বাসস
  ২২ জুলাই ২০২১, ০৯:২৬
আপডেট  : ২২ জুলাই ২০২১, ১০:৫৭

বরিশালে বেকার যুবরা ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রশিক্ষণ নিয়ে হচ্ছেন স্বাবলম্বী


॥ শুভব্রত দত্ত ॥
বরিশাল, ২২ জুলাই, ২০২১ (বাসস) : জেলার বেকার যুবক ও যুব নারীরা নগরীর শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার থেকে ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রশিক্ষণ নিয়ে হচ্ছেন স্বাবলম্বী।
শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার থেকে জেলার বহু বেকার যুবক ও যুব নারীরা কম্পিউারের উপর বিভিন্ন কোর্সে ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রশিক্ষণ শেষে নেমে পড়েছেন আউটর্সোসিং পেশায়। এসব শিক্ষার্থীরা স্বল্প মেয়াদে গ্রাফিক্স, এ্যনিমেশন, ওয়েব ডিজাইন, ডাটা এন্ট্রির মতো ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করে বর্তমানে হয়েছেন স্বাবলম্বী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একটি ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার সাথে ইন্টারনেট সংযোগ এই নিয়ে ঘরে বসেই মাসে আয় করছেন প্রায় ১ লাখ টাকা থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ব্যক্তি পর্যায় এই পেশায় সীমাবদ্ধ না থেকে বেশ কয়েকজন গড়ে তুলেছেন ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান। যে কারনে বর্তমান সরকার এই পেশাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদিতে গড়ে তুলেছেন শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার।
এ বিষয়ে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার (বিএম কলেজ অস্থায়ী কার্যালয়)-এর প্রশিক্ষক মো. এ.কে.এম মাসুদ আলম জানান, মো. নওশাদ শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার-এর ২য় ব্যাজের ছাত্র। নওশাদের মতো আদিত্য, ইফতি, জয়ন্ত জয়, রাকিব হাসান ও মো. মাজহারুল ইসলামসহ বরিশাল জেলায় কাজ করছেন শতাধিক তরুণ-তরুণী আউটর্সোসিং পেশায়। তারা ঘরে বসে দেশী ও বিদেশী কোন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্রাফিক্স, এ্যনিমেশন, ওয়েব ডিজাইন, ডাটা এন্ট্রির মতো শত-শত ইন্টারনেট ভিত্তিক কাজ করে দিচ্ছেন। এতে করে  নিজেরাও হচ্ছেন স্বাবলম্বী ও দেশের অর্থনীতিতে ফেলছে প্রভাব। যে কারনে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার পাশাপাশি বেসরকারী কিছু প্রতিষ্ঠানও দিচ্ছে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ।
এ প্রসঙ্গে নগরীর গোরস্থান রোডের বাসিন্দা টপ লেভেল সেলার ফ্রিল্যন্সার মো. নওশাদ বলেন, শুরুটা ছিলো একদমই কৌতুহলে। ২০১৪/১৫ সালের দিকে এসএসসি পাশের পর পেপারে একটা লেখা দেখে অনুপ্রাণিত হই। তখন ইন্টারনেট সহজলভ্য না হবার কারনে কিছু পেপার, ব্লগ আর কিছু বই পড়ে জানার চেষ্টা চলাতে থাকি। এভাবে কেটে গেল কয়েকটি বছর। এরপর একটা সময় সরকারি ফ্রি স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স করে ডিজিটাল মার্কেটিং উপর কাজ শিখে, ফিভার মার্কেট প্লেসে কাজ শুরু করি। অনেকটা সময় অপেক্ষা করে কাজ পেয়ে যাই।  প্রথম দিকে মাসে ৭০ থেকে ৮০ ইউএস ডলার আর্ন করতে পারলেও নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বর্তমানে মাসে ৪’শ থেকে ৫’শ ইউএস ডলার সম্ভব হচ্ছে।
ফ্রিল্যন্সার নওশাদ আরো বলেন, বর্তমানে আমি সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, অনুসন্ধান ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন ও সামগ্রী বিপণনসহ বিভিন্ন  বিভিন্ন ধরনের বিন ডেভলম্যান্ট সলিউশন সেবা দিয়ে থাকি। করোনাকালীন সময় কাজ কিছুটা কমে গেলেও বর্তমানে কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের বেশ কিছু কার্যকরী উদ্যোগের কারনে বর্তমানে দেশ প্রায় ৬ লাখ মানুষ ফ্রিল্যন্সিং করছে।
নগরীর কলেজ এভিনিউ’র বাসিন্দা প্রফেশনাল ফ্রিল্যন্সার মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, ২০১০ সালে এসএসসি পাশ করেছি। বর্তমানে একজন প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার ডিজিটাল মার্কেটার। ২০১৬ সালে আই.সি.টি মন্ত্রনালয়ের লারনিং এন্ড আর্নিং প্রকল্পের আওতায় ডিজিটাল মার্কেটিং-এর উপরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি এবং ২০১৬-এর জুন মাস থেকে ফ্রিল্যান্সিং এ ডিজিটাল মার্কেটিং-এর কাজ শুরু করি। ২০১৭ সালে আই.সি.টি মন্ত্রণালয় থেকে জেলার সেরা ফ্রিল্যান্সার হিসাবে পুরস্কার পাই। ২০১৯ সালে আমি লন্ডন ভিত্তিক "ফাইবারবয়" নামে আমার প্রথম ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি শুরু করি।
ফ্রিল্যন্সার মাজহারুল ইসলাম আরো জানান, বর্তমানে এই ডিজিটাল এজেন্সির মাধ্যমে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কোম্পানির ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েবসাইট ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন ও অফিস ম্যানেজমেন্ট-এর সার্ভিস প্রদান করছি। বরিশালে ১৫ জনের একটা প্রফেশনাল টিম এই ফ্রিল্যান্সিং কাজগুলো পরিচালনা করে থাকেন। ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে লন্ডন ভিত্তিক "টপেন্সি লিমিটেড" নামে আমাদের দ্বিতীয় ডিজিটাল আইটি কোম্পানির যাত্রা শুরু করেছি। ভবিষ্যতে পরিকল্পনা রয়েছে এই আইটি কোম্পানির উদ্যোগে বরিশালে একটি আইটি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা ও তরুণ প্রজন্মের যারা ফ্রিল্যান্সিং-এর প্রতি আগ্রহী তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাবলম্বী করা।
এ প্রসঙ্গে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার কর্তৃক পরিচালিত ব্যাবিলন রিসোর্স-এর কো-অডিনেটর  মো. আলামিন বলেন, বরিশালে যারা ফ্রিল্যন্সিং পেশায় রয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় সকলই শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার প্রজেক্ট’র আওতায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এসব তরুণ-তরুণী সকলেই বর্তমানে স্বাবলম্বী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়