বাসস
  ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:৫২

জলবায়ু অর্থায়ন বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

প্রতীকী ছবি। ফাইল

ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): দেশের আসন্ন জলবায়ু অর্থায়ন কৌশল প্রণয়নের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বুধবার ঢাকায় একটি উচ্চপর্যায়ের পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের আয়োজনে, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি)-এর সহযোগিতায় এ পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী এবং আন্তর্জাতিক অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে এ পরামর্শ সভার লক্ষ্য ছিল ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত চাপের প্রেক্ষাপটে জলবায়ুসম্পর্কিত সম্পদ কীভাবে আরও কার্যকরভাবে সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা করা যায় তা জোরদার করা।

ইনক্লুসিভ বাজেটিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিং ফর ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স (আইবিএফসিআর) প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত এ কর্মশালাটি এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দ্রুত তীব্রতর হচ্ছে।

আজ ইউএনডিপি'র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে ০.৫৬ শতাংশেরও কম অবদান রাখলেও সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। বর্তমান হিসাব অনুযায়ী দেশের বার্ষিক জলবায়ু অর্থায়নের প্রয়োজন দাঁড়িয়েছে ২৬.১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা জিডিপির প্রায় ৫.৮ শতাংশ।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের ভিন্নভাবে ভাবতে হবে—দক্ষতা বাড়াতে হবে, ধীরগতি টেন্ডারের বাইরে গিয়ে অর্থায়ন প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে এবং স্পষ্ট কর্ম-দল গঠনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় ও এনজিওগুলোকে সক্ষম করতে হবে, যাতে জলবায়ু অর্থায়ন প্রকৃত অর্থে ফলভিত্তিক হয়।'

কর্মশালার সভাপতিত্ব করেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও সুপার-উইং প্রধান মো. হাসানুল মতিন। তিনি বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তন আর ভবিষ্যতের হুমকি নয়—এটি বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা। জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা নির্ভর করছে শুধু পরিবেশগত নীতিমালার ওপর নয়, বরং এমন একটি শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থার ওপর যা জলবায়ু অর্থায়ন সংগ্রহ, ব্যবস্থাপনা ও নজরদারি করতে সক্ষম।'

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব ও ইউএন উইং প্রধান একেএম সোহেল বলেন, 'বাংলাদেশের পক্ষে আর ঋণ বাড়ানো সম্ভব নয়। আমাদের জলবায়ু অর্থায়ন কৌশল পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছে যে জলবায়ু কার্যক্রমে অর্থায়নের পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করতে হবে—অতিরিক্ত ঋণের বদলে ইকুইটি-ভিত্তিক ও নিশ্চয়তাপ্রাপ্ত অর্থায়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।'

এএফডির উপপরিচালক সিসিলিয়া কোর্তেসে বলেন, 'ঘাটতি পূরণ মানে হলো স্থানীয় সরকার ও কমিউনিটিতে দ্রুততম সময়ে জলবায়ু অর্থায়ন পৌঁছে দেওয়া। সঠিক ও স্পষ্ট সামাজিক কৌশল থাকলে আমরা এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব যা সত্যিকার অর্থে সামনের সারির ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর উপকারে আসবে।'

সুইডেন দূতাবাসের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্রথম সচিব এবং সহযোগিতা বিভাগের উপপ্রধান নাইওকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রোম বলেন, 'পরিবেশ ও জলবায়ুুবিষয়ক লোকাল কনসালটেটিভ গ্রুপে সুইডেনের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে জলবায়ু অর্থায়নের অগ্রাধিকার নির্ধারণে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিতে সহায়তা করছি—খণ্ডিত ও খাতভিত্তিক সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বিত পদ্ধতিতে কাজ করা, যাতে অভিযোজন ও প্রশমনুসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো যথাযথ অর্থায়ন পায়।'

অন্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. নজরুল ইসলাম, ইউএনডিপির ক্লাইমেট চেঞ্জ ও সাস্টেইনেবল ফাইন্যান্স বিষয়ক প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট ড. মালিহা মুজাম্মিল, আইবিএফসিআর-এর আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ আন্দ্রেয়াস বিয়ারমান এবং ইউএনডিপির কান্ট্রি ইকোনমিক অ্যাডভাইজার ওওয়াইস পাররেই।

অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি অর্থায়নের সম্ভাবনা, খাতভিত্তিক প্রয়োজন এবং সহযোগিতামূলক পথরেখা নিয়ে কারিগরি আলোচনা হয়, যা বৈশ্বিক উৎকৃষ্ট অনুশীলনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জাতীয় কৌশল প্রণয়নে ভূমিকা রাখবে।

কর্মশালার বিভিন্ন সুপারিশ দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন কৌশলের পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ এবং দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু ও উন্নয়ন পরিকল্পনাকে আরও শক্তিশালী করবে।