শিরোনাম

কিশোরগঞ্জ, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেস ওয়েটার জাহাঙ্গীর আলম (৩০) এর দাফন গতকাল সম্পন্ন হয়েছে। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নে তার নিজ গ্রামে সামরিক মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়।
গতকাল রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টায় ঢাকার সেনানিবাস থেকে হেলিকপ্টারে করে জাহাঙ্গীর আলমের মরদেহ পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের হেলিপ্যাডে পৌঁছায়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে মরদেহ নেওয়া হয় উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামে তার নিজ বাড়িতে। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে পারিবারিক জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সামরিক মর্যাদায় তার দাফন সম্পন্ন হয়।
নামাজে জানাজায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সেনাবাহিনীর কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর নিয়াজ মাখদুম, পাকুন্দিয়া সেনা ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার আবির আহমেদসহ সেনাবাহিনীর অন্যান্য কর্মকর্তারা। এ ছাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত জাহান, কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মওলানা শফিকুল ইসলাম মোড়ল, পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তৌফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। নিহতের পরিবার-স্বজন ও বিপুল সংখ্যক এলাকাবাসী জানাজায় অংশ নেন।
এর আগে সকালে ঢাকার সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে সকাল সোয়া ৯টার দিকে জাহাঙ্গীর আলমসহ নিহত শান্তিরক্ষীদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জাহাঙ্গীর আলম কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের আকন্দ বাড়ির হজরত আলীর পুত্র। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেস ওয়েটার পদে কর্মরত ছিলেন। প্রায় ১১ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হন। এর আগে গত ৭ নভেম্বর শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের জন্য জাহাঙ্গীর আলম সুদানে যান।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে শহীদ শান্তিরক্ষীদের মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম তার মরদেহ গ্রহণ করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিন ভাইয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন মেজো। তার বড় ভাই মো. মোস্তফা প্রবাসে কর্মরত এবং ছোট ভাই মো. শাহিন মিয়া কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। দেশের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিদেশের মাটিতে শহীদের কাতারে যুক্ত হলেন জাহাঙ্গীর আলম।
উল্লেখ্য, ওই হামলায় ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হওয়ার পাশাপাশি আরও নয়জন আহত হন। আহতদের মধ্যে আটজন কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অবস্থিত আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে (লেভেল-৩) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বর্তমানে তারা সবাই শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।