শিরোনাম
ঢাকা, ২৫ মে, ২০২৫ (বাসস): যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে সহযোগিতা জোরদারে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ‘ব্রিজ টু বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম যাত্রা শুরু করেছে।
শনিবার বিকেলে লন্ডনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অক্সফাম ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের সদস্যদের উদ্যোগে গঠিত এ প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারক, কূটনীতিক, প্রবাসী নেতা, সংসদ সদস্য, শিক্ষাবিদ, উন্নয়নকর্মী ও দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্রিটিশ-বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন।
রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম বলেন, আমাদের প্রবাসীরা কেবল দেশে টাকা পাঠাননি, তারা দেশকে সংকটে আগলে রেখেছেন, গড়েছেন পরিচয়, সৃষ্টি করেছেন সম্ভাবনা।
তিনি বলেন, ‘ব্রিজ টু বাংলাদেশ’ এখন সেই প্রবাসীদের দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে সক্রিয় অংশীদার হতে ডাক দিচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি বাংলাদেশি ডায়াস্পোরা বা প্রবাসী বসবাস করছেন, যারা রাজনীতি, ব্যবসা, প্রযুক্তি এবং শিক্ষায় ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সম্প্রদায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তাদের একটি বড় অংশ লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস, বার্মিংহাম ও লুটন শহরে বাস করেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই প্রবাসীরা বছরে দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠান। যুক্তরাষ্ট্রের পর যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রেরণকারী দেশ।
‘ব্রিজ টু বাংলাদেশ’-এর লক্ষ্য হলো- প্রবাসীদের সম্পদ, বিনিয়োগ, দক্ষতা, যোগাযোগ ও বাংলাদেশের জাতীয় অগ্রাধিকারমূলক বিষয়গুলোতে (যেমন- জলবায়ু সহনশীলতা, জেন্ডার সমতা, মানবিক সহায়তা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন) বৈশ্বিক অ্যাডভোকেসির চ্যানেল অন্বেষণ করা।
বাংলাদেশে নিযুক্ত অক্সফাম কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে বলেন, ‘এটা শুধু দেশের প্রতি স্মৃতিকাতরতা নয়, বরং এটা জাতি গঠনের প্রত্যয়’।
তিনি বলেন, প্রবাসীরা কেবল অর্থ নয়, আইডিয়া, নেটওয়ার্ক, এমনকি প্রভাবও রাখতে পারেন। আমরা সেই সম্ভাবনাকে উন্মোচন করতে চাই এবং এটিকে টেকসই প্রভাবে রূপান্তর করতে চাই।
অক্সফাম কর্মকর্তা ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রবাসীদের সম্পদের পূর্ণ ব্যবহারে বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী কাঠামোগত অভাব রয়েছে। এই প্ল্যাটফর্ম একটি বহুমাত্রিক অংশীদারিত্ব কাঠামো গড়ার মাধ্যমে সেই শূন্যতা পূরণে কাজ করবে।
যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের সদস্য ব্যারোনেস পোলা উদ্দিন বলেন, এই উদ্যোগ একটি সময়োপযোগী কাঠামো। প্রবাসীরা বাংলাদেশের বাইরে নয়, তারা বাংলাদেশেরই অংশ।
লন্ডনের সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাওমি হোসেন বলেন, গৌরবহীন উন্নয়ন সফল হতে পারে না। প্রবাসী অন্তর্ভুক্তিতে অবশ্যই সমতা ও সম্মানের মূল্যবোধ প্রতিফলিত হতে হবে।
অক্সফাম জিবি’র প্রধান নির্বাহী হালিমা বেগম বলেন, গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের সংগ্রাম ও সাফল্যের সময়ে অক্সফাম পাশে ছিল। আজ আমরা গর্বিত, প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশে দাঁড়াতে পেরে। ভৌগোলিকভাবে দূরে থাকা সত্ত্বেও আমরা বাংলাদেশকে হৃদয়ে ধারণ করি।
অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের দেশের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা নিতে আহ্বান জানানো হয়। বিশেষ করে জ্ঞান ও দক্ষতা বিনিময়, বিনিয়োগ সংযোগ, তরুণ নেতৃত্ব, সাংস্কৃতিক, কূটনীতি ও বৈশ্বিক প্রচারণার মাধ্যমে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়।
আয়োজকরা যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী সবাইকে নতুন এই উদ্যোগে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অক্সফাম জিবি’র প্যাট্রন আজিজ-উর-রহমান। প্ল্যাটফর্মের বিষয়ে প্রেজেন্টেশন দেন অক্সফাম বাংলাদেশের ইনফ্লুয়েন্সিং, কমিউনিকেশনস, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড মিডিয়া প্রধান মো. শরিফুল ইসলাম।