শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ১৩ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য উদঘাটন করে চট্টগ্রামের ‘ক্ষমতাধর’ আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (১৩ জুলাই) দুদক-এর চট্টগ্রাম কার্যালয়ে মামলাটি করেন প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন। দুদক-এর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ১০৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকার সন্দেহভাজন লেনদেনের তথ্য উদঘাটনের পর তার বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়েছে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, অনুসন্ধানকালে আসামি ফজলে করিম চৌধুরীর নামে ১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ ও ১২ কোটি ১৩ লাখ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদসহ মোট ২৪ কোটি ৮ লাখ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এই সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার ঋণ বা দায়-দেনার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
আয়কর নথি পর্যালোচনায়, সম্পদ অর্জনে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ১৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ রেকর্ডপত্রের আলোকে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের তুলনায় ৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা মূল্যের সম্পদ বেশি পাওয়া যায়। যা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়।
এছাড়া তিনি ১২টি ব্যাংক হিসাবে ১০৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকার অস্বাভাবিক আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থের অবৈধ উৎস গোপন করার চেষ্টা করেছেন।
দুদক চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, ফজলে করিম চৌধুরী তার অবৈধ সম্পদ নিজ ভোগ দখলে রেখে এবং সন্দেহজনকভাবে ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ করেছেন। দুদক তার বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী মামলা রুজু করেছে।
এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর, গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত এলাকা থেকে এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীকে আটকের কথা জানায় বিজিবি। সেদিন ‘অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার চেষ্টার’ সময় তাকে আটক করা হয়।
আটকের পর ফজলে করিমকে আখাউড়া থানায় হস্তান্তর করে বিজিবি। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে। সবশেষ ১৯ সেপ্টেম্বর হেলিকপ্টার যোগে তাকে সেখান থেকে চট্টগ্রামে আনা হয়।
আওয়ামী লীগের আমলের পুরো সময় তিনি বিরোধী মতের মানুষসহ পুরো রাউজানবাসীর কাছে ছিলেন ‘মূর্তিমান আতঙ্ক’।
ব্যাপক ক্ষমতাধর ফজলে করিমের গুম-খুন ও বিরোধী মতের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি নিজ দলের বিরুদ্ধ মতের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন করে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা, নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলে এলাকায় রাজত্ব কায়েম করা ও সরকারি জায়গা দখলসহ বিস্তর অভিযোগ আছে।
ফজলে করিমের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, হত্যাচেষ্টা, অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো, অস্ত্রের মুখে জমি লিখিয়ে নেওয়া, ভাঙচুর, দখল ও রাউজানের গহিরার বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় এক ডজনের বেশি মামলা হয়েছে।