শিরোনাম
ঢাকা, ১২ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাইর পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের প্রধান রক্ষাকবচ হলো নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন।
আজ শনিবার ‘অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রসংস্কার, গণহত্যার বিচার এবং জাতীয় নির্বাচনের পদ্ধতি’ বিষয়ে রাজধানীতে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের অতীতের আত্মত্যাগ বিফলে গেছে ভুল নীতি এবং অসুস্থ রাজনীতির কারণে। জুলাই অভ্যুত্থানকেও অতীতের মতো ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। আবু সাঈদ ও মুগ্ধরা স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে। আহতরা এখনো ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। তাই প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার এখনই করতে হবে। পতিত স্বৈরতন্ত্রের সাথে জড়িতদের বিচার করতে হবে। আরেকটা কথা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করার কোন বিকল্প নেই। গত ২৮ জুলাইয়ের জনসমুদ্র পিআর পদ্ধতির পক্ষে গণপ্রত্যাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর জুলাই আকাঙ্ক্ষার ধারাবাহিকতা রক্ষায় আশংকা প্রকাশ করে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে তা নিশ্চিত ও টেকসই করার একমাত্র রক্ষাকবচ হলো পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। সংস্কারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় পরবর্তী সরকারকে বাধ্য করার জন্য পিআর-ই একমাত্র উপায়। এর বাইরে নৈতিক বাধ্যবাধকতা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না। আবার জুলাই সনদের আইনী মর্যাদা নিয়েও মতানৈক্য রয়েছে। ফলে এখন চাঁপে পড়ে সংস্কারে রাজী হলেও পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার সংস্কার বহাল রাখবে কিনা সেই অনিশ্চয়তা এখনই দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে ৪৯ শতাংশ ভোট পাওয়া সত্ত্বেও সংসদে দুই তৃতীয়াংশ আসন লাভ করে সংবিধান কাটা-ছেঁড়া করার একক কর্তৃত্ব পাওয়ার নজীর আমাদের দেশে রয়েছে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় আগামী নির্বাচনেও একই পরিস্থিতির সম্ভাবনা রয়েছে। এমন যদি হয় তাহলে সংস্কারের সকল চেষ্টা ভেস্তে যেতে পারে। তখন একক দলের সিদ্ধান্তে ‘আইন সম্মত’ ভাবেই আমাদের সংস্কার চিন্তার মৃত্যু ঘটবে। অধিকাংশ মানুষের মতামত উপেক্ষা করে সংস্কার চিন্তাকে হত্যার সুযোগ তৈরি করে দেয়ার মতো ‘আইনী বৈধতা’ এনে দিতে পারে বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থা।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর পিআরকেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অন্যতম উপায় আখ্যায়িত করে বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তায় সামান্য পরিবর্তনের ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমূল বদলে যায়।
ইসলামী আন্দোলনের আমির পিআরকে নির্বাচনী কারচুপি রোধের উপায় হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, পিআর পদ্ধতিতে ভোটের অনুপাতের সামান্য পরিবর্তনে বড় কোন পরিবর্তন আসে না। বড় পরিবর্তন করতে বড় ধরনের কারচুপির প্রয়োজন হয়। ছোট কারচুপি যত সহজে করা যায় বড় কারচুপি তত সহজে করা যায় না বলে সামগ্রিক কারচুপির প্রবণতাই কমে যায়। আবার বিদ্যমান পদ্ধতিতে স্থানীয় ফলাফলের ওপরে এলাকার প্রার্থীর ভাগ্য নির্ভর করে।
পীর সাহেব চরমোনাই পিআরকে মাদার অফ অল রিফর্ম আখ্যা দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় জুলাইয়ের চেতনা, আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন রক্ষায় পিআর-ই হলো একমাত্র সমাধান। পিআর-ই হলো “মাদার অফ অল রিফর্ম।”
গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মাদ গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান মান্না, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ডক্টর আহমাদ আব্দুল কাদের, ঢাবি প্রফেসর এ কে এম ইউসুফ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহাম্মদ শহীদুল হক, জনতা পার্টি বাংলাদেশের গোলাম সারোয়ার মিলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহবায়ক জাবেদ রাসেল, বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ফয়জুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শেখ মো. ইউসুফ, সহকারী অধ্যাপক মো. আরিফুল ইসলাম অপু, অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য হাবিবুর রহমান রিজু, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, ফেডারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির ড. এ. আরমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট শিশির মনির, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, ইসলামি ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী ও নাগরিক কোয়ালিশনের ফাহিম মাসরুর।
অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মাদ গোলাম পরওয়ার তার বলেন, সংস্কার ছাড়া কোন নির্বাচন হবে না। এই জুলাই মাসের মধ্যেই আমরা জুলাই ডিক্লেয়ারেশন চাই। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল পিআরকে মূখ্য করে তোলায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীরকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চাই তারাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে।’