বাসস
  ০৯ জুলাই ২০২৩, ১৮:৫১

ক্যাশলেস পঞ্চগড়, স্মার্ট বাংলাদেশের আরেকটি ধাপ 

॥ মো. মাজহারুল আনোয়ার খান ॥
পঞ্চগড়, ৯ জুলাই, ২০২৩ (বাসস) : পঞ্চগড় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ এখন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্যাশলেস (নগদবিহীন) সেবা উপভোগ করছে, প্রায় ১৫ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগের ফলেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে, এটি এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ারও একটি পদক্ষেপ।
একটি প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাস করে এ ধরনের সেবা পাওয়া, ২০০৯ সালের আগে কল্পনাও করা যেত না। কিন্তু এখন এটি বাস্তবতা। কারণ মানুষ এখন কোনো ঝামেলা ছাড়াই বাড়িতে বসে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২০টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা পাচ্ছেন ।
 পঞ্চগড় সদর ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স পরিদর্শন করার সময় এই সেবার একজন সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল ফারুক বাসসকে বলেন, শুধুমাত্র এনআইডি নম্বর দিয়েই তিনি তার প্রয়োজনীয় ট্রেড লাইসেন্স পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এই নগদবিহীন সিস্টেমটি যে কোনও ব্যক্তিকে কেবল সিস্টেমে তার এনআইডি নম্বর ইনপুট করে কাক্সিক্ষত নথি পাওয়ার সুবিধা দিচ্ছে। কারণ, কর্মকর্তারা সহজেই ব্যক্তির সমস্ত প্রাসঙ্গিক তথ্য যাচাই করে, সঠিক ব্যক্তিকে সনাক্ত করতে পারেন।’
ফারুক আরো জানান, ওই কর্মকর্তা তার এনআইডি থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য মিলিয়ে মাত্র ২-৩ মিনিটের মধ্যেই তাকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছেন।
সুফলভোগী এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা সময় ও অর্থের অপচয় থেকে রক্ষা পেয়েছি।’
এই ‘পরিবর্তনের গল্প’ খুব বেশি কিছু নয়, বরং এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশের বাস্তবতা, যা গত সাড়ে ১৪ বছরে দেশে প্রদর্শিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগের সুযোগ নিয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন সেবা প্রযুক্তিনির্ভর করার ব্যবস্থা নিয়েছে। ডিজিটাল লেনদেন এখন পরিষেবা প্রদানের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে- যা মানসম্পন্ন পরিষেবা প্রদানের পাশাপাশি সময়, খরচ ও দূর যাত্রার অসুবিধা কমিয়েছে।
আরেকজন সুবিধাভোগী বাসসকে বলেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য ও এনআইডি নম্বর পূরণ করে তিনি তার কাক্সিক্ষত নথি পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, এমনকি এখন তিনি তার ঘরে বসে নথি পেতে মোবাইল আর্থিক পরিষেবা (এমএফএস) এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগের কারণে এখন এই সব প্রয়োজনীয় সেবা দ্রুত এবং এমএফএস-ও সহজতর হয়েছে। এর ফলে, সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে, জন-ভোগান্তি লাঘব হয়েছে এবং সহজের কাক্সিক্ষত সেবাগুলো পাওয়া যাচ্ছে।
এক নারী সুফলভোগী বলেন, তিনি এই ইউপি সেবার মাধ্যমে দেড় বছর ধরে তার মাতৃত্বকালীন ভাতা গ্রহণ করছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আগে, এর জন্য আমাকে বিভিন্ন স্থানে যেতে হতো। কিন্তু এখন আমি শুধু আমার আঙ্গুলের ছাপ দিয়েই খুব সহজে ইউপি সেন্টার থেকে আমার ভাতা তুলতে পারি।’
নাগরিকত্ব সনদ গ্রহণের জন্য পঞ্চগড় সদর ইউনিয়ন পরিষদে আসা হালিমা বেগম বলেন, আগে এটা এতো সহজ ছিল না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি সনদ পাওয়ার পর, সেখানে স্বাক্ষর পেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। সবাইকে সশরীরে গিয়ে তার সনদ সংগ্রহ করতে হতো। কিন্তু এখন, শুধুমাত্র এনআইডি কার্ডের নম্বর দিলেই সনদটি ইস্যু করা হয়। এই পদ্ধতিটি আমার কাছে খুব ভাল লেগেছে।’
তেঁতুলিয়ার তিরনৈহাট ইউনিয়নে এই সেবাটি শুরু হলে, ঢাকার পর পঞ্চগড় এই ক্যাশলেস যুগে প্রবেশ করে। এর মাধ্যমে, মারগিনাল উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদকে স্মার্ট বাংলাদেশে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
পরে অন্যান্য উপজেলা পরিষদেও ক্যাশলেস সেবা চালু করা হয়।
এর মাধ্যমে ২০টি সেবা খুব সহজেই গ্রহণ করা যায়। মানুষ এখন ঘরে বসেই uniontax.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে এই সেবাগুলো পেতে পারেন।
এখন ভোগান্তি ছাড়াই সেবাগুলো পাওয়ার মানুষ খুবই খুশী। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা অনলাইনে এমএফএস-এর মাধ্যমে ক্যাশ ছাড়াই সেবা প্রদান করতে পারায় তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
পঞ্চগড়ের জেলাপ্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, uniontax.gov.bd I pouroseba.gov.bd  প্লাটফরম ব্যবহার করে ৪৩টি উপজেলা পরিষদ ও তিনটি পৌরসভার ৭০ হাজারের বেশি মানুষ এই সেবা গ্রহণ করছেন।  
ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের এক উদ্যোক্তা বলেন, ২০১৯-২০ অর্থ-বছরে তেঁতুলিয়া উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে এই অনলাইন সেবাটি চালু হয়। কিন্তু চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি, তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনৈহাট উপজেলা পরিষদে সক্রিয়ভাবে এই সেবাটি চালু হয়। শুধু পঞ্চগড়ের ৪৩টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভায় সেবাটি যুক্ত হয়েছে। এছাড়াও উপজেলাটির সাতটি ইউনিয়নেও সেবাটি চালু হয়েছে।
প্ল্যাটফর্মটি চালু করার আগে, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে যে কোনও ব্যক্তিকে গড়ে তিনবার ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হতো এতে ৭-১৫ দিন লেগে যেত এবং বাড়তি টাকারও প্রয়োজন হতো। কিন্তু এখন ডিজিটাল ও ক্যাশলেস সিস্টেমে সুফলভোগীকে আর সশরীরে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হয় না।
জহুরুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল ইউনিয়ন ক্যাশলেস সার্ভিস চালু হওয়ার পর ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয়েতে সেবার মূল্য পরিশোধের কারণে রাজস্ব সরাসরি ইউপির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে। ফলে, ইউপির টাকায় অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি। 
তিনি বলেন, এই ক্যাশলেস সেবার মাধ্যমে স্থানীয় সরকার পদ্ধতি শক্তিশালী হয়েছে এবং এটা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নির্মাণের পথে আরো এক পদক্ষেপ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়