বাসস
  ৩১ মে ২০২৫, ২২:১৪

সংস্কৃতিই একটি জাতির পরিচয় : কাদের গনি চৌধুরী

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ৩১ মে, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, সংস্কৃতিই একটি জাতির পরিচয়। সংস্কৃতিই একটি জাতিসত্তার অস্তিত্বের কারণ।

আজ শনিবার টেলিভিশন রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে (ট্র্যাব) আয়োজিত ট্র্যাব মিডিয়া আইকনিক অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

ট্র্যাব সভাপতি কাদের মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুমা রহমান তানি, ডক্টর জাহাঙ্গীর আলম রুস্তম, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির (বাচসাস)সভাপতি কামরুল হাসান দর্পণ, সানাউল হক বাবুল, এরফানুল হক নাহিদ, আবুল কালাম আজাদ, সুহৃদ জাহাঙ্গীর, দুলাল খান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তানিয়া আফরিন।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, কোনো সভ্য সমাজে প্রচলিত রীতিনীতি হচ্ছে সংস্কৃতি। সংস্কৃতি মানুষের শুভ বোধ ও সুচিন্তার বিকাশের জন্য। যেনতেন প্রকারে আনন্দ বিনোদনের জন্য নয়। অসংযত আমোদ ফুর্তিকে তাই সংস্কৃতি বলা যায় না। তাকে আমরা বলবো অপসংস্কৃতি।

তিনি বলেন, জীবন ও সংস্কৃতি একে অপরের পরিপূরক। সংস্কৃতি ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। কোনো ব্যক্তি, কোনো সমাজ কিংবা কোনো জনগোষ্ঠীই তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে অস্বীকার করতে পারে না।

বিএফইউজে মহাসচিব বলেন, সংস্কৃতি যেখানে মানুষকে সুন্দরের পথ দেখায়, সেখানে অপসংস্কৃতি মানুষকে অসুন্দর করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। অপসংস্কৃতি স্থায়ী নয় তা ক্ষণিকের জন্য উত্তেজক। কোনো জাতি বা দেশের ভেতর একবার অপসংস্কৃতি ঢুকলে তা অপসারণ করা খুবই কঠিন। অপসংস্কৃতি বিবেকের দরজায় তালা লাগায়। মানুষকে তার মা, মাটি ও দেশ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, সংস্কৃতির কাজ জীবনকে বিকশিত করা, চিত্তকে আনন্দিত করা, মানুষকে প্রেমবান করা। আর অপসংস্কৃতি মানুষের জীবনকে কলুষময় করে। চেতনাকে নষ্ট করে। জীবনকে নাশ করে। স্থায়ীভাবে মনোমুগ্ধকর, আকর্ষণীয়, মোহনীয় ও হৃদয়গ্রাহী হলেও এ থেকে কোন ফল পাওয়া যায় না। অপসংস্কৃতি মূলত মানুষকে খারাপ কাজের দিকে টেনে নেয়।


ম্যাথিউ আর্নল্ডের একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করে কাদের গনি চৌধুরী বলেন আর্নল্ডের মতে, ‘সংস্কৃতি হচ্ছে খাঁটি হওয়া বা মার্জিত হওয়া বা রুচিশীল হওয়া।’ মোতাহের হোসেন চৌধুরি বলেছেন, ‘সংস্কৃতি মানে বাঁচা, সুন্দরভাবে বাঁচা।’ আর ড. আহমদ শরীফ সংস্কৃতির  সংজ্ঞা দিতে গিয়ে লিখেছেন, ‘পরিশীলিত ও পরিশ্রুতি জীবন চেতনাই সংস্কৃতি।’ এই ধারণা তিনিও পোষণ করেন বলে উল্লেখ করেন বিএফইউজে মহাসচিব।

তিনি বলেন, আমাদের অনেকের ধারণা বিদেশি সংস্কৃতি মানেই অপসংস্কৃতি। এটা ঠিক নয়। যে সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে বিপথে পরিচালিত করে সেটাই হলো অপসংস্কৃতি। সেটা দেশি বা বিদেশি হোক। কোনো সংস্কৃতি যখন ভালো কার্যকলাপে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এবং নৈতিকতা বিবর্জিত হয় তখন তা অপসংস্কৃতি বলে চিহ্নিত হয়। এ অপসংস্কৃতির প্রভাবে জাতি তার নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে এবং তরুণ সমাজ হয় বিপথগামী।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, অপসংস্কৃতি আজ সংস্কৃতির আসন দখল করে নিয়েছে। আজকাল অনেক তরুণকে মেয়েদের মতো হাতে বাল বা পিতলের কড়া এবং এক কানে দুল পড়তে দেখা যায়। আবার মেয়েদের অনেক সময় ছেলেদের মত শার্ট, টাইট জিন্স-প্যান্ট, চুলের বয়কাট। ছেলেরা ফ্যাশন করে ছেঁড়া প্যান্ট পরে। এসব আনন্দ হলেও এটা কিন্তু অপসংস্কৃতির নামান্তর। আমাদের তরুণ সমাজ আজ অপসংস্কৃতির স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে জীবন-যাবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।

বিএফইউজে মহাসচিব বলেন, আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করি তা যদি দেশকে ভালোবাসতে না শেখায়, জীবনকে প্রেমময় না করে, মানুষের প্রতি দরদি না করে, তাহলে সে শিক্ষা হলো অপশিক্ষা আর অপশিক্ষার পথ ধরে অপসংস্কৃতি আমাদের সমাজে শিকড় গাড়ে।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন,আমাদের রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। অথচ আমাদের এই নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আজ বিদেশি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ভেতর দিয়ে একটা দেশের নিজস্ব ইতিহাস, মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের ধরন উল্টাপাল্টা করে দেওয়া হয়। অস্পষ্ট করে তোলা হয় তার আত্মপরিচয়।