শিরোনাম

ঢাকা, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার, সুরক্ষা ও উন্নয়নে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আমাদেরই আপনজন; সমাজ ও রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদেরকে সঠিক মর্যাদা, সেবা ও পরিচর্যা, শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদে পরিণত করা সম্ভব। বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মূলধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ইকো সিস্টেমের মাধ্যমে সম্পৃক্তকরণ এখন সময়ের দাবি।’
বুধবার রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন চত্বরে ৩৪তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২৭তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উদ্যাপন উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আলোচনা সভা, সম্মাননা প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই তিনি বিজয়ের এ মাসে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। একই সঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
সমাজকল্যাণ সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান এবং আইনজীবী মোশাররফ হোসেন মজুমদার।
স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী ও সংস্থার প্রতিনিধি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
শারমীন মুরশিদ বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নেতৃত্ব ও সমান অংশগ্রহণে এবং গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশেও প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হয়। এই দিনে প্রতিবন্ধীদের অধিকার, মর্যাদা ও কল্যাণের কথা স্মরণ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, একটি দেশের টেকসই উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতি তখনই সম্ভব, যখন আমরা সমাজের সকল স্তরের মানুষকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে পারব।
উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি বড় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি জানান, বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে সারাদেশে প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এ পর্যন্ত ৩৮ লাখ ৩৫ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ১২টি ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত করে কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ বা সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের মাঝে ‘সুবর্ণ নাগরিক’ কার্ড বিতরণ কার্যক্রম চলছে।
সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৩৪ লাখ ৫১ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ভাতা দিয়েছি। এছাড়া ৮১ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপবৃত্তি দিয়েছি।
থেরাপি সেবা সহায়ক উপকরণ বিতরণ এবং তিন দিনব্যাপী প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন মেলার আয়োজন করার জন্য জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, কেবল সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ’ গড়তে হলে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। রাস্তাঘাট, গণপরিবহন, অফিস- আদালত এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিবন্ধী-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে। কর্মক্ষেত্রে তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
পরে তিনি বিভিন্ন কাজের অবদানের জন্য ২০ জন পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রতিবন্ধিতা উত্তরণে কাজ করে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, প্রতিবন্ধীদের সফল অভিভবিক ও কেয়ারগিভারকে নগদ ১০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট এবং সনদ প্রদান করেন।
প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ক্যাম্পাসের মেলায় এ বছরও প্রতিবন্ধীদের তৈরি ৩২টি স্টল অংশ নিয়েছে। মেলাটি ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।