বাসস
  ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২০:১৩
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২০:২৮

৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান স্মরণে দেশব্যাপী জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত 

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। কোলাজ : বাসস

ঢাকা, ৭ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থানকে স্মরণ করে আজ দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’।

দিনটি উদযাপন করা হয়েছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আবির্ভাবের ঐতিহাসিক মুহূর্তকে স্মরণ করার মধ্য দিয়ে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দিনটি উপলক্ষে আলোচনা সভা, র‌্যালিসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করে।

দিবসটি স্মরণে সকালে সারাদেশে বিএনপির সকল কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ১০টায় দলের শীর্ষ নেতারা শহীদ রাষ্ট্রপতি ও দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন।

বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। সারাদেশের জেলা ও উপজেলা শাখাগুলোও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করে।

এছাড়া বিএনপির সহযোগী সংগঠন ও স্থানীয় শাখাগুলো আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফটো প্রদর্শনী, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন এবং অনাথ শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণের মতো নানা আয়োজন করে।

দলটি আগামী ১২ নভেম্বর রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় আলোচনা সভার আয়োজন করবে।

বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক পোস্টে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতার বিপ্লব কেবল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বড় মোড় ঘুরানো ঘটনা নয়, বরং এটি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সূচনা।’

তিনি বলেন, ‘এই বিপ্লব দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’

তারেক রহমান আরও লেখেন, ‘সেদিন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ সিপাহি ও জনতা স্বাধীনতা রক্ষা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শপথ নিয়ে রাজপথে নেমেছিলেন। এই কারণেই ৭ নভেম্বরের বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র গড়ার জন্য ৭ নভেম্বরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ মুহূর্তে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।’

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আসা দেশের জন্য ছিল টার্নিং পয়েন্ট।’

তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জনগণ সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করেছিল। সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উত্থান ছিল দেশের জন্য এক ঐতিহাসিক টার্নিং পয়েন্ট।’

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য এখন নানা অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্র চলছে। ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের চেতনায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।’

আজ থেকে ৫০ বছর আগে, ১৯৭৫ সালের এই দিনে, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও সাধারণ জনগণের যৌথ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অরাজকতা ও অনিশ্চয়তার অবস্থা থেকে বেরিয়ে নতুন এক যাত্রা শুরু করেছিল।

৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে ঢাকাসহ সারাদেশের রাজপথে হাজারো মানুষ সিপাহি-জনতার এই অভ্যুত্থান উদযাপন করতে নেমে আসে। সেই মুহূর্তেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন। 

জাতি আবারও তার কণ্ঠে রেডিওতে শুনেছিল- ‘আমি জিয়া বলছি’- সেই পরিচিত আহ্বান, যা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় জনগণ প্রথম শুনেছিল। তার কণ্ঠে যেন আবার জীবন্ত হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতার প্রেরণাদায়ক স্মৃতি। জনগণ যেন বুক থেকে এক ভারী পাথর নেমে যাওয়ার স্বস্তি অনুভব করেছিল।

রাজপথ ভরে গিয়েছিল বিপ্লব ও বিজয়ের স্বতঃস্ফূর্ত মিছিলে। সৈনিক ও সাধারণ মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, হাতে হাত রেখে একসঙ্গে শ্লোগান তুলেছিল- ‘সিপাহি-জনতা ভাই ভাই, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান চিরজীবী হোন, সিপাহি-জনতা ঐক্যবদ্ধ হও।’

ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

এই বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ অরাজকতা ও অনিশ্চয়তার অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে নতুন এক পথে যাত্রা শুরু করে। ওই দিন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান দেশকে ভূরাজনৈতিক, সম্প্রসারণবাদী ও নব্য ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্রের জাল থেকে মুক্ত করেন।

জাতীয় সংকটের সেই ক্রান্তিকালে দেশপ্রেমিক বিপ্লবী সিপাহি ও জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের উৎখাত করে জেনারেল জিয়াকে নেতৃত্বে আনেন।

৭ নভেম্বরের পর থেকে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন স্বতন্ত্র বাঙালি সংস্কৃতি ও জাতিসত্তার বিকাশ শুরু হয়। উদিত হয় নতুন আশার আলো, যার নায়ক ছিলেন ইতিহাসের সেই মহান সন্তান- শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।

বছরের পর বছর নানা ষড়যন্ত্র চললেও, সেই সব ষড়যন্ত্র ভেদ করে জিয়া আজও মানুষের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছেন।