বাসস
  ২২ জুন ২০২২, ০৯:৩৭
আপডেট  : ২২ জুন ২০২২, ১৬:৪০

স্বপ্নের পদ্মা সেতু: চুয়াডাঙ্গাসহ দেশবাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সারাজীবন স্মরণ রাখবে

// রাশেদিন আমিন //
চুয়াডাঙ্গা, ২২ জুন, ২০২২ (বাসস): পদ্মা সেতুকে ঘিরে চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলার মানুষের মধ্যে বইছে আনন্দের হিল্লোল। ২৫ জুন উদ্বোধন হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। শত বাঁধা পেরিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ-বিদেশের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে গর্বের পদ্মা সেতু মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে। বাংলার মানুষের স্বপ্ন পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে চুয়াডাঙ্গাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ সারাজীবন স্মরণ রাখবে। 
যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে আমূল পরিবর্তন। চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে ছুটে যেতে পারবেন স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে। যখন ইচ্ছা তখন যেতে পারবে। সেতু পাড়ি দিলেই ঢাকা হাতছানি দেবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় চুয়াডাঙ্গার দৃশ্যপট বদলে যাবে অল্প দিনে। দুরপাল্লার পরিবহন, ট্রাক, মাইক্রো, এ্যাম্বুলেন্স, মোটরসাইকেল, কার, জিপসহ সব ধরনের যানবহন পদ্মা ব্রিজের টোল দিয়ে খুব সহজে যাতায়াত করতে পারবে। কৃষি, ভ্রমণ, পণ্য ও কাঁচামাল আনা-নেয়া, চিকিৎসা, অফিসসহ সকল কার্মকান্ড এক সুতোয় গেঁথে দিয়েছে পদ্মা সেতু। সব পর্যায়ের মানুষদের চারম অনিশ্চিয়তার মধ্যে দিয়ে চলতে হবে না। এক দিকে সময় বাঁচবে, অন্য দিকে কাজ ও অর্থ সাশ্রয় হবে। মানুষ নির্দিষ্ট গন্তব্যে কাঙ্খিত সময়ে পৌছে যাবে। আবার কাজ সেরে আপন ঠিকানায় ফিরে আসবে। পরিবহন মালিকদের সুবিধা নিশ্চিত হবে। পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্ট চালক, হেলপার, সুপারভাইজার ও সুবিধাভোগিরা বেশি লাভবান হবেন। 
কৃষি নির্ভর জেলায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য খুব সহজে দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিবহনের মাধ্যমে নিতে পারবে। সড়কে বিড়ম্বনা লাঘব হবে। রাতে জেলার সকল স্থান থেকে শাকসবজি, ফলমূলসহ কৃষি পণ্য ভোরে পৌঁছে দিতে পারবে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দাম ভাল পাবেন কৃষকরা। ফেরি ঘাটে অপেক্ষার অবসান হচ্ছে পদ্মা সেতেুর কল্যাণে। ঘাটে জ্যাম থাকায় মালবাহী ট্রাক পার হতে দিন পার হতো। যার ফলে কৃষি পণ্য পঁচে নষ্ট হতো ও ভোরে আড়তে যেতে না পারায় দাম ভাল হতোনা।
চিকিৎসা কাজে যেতেও নানা ভোগান্তি পোহাতে হতো। সড়কে জ্যাম ও ফেরি বিড়ম্বনা রোগি এবং স্বজনদের অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হতো। পদ্মা সেতু তাদের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠবে। কয়েক ঘন্টায় পৌঁছে যাবে ঢাকায়।
চুয়াডাঙ্গার দিননাথপুর গ্রামের কৃষক হারিছ চৌধুরী জানান, চুয়াডাঙ্গা কৃষি নির্ভর জেলা। অনেক রকমের চাষ রয়েছে। উৎপাদিত পণ্য ট্রাক যোগে ঢাকায় নিতে সমস্যা হতো। ভোরে গাড়ি ঢাকার বাজারে যেতে না পারলে কৃষি পণ্য রেখে চলে আসতে হয় আড়তদারদের কাছে। এই কারনে দাম কম পাওয়া যেতো।
চুয়াডাঙ্গা নিউ মার্কেটের কসমেটিক ব্যবসায়ী জুয়েল বলেন,ঈদসহ অন্য উৎসবে কসমেটিকের চাহিদা বেশি থাকে। চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকায় পরিবহনে যাওয়ার সময় ফেরি ঘাটে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। যার ফলে ব্যবসার ক্ষতি  হতো। কাস্টমারদের মালামাল ডেলিভারি দেয়া হতোনা। পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় যেতে কোন বাড়তি সময় লাগবেনা। পদ্মা সেতু আমাদের স্বপ্ন পূরণ করছে।
বাস চালক সাধন আলী বলেন, বাস চালানো কাজ শিখে অন্য কোন কাজ করতে পারিনা। তাই বাধ্য হয়ে বাস চালাতে হয়। ঈদ, বর্ষাকাল, শীতকাল ও ছুটির দিনে সড়কে বেশি গাড়ির চাপ থাকে। সড়কে যেমন জ্যাম, ঠিক ফেরি পার হতে ঘাটে গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা যায় কয়েক কিলোমিটার জুড়ে। একদিনের হাজিরায় দুই দিন থাকতে হয় সড়কে। যাত্রীদের জ্যামের কারণে সমস্যা হয়।
পরিবহন শ্রমিক নেতা রিপন মন্ডল জানান, যখন আমি চালক ছিলাম তখন নিয়মিত গাড়ি নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতাম। রাস্তায় চললে পথ শেষ হতোনা। বাড়ি থেকে বের হলে এক সপ্তাহ পার হয়ে যেতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের কষ্টের কথা বুঝে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হল। শ্রমিকদের কষ্ট দূর হবে। গাড়ির কাজ শেষে বাড়ি ফিরে পরিবারের সাথে সময় দিতে পারবো।
চুয়াডাঙ্গার পরিবহন মালিক এনামুল হক লোটাস জানান, এক সময় ট্রাক ছিল অনেক। ভাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় হতো। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকায় লাভ তেমন একটা হতোনা। কারণ ফেরি ঘাটের বিড়ম্বনা বেশি ভোগাতো। দূরপাল্লার পরিবহন ব্যবসায় এসেও একই দুর্গতি। ফেরি ঘাটের যন্ত্রণা পরিবহন খাতে বড় সমস্যা। বাসের সিডিউল বিপর্যয় ও নির্ধারিত সময়ে পৌঁছানো সম্ভব হতোনা। পদ্মা সেতু দিয়ে গাড়ি চালাতে পারলে সকল সমস্যার সমাধান খুব সহজে হবে। লাভ হবে ও যাত্রী সেবার মান কয়েক গুণ বাড়বে। 
চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস-ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, কয়েক ঘন্টায় পদ্মা সেতু দিয়ে যাত্রিবাহী বাস ও ট্রাক ঝামেলা ছাড়াই ঢাকা পৌঁছে যাবে। ভাড়া নির্ধারিত হলেই সেভাবে যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হবে। ফেরি ঘাট দিয়ে না যেয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে যাওয়া খুব সহজ হবে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়