বাসস
  ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:৩৩

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে স্বদেশে পা রাখবেন তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি

ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : লন্ডনে দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর স্বদেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

আজ রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মহাসচিব বলেন, ‘একটা স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছি। আমি আপনাদের অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, আমাদের কোটি কোটি মানুষের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ, যিনি প্রায় দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে নির্বাসিত অবস্থায় বিদেশে রয়েছেন এবং বিগত প্রায় একযুগ ধরে তিনি গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আমাদের দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আমাদের গণতন্ত্র উত্তরণের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের সফলের দারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছেন, আমাদের সেই সংগ্রামে নেতা, এদেশের গণমানুষের অত্যন্ত প্রিয় মানুষ তারেক রহমান, তিনি আগামী ২৫ ডিসেম্বর ঢাকার মাটিতে আমাদের মাঝে এসে পৌঁছাবেন।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে এবং সবার পক্ষ থেকে আমরা তার এই আগমনকে শুধু স্বাগত নয়, আমরা আনন্দের সঙ্গে সমগ্র জাতিকে জানাতে চেয়েছি। গণতন্ত্র উত্তরণের পথে যে সমস্ত বাধাগুলো সৃষ্টি হয়েছিল, আমরা মনে করি- আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে এসে পৌঁছালে সেসমস্ত বাধা দূর হয়ে যাবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, লন্ডনে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যবর্তী সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সুতরাং নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের যতটুকু একটা শঙ্কা ছিল, সেটা চলে গিয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মধ্যদিয়ে নির্বাচনের যে রেল চলতে শুরু করেছে, সারাদেশের মানুষের মধ্যে যে আশা-প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে- সেটা বাস্তবায়িত হতে চলেছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আগমন অত্যন্ত সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে যেন হতে পারে, গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা কামনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে উনি ২৫ তারিখে এসে ঢাকায় পৌঁছাবেন, ইনশাআল্লাহ।

তারেক রহমান ২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর গ্রেফতার হন। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবার যুক্তরাজ্যে যান। এর পর থেকে সেখানেই আছেন তিনি।

চব্বিশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। আওয়ামী আমলে তারেক রহমানকে বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা দায়ের করা হয়। বিভিন্ন মামলায় তাকে আসামি করা হয়। এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত, বানোয়াট বলে দাবি করেছিল বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠন। তাকে তার অনুপস্থিতিতে বেশ কয়েকটি মামলায় সাজার রায় দেয়া হয়।

আইনি প্রক্রিয়ায় সাজার রায় বাতিল এবং কোনো কোনো মামলায় আইনি প্রক্রিয়ায় অব্যাহতি পান।

সম্প্রতি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন তারেক রহমান। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘এমন সংকটকালে মায়ের স্নেহ-স্পর্শ পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোনো সন্তানের মতো আমারও রয়েছে। কিন্তু অন্য আর সবার মতো এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।’

ওই পোস্টে তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘স্পর্শকাতর বিষয়টির বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত। রাজনৈতিক বাস্তবতার এ পরিস্থিতি প্রত্যাশিত পর্যায়ে উপনীত হওয়ামাত্রই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আমার সুদীর্ঘ উদ্বিগ্ন প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে বলেই আমাদের পরিবার আশাবাদী।’

এরপর সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বারবার বলা হয়েছে, তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই।

আজ রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান এর স্বদেশে আশা নিয়ে ব্রিফ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছে। যারা গুলি চালিয়েছে, তাদের অতি দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে। তিনি বলেন, এ ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়, যেসব অপশক্তি এই দেশে নির্বাচন বানচাল করার জন্য কাজ করছে, নির্বাচন যাতে না হয়, সেই চেষ্টা করছে, এটি তাদেরই একটি চক্রান্ত হতে পারে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ঢাকাু৮ আসনের প্রার্থী। একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি সহানুভূতি দেখানোর জন্য হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু ব্যক্তি, সমর্থক এবং আরও কিছু চক্রান্তকারী সমবেত হয়ে উত্তেজনামূলক স্লোগান দেয় এবং মব সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়েছে। বিএনপি এটার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং হুঁশিয়ার করে দিচ্ছে, এ ধরনের আচরণ করতে গেলে বিএনপি বসে থাকবে না। বিএনপি তার জবাব সঙ্গে সঙ্গে দেবে।

বিএনপি কোনো গোলযোগ ও সন্ত্রাস চায় না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তবে বিএনপির ওপর কোনো আঘাত এলে সেটি বিএনপি সহজভাবে নেবে না। এর জবাব কীভাবে দিতে হয়, সেটি বিএনপি জানে।

মব সৃষ্টি না করে, নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট না করে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, নইলে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ ব্যাহত হবে। সব মহল যাতে এ বিষয়কে গুরুত্ব দেয়।

ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন।