শিরোনাম

চট্টগ্রাম, ১০ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট ছাপানোর জন্য বিসিআইসি’র কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড (কেপিএম) ৯১৪.৭১০ মেট্রিক টন রঙিন কাগজ সরবরাহ করবে। ইতোমধ্যে কেপিএমকে চাহিদাপত্র দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব কাগজের দাম প্রায় ১১ কোটি ১১ লাখ টাকা। সে অনুযায়ী ১৭৮.০০৯ মেট্রিক টন কাগজ সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি ৭৩৬.৭০১ মেট্রিক টন ধাপে ধাপে উৎপাদন করে সরবরাহ করা হবে।
ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনের কাজে ব্যবহারের জন্য কমিশন অধিকাংশ কাগজ এশিয়ার সর্ববৃহৎ কাগজ কল কেপিএম থেকে নেয়। ইসি থেকে চাহিদাপত্র পাওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাগজ সরবরাহ করতে উৎপাদন শুরু করেছে বলে জানিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ।
কেপিএমের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনে ব্যালট পেপার হিসেবে ব্যবহারের জন্য চাহিদা অনুযায়ী সময়মতো ইসিকে কাগজ দেওয়া হবে। ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য সাদা কাগজ ছাড়া আরো তিন রঙের কাগজ প্রয়োজন হয়। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ইসির চাহিদা অনুযায়ী রঙিন কাগজ সরবরাহ করবে কর্ণফুলী পেপার মিল।
আজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেপিএম-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ।
তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য নির্বাচন কমিশন কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে বিভিন্ন সাইজের মোট ৯১৪.৭১০ মেট্রিক টন কালার কাগজের চাহিদাপত্র দিয়েছে। আমাদেরকে ডিসেম্বরের মধ্যে কাগজ সরবরাহের জন্য বলেছে। আমরা উৎপাদন শুরু করেছি। ধাপে ধাপে সরবরাহ শুরু করব।
তিনি জানান, চলতি ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে নির্বাচন কমিশন থেকে রঙিন (সবুজ, গোলাপী, এজুর লেইড) এবং বাদামী সালফেট কাগজ মিলে সর্বমোট ৯১৪.৭১০ মেট্রিক টন কাগজের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৭৮.০০৯ মেট্রিক টন কাগজ সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি ৭৩৬.৭০১ মেট্রিক টন কাগজ শিডিউল অনুযায়ী সরবরাহ করা হবে। এসব কাগজের বাজার মূল্য প্রায় ১১.১১ কোটি টাকা।
তিনি আরও জানান, ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে কেপিএম-এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৫০০ মেট্রিক টন, যার মূল্যমান ৪০-৪৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১০৯৩ মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদিত হয়েছে।
এছাড়া সরকারি নির্বাচন কমিশনসহ বাংলাদেশ স্টেশনারি অফিস (বিএসও), বিভিন্ন বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ২ হাজার ৮৯৪ মেট্রিক টন কাগজ সরবরাহের আদেশ পাওয়া গেছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৭.৩৩ কোটি টাকা। ৮ নভেম্বর পর্যন্ত কাগজ বিক্রি হয়েছে ৯২৩ মেট্রিক টন।
কেপিএমের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আব্দুল্লাহ আর মাহমুদ বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রতিটি জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের আগে কেপিএম থেকে ব্যালট পেপার এবং পোস্টাল ব্যালটসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল কাগজ সংগ্রহ করে। সেই ধারাবাহিকতায় আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের কাজে ব্যবহারের জন্য কেপিএম থেকে কাগজ সরবরাহ করতে কমিশন চাহিদাপত্র দিয়েছে। নানাবিধ প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও সর্বস্তরের শ্রমিক কর্মচারী এবং কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনকে চাহিদানুযায়ী কাগজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরবরাহ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আশা করা যাচ্ছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব কাগজ সরবরাহ করার সম্ভব হবে।
কেপিএম সূত্র আরও জানায়, সরকার প্রতি বছর জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের মাধ্যমে স্কুল পর্যায়ে কোটি কোটি বই বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিতরণ করে। সেসব বইয়ের বেশিরভাগ কাগজ কেপিএম থেকে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু প্রায় ৭২ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রায়ত্ত মিলটিতে বর্তমানে নানা সংকট চলছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রতিষ্ঠানটি উন্নত মানের কাগজ উৎপাদন করে আসছে। ফলে দেশের সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর কাছে কেপিএমের কাগজের বেশ চাহিদা রয়েছে। শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানও কেপিএম থেকে কাগজ সংগ্রহ করে। তবে বিভিন্ন সমস্যার কারণে মিলের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।
এদিকে কেপিএম সিবিএ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু জানান, নির্বাচন কমিশন কাগজের চাহিদা দেওয়ায় কারখানার শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আনন্দ ফিরে এসেছে। এইভাবে যদি কেপিএম থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান কাগজ ক্রয় করে তবে কেপিএম আবার ঘুরে দাঁড়াবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৫৩ সালে ৬৮ একর জমি এবং ৪৩১ একর আবাসিক স্থাপনায় কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনায় প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কেপিএম উপমহাদেশের বৃহত্তম কাগজ কল হিসেবে যাত্রা শুরু করে। সাত দশকের পুরোনো এই প্রতিষ্ঠান বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও কাগজ উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। ৭২ বছরের পুরাতন কারখানা হওয়া সত্ত্বেও কেপিএম আজও গুণগত মান ঠিক রেখে উন্নত মানের কাগজ উৎপাদন করতে পারছে। সরকারের সহায়তা এবং সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হলে কর্ণফুলী পেপার মিলস আবারও তার পুরোনো জৌলুস ফিরে পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মিলটি কাঁচামালের জন্য সম্পূর্ণভাবে বাঁশ ও নরম কাঠের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঁশ ও নরম কাঠের সংকট দেখা দেওয়ায় মিলটি কাঁচামাল সংকটে ভুগছে। বর্তমানে মিলে প্রায় ৫০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক স্থায়ী-অস্থায়ীভাবে কর্মরত রয়েছেন।