শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশে শতভাগ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইনকে আরও শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করা জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।
জাতিসংঘের আঞ্চলিক সংস্থা ইউএনএসকাপ ঘোষিত সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস (সিআরভিএস) দশকের আওতায় বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ জন্ম এবং মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ১৬.৯ লক্ষ্যমাত্রায় জন্ম নিবন্ধনসহ সকলের জন্য বৈধ পরিচয়পত্র প্রদানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে ২৩-২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন : অগ্রগতি, প্রতিবন্ধকতা ও করণীয়’ শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞ আলোচকরা এসব মতামত ব্যক্ত করেন।
কর্মশালার আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান), সহযোগিতা করে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)। এতে প্রিন্ট, টেলিভিশন ও অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ৩০ জন সাংবাদিক অংশ নেন।
আলোচকরা বলেন, দেশের সকল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আইনগতভাবে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্ব প্রদান করা হলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।
কর্মশালায় জানানো হয়, বর্তমানে দেশে জন্ম নিবন্ধনের হার মাত্র ৫০ শতাংশ, যেখানে বৈশ্বিক গড় হার ৭৭ শতাংশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার গড় হার ৭৬ শতাংশ। মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। এখানে নিবন্ধনের হার ৪৭ শতাংশ, যেখানে বৈশ্বিক গড় ৭৪ শতাংশ।
বক্তারা বলেন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কেবল নাগরিকত্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সম্পত্তির উত্তরাধিকার বা ভোটাধিকার নিশ্চিত করে না, বরং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সঠিক জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য তথ্য পরিকল্পনা, বাজেট, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা এবং সুশাসনের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বক্তারা জানান, দেশের প্রায় ৬৭ শতাংশ শিশু স্বাস্থ্যসেবার আওতায় জন্মগ্রহণ করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। বিদ্যমান আইনে এই দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পরিবারকে দেওয়া হয়েছে এবং স্বাস্থ্য বিভাগের ভূমিকা রাখা হয়েছে ঐচ্ছিক। বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, ব্যক্তির বদলে প্রতিষ্ঠানের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করলে নিবন্ধনের হার দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অনেক দেশ হাসপাতালে সংঘটিত জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধনের দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেওয়ায় শতভাগ বা কাছাকাছি সাফল্য অর্জন করেছে।
জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, ‘আইন সংশোধন করে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্ব আইনগতভাবে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের নিকট প্রদান করা হলে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যেই শতভাগ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে।’
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস-এর কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর মো. নজরুল ইসলাম ও মো. মঈন উদ্দিন, চ্যানেল আই-এর সিনিয়র নিউজ এডিটর মীর মাসরুর জামান, অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স-আত্মা’র কনভেনর লিটন হায়দার, কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ ও মিজান চৌধুরী এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের। এসময় বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার এবং কোঅর্ডিনেটর মাশিয়াত আবেদিন।