শিরোনাম
ঢাকা, ১৫ মে, ২০২৫ (বাসস): ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যর নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সেইসঙ্গে, অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনায় গভীর শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে নেটওয়ার্কটি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের আজ এ সংক্রান্ত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে শাহবাগ থানা পুলিশ। আমরা অতি দ্রুত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানাই।
এতে আরো বলা হয়েছে, ‘আমরা আরও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনাকে ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষক নেটওয়ার্কের ওপর দায় চাপানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক ঢাবি ক্যাম্পাসে চলাচলের রাস্তা বন্ধের বিরোধিতা করায় প্রশাসন নাকি তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি, আর তার ফলেই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে এবং একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এই বক্তব্য সম্পূর্ণ অসার এবং অযৌক্তিক।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে তা করতে হবে অংশীজনদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে। শিক্ষক নেটওয়ার্কের এই রকম যুক্তিসংগত অবস্থান আমরা সরাসরি প্রশাসনকে পরামর্শ হিসেবে জমা দেই। প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত সংবাদ মাধ্যমে জানানো হবে।
প্রক্টর অফিসের সিদ্ধান্তেই যানবাহন চলাচল ও রাত দশটার পর ক্যাম্পাস এবং উদ্যানের মন্দির গেট খোলা থাকছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ভূমিকা নেই, কাজেই এধরনের প্রচারণা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং দুরভিসন্ধিমূলক। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নেটওয়ার্ক-এর শিক্ষকেরা সবসময়ই শিক্ষার্থীবান্ধব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ সমুন্নত রাখার পক্ষপাতি। জুলাই আন্দোলনসহ বিগত স্বৈরাচারী সময়ে নিপীড়িত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পাশে শিক্ষক নেটওয়ার্কের শিক্ষকেরাই থাকতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণ নিয়ে নেটওয়ার্কই বরাবর ভেবে এসেছে ও সে অনুযায়ী কাজ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই নির্মম হত্যাকাণ্ডটি বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর এক গভীর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে দাবি করছি, এই অপরাধের দ্রুত, স্বচ্ছ ও কার্যকর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ করেছি যে গত কয়েক মাসে সংগঠিত বেশ কয়েকটি অপরাধ যা ক্যাম্পাসের ভেতরে, ক্যাম্পাসের মানুষের দ্বারা সংঘঠিত হয়েছে, তার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার এবং বিচার কাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান হয় নি।’
ক্যাম্পাসের রাস্তা বন্ধ করে এ ঘটনাগুলো আটকানো যেতো কিনা এ প্রশ্ন তুলে বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, এর আগে দেখা গেছে প্রক্টরিয়াল টিমের গোচরেই জুলাইয়ের আন্দোলনের সময়ে আঁকা স্বৈরাচারের গ্রাফিতি মুছে ফেলা হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত, দুঃখজনক ঘটনা আর না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে কার্যকর ও যুক্তিসংগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিবৃতিতে শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ, দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে দ্রুত আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা গ্রহণ, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে কোনও সিদ্ধান্তে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে অংশীজনের মতামত নেয়া, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যে সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুলিং এবং ঘৃণা- বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে সেসব মাধ্যম বা প্ল্যাটফর্ম গুলোর বিরুদ্ধে অতিসত্বর আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ ও উক্ত বিদ্বেষমূলক কন্টেন্ট সরিয়ে নেয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।