বাসস
  ০৮ মে ২০২৫, ২১:৪১

জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে ২ বেরোবি কর্মকর্তা গ্রেফতার

রংপুর, ৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : জুলাই মাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, আবু সাঈদকে হত্যা ও আরও অনেককে আহত করার ঘটনায় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)-এর দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের তাজহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম আজ বাসস-কে বলেন, ‘গ্রেফতারকৃত কর্মকর্তারা হলেন- প্রক্টর অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান রাসেল ও ডেসপ্যাচ বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মোক্তারুল ইসলাম।’

বুধবার বিকেলে বেরোবি প্রশাসন মামলা দায়েরের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে মোক্তারুল ইসলামকে এবং আজ ভোর ২টায় নগরীর গণেশপুর এলাকার নিজ বাসা থেকে রাফিউল হাসান রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়।

ওসি আরও বলেন, আমরা গ্রেফতারকৃত দুই ব্যক্তিকে রংপুর আদালতে হাজির করেছি। সেখান থেকে আজ তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে, বেরোবি রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন অর রশিদ জুলাইয়ের বৈষম্য-বিরোধী আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে তাজহাট মেট্রোপলিটন থানায় ৭১ জনের নামে ও ৮০-১০০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১১, ১৫ ও ১৬ জুলাই দুপুর ২টায় বেরোবি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে ও সংলগ্ন মহাসড়কে বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিল।

এরপর নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা, কর্মী ও সন্ত্রাসীরা লাঠি, লোহার রড, বর্শা, ‘বেকি’, ‘রামদা’, ‘কিরিচ’, ইটপাটকেল, হাতবোমা, আগ্নেয়াস্ত্র ও পিস্তল নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে।

এছাড়াও, পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবু সাঈদ নিহত ও আরও অনেক ছাত্র আহত হন।

অভিযুক্তদের তালিকায় আটজন পুলিশ কর্মকর্তা, ১৩ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, দুই জন শিক্ষক, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ৩৬ জন নেতা-কর্মী এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ১২ জন স্থানীয় নেতা-কর্মী রয়েছে।

এছাড়াও এই মামলায় ৮০-১০০ জন অজ্ঞাত আসামি রয়েছে।

মামলায় অভিযুক্ত আট পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আল ইমরান হোসেন ও মো. আরিফুজ্জামান, তাজহাট মেট্রোপলিটন থানার ওসি রবিউল ইসলাম, বেরোবি  পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ রায়, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও আমির আলী, উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবু মারুফ হোসেন এবং অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শাহানূর আলম পাটোয়ারী। 

এই মামলায় অভিযুক্ত বেরোবি শিক্ষকরা হলেন- সহকারী অধ্যাপক (গণিত বিভাগ) মশিউর রহমান ও সহযোগী অধ্যাপক (জনপ্রশাসন বিভাগ) আসাদুজ্জামান মণ্ডল আসাদ।

অভিযুক্ত বেরোবি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা হলেন- সহকারী রেজিস্ট্রার হাফিজুর রহমান তুফান, কর্মচারী আমির হোসেন, সেকশন অফিসার মনিরুজ্জামান (পলাশ), ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা শাখা), তৌহিদুল ইসলাম (জনি), সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রক্টর অফিস) রাফিউল হাসান রাসেল, কর্মচারী নূর নবী ও মো. নূর আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার মোক্তারুল ইসলাম, সেমিনার সহকারী আশিকুন্নাহার টুকটুকি, ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোসা. মাহবুবা আক্তার, কর্মচারী মাহবুবর রহমান (বাবু) ও মো. আপেল এবং সুরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ। 

অভিযুক্ত ৩৬ জন বেরোবি ছাত্রলীগ নেতা ও কর্মীর মধ্যে রয়েছে সংগঠনটির সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামীম, যুগ্ম সম্পাদক মাসুদুল হাসান ও আরো ৩৪ জন নেতা-কর্মী।