বাসস
  ০৬ মে ২০২৫, ১৮:১৫

নতুন উদ্ভাবিত সেচ ব্যবস্থাপনায় চালে আর্সেনিক মাত্রা কমবে

ছবি : বাসস

বাকৃবি (ময়মনসিংহ), ৬ মে, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষকের উদ্ভাবিত ‘তিনদিন ভেজানো ও চারদিন শুকনো (৩এফ৪ডি)’ পদ্ধতি ধানের বাম্পার উৎপাদন নিশ্চিত করার পাশাপাশি আর্সেনিক মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করবে।

তারা আশা করছেন, এই ৩এফ৪ডি পদ্ধতি ধানে অজৈব আর্সেনিকের মাত্রা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনবে। 
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কারিগরি সহায়তায় ‘নিরাপদ ও পুষ্টিকর ধান উৎপাদনের জন্য প্রজনন ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়। প্রকল্পের আওতায় মঙ্গলবার বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান মাঠ গবেষণাগারে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে একটি মাঠ দিবস আয়োজন করা হয়। এসময় প্রধান গবেষক ও বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

মাঠ দিবসে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম ছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. সালমা লাইজু, বাকৃবির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ উদ্দীন ভূঞা, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু জোফার মো. মোসলেহ উদ্দিন, অধ্যাপক ড. মো. এনামুল হক, উপ-প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন সুমন, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, জাইকা বাংলাদেশের প্রকল্প সমন্বয়কারী রিউচি কাটসুকি এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের পিএইচডি ফেলো মো. সোহেল রানা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি শিক্ষার্থী, জাইকার প্রতিনিধিবৃন্দ এবং স্থানীয় কৃষকেরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অনেক এলাকার ভূগর্ভস্থ পানি আর্সেনিক দ্বারা দূষিত। অবিরাম জলাবদ্ধতার সময় ধান চাষ করলে চালের মধ্যে এই বিষাক্ত উপাদানের মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যেতে পারে। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে, ধানের শীষ গঠনের সময় তিনদিন ভিজানো এবং চারদিন শুকানো (৩এফ৪ডি) সেচ পদ্ধতি কার্যকর হলেও, নিষ্কাশন সুবিধাবিহীন ক্ষেতে এটির কার্যকারিতা স্পষ্ট ছিল না। এই গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল ৩এফ৪ডি পদ্ধতিকে এমনভাবে উন্নয়ন করা, যেন নিষ্কাশন সুবিধা ছাড়াই এই পদ্ধতি প্রয়োগযোগ্য হয় এবং এর প্রভাবে চালের অজৈব আর্সেনিকের মাত্রা ও সেচের পানির চাহিদা হ্রাস পায় কিনা তা যাচাই করা। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশে টানা তিনটি বোরো মৌসুমে গবেষকরা ৩এফ৪ডি, ৩এফ৭ডি (তিনদিন জলাবদ্ধতা, সাতদিন নিষ্কাশন) মধ্য-মৌসুমি নিষ্কাশনসহ এবং মধ্য-মৌসুমি নিষ্কাশনবিহীন পদ্ধতিতে আর্সেনিকের প্রভাব পরীক্ষা করেন। এছাড়া, এসব পদ্ধতির ফলাফল তুলনা করা হয় বিকল্প জলাবদ্ধ ও নিষ্কাশন (এডাব্লিউডি) ও প্রচলিত অবিরাম জলাবদ্ধতার সঙ্গে।

ড. রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ে সংগৃহীত তথ্যে দেখা গেছে, ৩এফ৪ডি পদ্ধতির  চারদিনের নিষ্কাশনের সময়ে মাটির আর্দ্রতা প্রায় পাঁচ শতাংশ হ্রাস পায় এবং রিডক্স পোটেনশিয়াল (বৈদ্যুতিক পরিমাপ) বেড়ে ১৫০-৫০০ মিলিভোল্ট পর্যন্ত পৌঁছে। এর ফলে একটি অক্সিডেটিভ পরিবেশ (অক্সিজেনের প্রচুর উপস্থিতি) সৃষ্টি হয় এবং এতে গাছের আর্সেনিক শোষণ কমে যায়। ৩এফ৪ডি পদ্ধতিতে উৎপাদিত চালে অজৈব আর্সেনিকের মাত্রা অবিরাম জলাবদ্ধতার তুলনায় সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায় এবং ধানের ফলনও অপরিবর্তিত থাকে। পাশাপাশি, এই পদ্ধতির মাধ্যমে সেচের জন্য ব্যবহৃত পানি ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত সাশ্রয় সম্ভব বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণার সফলতার বিষয়ে তিনি বলেন, কৃষকেরা ৩এফ৪ডি পদ্ধতি ব্যবহার করে ফলন ব্যাহত না করেই নিরাপদ চাল উৎপাদন করতে পারেন। এই যুগান্তকারী আবিষ্কার শুধু আর্সেনিকের ঝুঁকি কমাতেই নয়, বরং সেচের পানির চাহিদাও ব্যাপকভাবে হ্রাস করে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানিদূষণপ্রবণ অঞ্চলে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও টেকসই ধান উৎপাদনের এক বাস্তবভিত্তিক সমাধান হিসেবে এটি বিবেচিত হতে পারে।