বাসস
  ২৪ জুলাই ২০২৫, ১৭:২৬

সীমান্তে চোরাচালান বন্ধ ও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বিজিবি

 বাদল নূর 

ঢাকা, ২৪ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্তে চোরাচালান বন্ধ ও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

গত এক বছরে বিজিবি চোরাচালানবিরোধী বিভিন্ন অভিযান ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাহসী ভূমিকা রেখেছে।

বিজিবি জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানবিরোধী তৎপরতায় বিজিবি সব সময়ই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় টহলসহ সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ফলে পূর্বের তুলনায় চোরাচালানি পণ্য জব্দের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজিবি তৎপর আছে বলেই এটা সম্ভব হচ্ছে।

চলতি বছরের জুন মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মোট ১৩৬ কোটি ৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে বিজিবি।

এছাড়া অভিযানে জুন মাসে বিজিবি বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে। সীমান্তে বিজিবি’র অভিযানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯৭ জন চোরাচালানি এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ১৫৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও সাতজন ভারতীয় নাগরিককে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে মিয়ানমারের ৩৩৫ জন নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

চলতি বছরের মে মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৩৩ কোটি ১১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে বিজিবি। এছাড়া বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

বিজিবি জানায়, অভিযানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪৫ জন চোরাচালানি এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ৭১৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও ১০ জন ভারতীয় নাগরিককে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়। এছাড়া বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে মিয়ানমারের ৩৯০ জন নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

এ বছর এপ্রিল মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১০১ কোটি ৩৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হয় বিজিবি। অভিযানে প্রচুর চোরাচালান পণ্য সামগ্রী জব্দ ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে রাইফেল, দেশীয় পিস্তল, বন্দুক, ককটেল, পেট্রোল বোমা।

চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪৩ জন চোরাচালানি এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ৪০০ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও ১৩ জন ভারতীয় নাগরিককে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া দেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৪৬৪জন মায়ানমার নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত প্রদান করা হয়েছে।

গত মার্চ-২০২৫ মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সর্বমোট ১৫২ কোটি ৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে।

সীমান্তে বিজিবি’র অভিযানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৩৪ জন চোরাচালানি এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ৩৩৭ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া দেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৬৪৭ জন মিয়ানমারের নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত প্রদান করা হয়েছে।

ফেব্রুয়ারি-২০২৫ মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সর্বমোট ১৭০ কোটি ১৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে।

জব্দকৃত চোরাচালান দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে স্বর্ণ, রুপা, শাড়ি, থ্রিপিস, শার্ট পিস, চাদর, কম্বল, পোশাক, থান কাপড়, কসমেটিক্স সামগ্রী, ইমিটেশন গহনা, আতশবাজি, ঘনফুট কাঠ, চা পাতা, সুপারি, চিনি, সার, ডিজেল, কয়লা, পাথর, সুতা, কারেন্ট জাল, মোবাইল, মোবাইল ডিসপ্লে, চশমা, ফল, ভোজ্য তেল, পিঁয়াজ, রসুন, জিরা, কিশমিশ, চকোলেট, ট্রাক, পিকআপ, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক্টর, নৌকা, সিএনজি, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল এবং বাইসাইকেল। এছাড়া অভিযানে বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে।

মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৩৪ জন চোরাচালানি এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ২৮১ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও ১৩ জন ভারতীয় নাগরিককে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৯৩১জন মায়ানমার নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত প্রদান করা হয়েছে।

বিজিবি জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সর্বমোট ১৬২ কোটি ৫২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও পণ্যবাহী নয়টি ট্রাক, ১২টি পিকআপ, চারটি প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, দুইটি ট্রলি, ৪৩টি নৌকা, ৩৪টি সিএনজি, ইজিবাইক, ৫৩টি মোটরসাইকেল এবং ১৯টি বাইসাইকেল জব্দ করা হয়। এর পাশাপাশি বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৪৭ কোটি ৮৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হয় বিজিবি। সে-সব অভিযানে পাঁচটি ট্রাক, একটি বাস, ছয়টি পিকআপ, তিনটি প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, তিনটি ট্রলি, ৭৪টি নৌকা, ৩১টি সিএনজি, ইজিবাইক, ৭২টি মোটরসাইকেল, ২২টি ভ্যান গাড়ি এবং ৩০টি বাইসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

উক্ত অভিযানে বিপুল পরিমাণ পিস্তল, রাইফেল, এয়ার গান, ম্যাগাজিন, গুলি, মর্টার শেল, গ্রেনেড ও রকেট গোলা উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও গত মাসে বিজিবি বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করে।

বিজিবি’র তথ্যমতে অভিযানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০৮ জন চোরাচালানি এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ৪২৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও ১৮ জন ভারতীয় নাগরিককে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে ৭৭২ জন মিয়ানমারের নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

বিজিবি গত নভেম্বর-২০২৪ মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মোট ১৭২ কোটি ২ লাখ ৮ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া উক্ত অভিযানে ৫০টি সিএনজি, ইজিবাইক, ৭৮টি মোটরসাইকেল, ১১টি ভ্যান গাড়ি এবং ২৩টি বাইসাইকেল জব্দ করা হয়।