। এটি শুধু একটি উন্নয়ন অঞ্চল নয়, বরং স্থানীয় যুবকদের প্রযুক্তি গ্রহণে অনুপ্রাণিত করছে এবং তাদের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়তে উৎসাহিত করছে।
পার্কটির কেন্দ্রে থাকা ১২ তলা সিলিকন টাওয়ারে মোট ৮৪ হাজার ৬৬১ বর্গফুট স্পেস রয়েছে। গত এক বছরে ৫৮ হাজার ৪১৬ বর্গফুট স্পেস ১৬টি কোম্পানিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও ২৪ হাজার ৬৩৭ বর্গফুটের বরাদ্দ প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং বাকি ৯ হাজার ৫৭৬ বর্গফুট স্পেস বরাদ্দের জন্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
পার্কটি দ্রুত একটি ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশে পরিণত হয়েছে, যা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করছে। এর লক্ষ্য হলো- নতুন তথ্য প্রযুক্তি উদ্যোক্তা তৈরি, জ্ঞানভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠা করা এবং জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা।
পার্কের উপ-পরিচালক মাহফুজুল কবির জানান, সিলিকন টাওয়ারের সামনে আটটি নতুন প্লট বড় কোম্পানির জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দেয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ডিসেম্বরের মধ্যে পার্কে ব্যাপকভাবে কার্যক্রম শুরু হবে।
গত বছর কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে রাজশাহী হাই-টেক পার্ক দেশি-বিদেশি কোম্পানির কাছে বিনিয়োগ আকর্ষণের স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরে মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক এই হাইটেক পার্কে ৪০ বছরের জন্য এক একর জমি ইজারা নিয়েছে। এ জন্য কোম্পানিটি প্রতি বর্গমিটারে বছরে ২ ডলার হারে ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ দেবে।
প্রতিষ্ঠানটি এপ্রিল মাসে চুক্তি সই করার পর জুলাই মাসে তাদের গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ সম্পন্ন করেছে। স্টারলিঙ্ক গাজীপুর যশোরসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ করছে।
স্টারলিঙ্কের স্থানীয় অংশীদার বন্ডস্টাইন টেকনোলজিস লিমিটেড পার্কে একটি আইওটি ও রোবোটিকস রিসার্চ সেন্টার স্থাপন করার পরিকল্পনা করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির সিইও মীর শাহরুখ ইসলাম বলেন, বর্তমানে ১০টি অ্যানটেনা স্থাপন করা হয়েছে, আরও ৩০টি স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা রাজশাহীতে উন্নত প্রযুক্তি গবেষণা ও উন্নয়নে অবদান রাখতে পেরে উদ্দীপ্ত।
অন্যদিকে, অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেড এক একর জায়গা লিজ নিয়েছে এবং ব্র্যাক আইটি তাদের ৬৫০টি আইটি পেশাজীবীকে স্থানান্তর করতে দুই একর জায়গা চেয়ে আবেদন করেছে। ব্র্যাকের সিইও আসিফ সালেহ সম্প্রতি পার্কটি পরিদর্শন করে সম্প্রসারণের সুযোগ খতিয়ে দেখেছেন।
বাংলাদেশের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান চালডাল এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ সিলিকন টাওয়ারের ১০ম এবং ৯ম তলায় যথাক্রমে ১২ হাজার ৬১২ বর্গফুট জায়গা লিজ নিয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠানই তাদের আইটি এবং কাস্টমার সার্ভিস সেন্টার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে। প্রাণ-আরএফএল তাদের প্রশিক্ষণ এবং বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) সেবা চালু করারও পরিকল্পনা নিয়েছে। চালডাল গ্রাফিক ডিজাইন, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং হার্ডওয়্যার খাতে কর্মী নিয়োগ করতে চায়।
৩১ একর আয়তনের পার্কটি রাজশাহী কোর্ট এলাকার পাশে অবস্থিত এবং এতে মোট ৩৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।
তবে এর পথচলা সহজ ছিল না। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পার্কটির সম্পদের ক্ষতি হয়, যেমন- স্টার সিনেপ্লেক্স, যা ৩ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, এখনও তাদের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে পারেনি। তবে নেট্রা সিস্টেমস লিমিটেড এবং বিজনেস অটোমেশন লিমিটেড আবার ব্যবসা শুরু করেছে এবং তারা তাদের কার্যক্রম পুনরায় চালু করেছে।
নেট্রা সিস্টেমসের সিইও আসিক মোহাম্মদ জানান, তারা ২৫ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এবং তিন মাসের জন্য কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তাদের টিমকে বাড়ি থেকে কাজ করতে হয়েছে।
তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে আমরা আরও বিদেশি বিনিয়োগ এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের বাইরে সফটওয়্যার উন্নয়নে আরও বেশি মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছি।
বিজনেস অটোমেশন লিমিটেডও প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তবে তারা এখনও অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে সিলিকন টাওয়ারে ১৬টি কোম্পানি ১৮টি ব্লকে কাজ করছে। এর মধ্যে ১১টি কোম্পানি কার্যক্রম শুরু করেছে এবং বাকিগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া, পার্কের আইটি প্রশিক্ষণ এবং ইনকিউবেশন সেন্টারে সাতটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান সক্রিয় রয়েছে।
শিল্প ব্যক্তিবর্গ ও পার্ক কর্মকর্তারা একটি আঞ্চলিক প্রযুক্তি কেন্দ্র হিসেবে রাজশাহীর ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী রয়েছেন।