বাসস
  ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:০৬
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:১০

ব্রাজিলে আমাজন বন উজাড় কমেছে: ‘কপ৩০’ সম্মেলনের আগে স্বস্তির খবর

ঢাকা, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): আমাজন অঞ্চলে টানা চতুর্থ বছরের মতো বন উজাড় কমেছে বলে জানিয়েছে ব্রাজিল সরকার। জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন আয়োজনের কয়েকদিন আগে এ তথ্য দেশটির জন্য বড় স্বস্তির খবর হিসেবে এসেছে।

বিশ্বের নয়টি দেশে বিস্তৃত বিশাল এই রেইনফরেস্টের সবচেয়ে বড় অংশ ব্রাজিলে অবস্থিত। আমাজন বনাঞ্চল বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বনাঞ্চলের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণের কাজ করে ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (আইএনপিই)। 

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত বৃহত্তর লন্ডনের চেয়ে প্রায় চারগুণ বড় আয়তনের বন উজাড় হয়েছে। তবে এটি আগের বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ কম এবং ২০১৪ সালের পর সর্বনিম্ন।

আইএনপিই-এর সমন্বয়ক ক্লাউদিও আলমেইদা জানান, গত এক বছরে ৫ হাজার ৭৯৬ বর্গকিলোমিটার (২ হাজার ২৩৮ বর্গমাইল) প্রাকৃতিক বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। ফলে টানা চতুর্থ বছরের মতো বন উজাড়ের হার কমেছে। 

ব্রাজিলের মধ্যাঞ্চলের সাভান্না অঞ্চল সেরাদোতেও বন উজাড় ১১ শতাংশ কমেছে। 

আমাজন বন প্রচুর পরিমাণে কার্বন ধরে রাখে। এই রাসায়নিক উপাদান পোড়ালে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসে রূপান্তরিত হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ।

ব্রাজিলের পরিবেশমন্ত্রী মারিনা সিলভা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যখনই আমরা ভালো কিছু অর্জন করি, তখনই পরবর্তী চ্যালেঞ্জের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। আত্মতুষ্ট হওয়া যাবে না। আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় শূন্যে নামানো।’ 

দেশটির বামপন্থী প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ২০২৩ সালে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর শূন্য বন উজাড়কে সরকারের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেন।

আগামী নভেম্বরে আমাজনের বেলেম শহরে ‘কপ৩০’ জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। এই সম্মেলনকে সামনে রেখে বন সংরক্ষণকে শীর্ষ অগ্রাধিকার হিসেবে নিয়েছে দেশটি। 

ব্রাজিল বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী রাষ্ট্র। তবে, অন্যান্য দেশের মতো এই গ্যাস নিঃসরণের প্রধান কারণ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো নয় বরং বৃক্ষ নিধন। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাজন ও সেরাদো অঞ্চলের বন ধ্বংসের মূল কারণ কৃষিকাজ। এ ছাড়া দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় গরুর মাংস রপ্তানিকারক।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাজন ও সেরাদো অঞ্চলে বন ধ্বংসের ফলে জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ এই অঞ্চলগুলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত খরায় বিপর্যস্ত হয়েছে। 

কৃষকরা পশু চারণের জন্য আগুন দিয়ে জমি পরিষ্কার করার চেষ্টা করলে তা ছড়িয়ে পড়েছে এবং ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। 

২০২৪ সালে এধরনের অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ হেক্টর (৪ কোটি ৪৫ লাখ একর) আমাজন বন পুড়ে যায়। 

ব্রাজিলের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী সচিব জোয়াও পাওলো ক্যাপোবিয়ানকো বলেন, ‘যদি অতিমাত্রায় প্রতিকূল আবহাওয়া ও অসাস্বাভাবিক হারে আগুন না লাগত, তাহলে এই বছরই ইতিহাসের সবচেয়ে কম বন উজাড়ের রেকর্ড দেখা যেত।’

ডানপন্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারোর আমলে দুর্বল পরিবেশ সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নামে ভূমি উন্মুক্ত করার ফলে আমাজন বন উজাড়ের হার বেড়ে যায়। 

লুলা সরকার পরিবেশ সংরক্ষণে পুনরায় গুরুত্ব দিচ্ছে এবং জলবায়ু ইস্যুতে বিশ্বে নিজেদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন। 

তবে সম্প্রতি তেল অনুসন্ধান প্রকল্পে অনুমোদন দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। যদিও লুলার দাবি, এই অর্থ জলবায়ু অভিযোজন ও পরিবেশ সংরক্ষণে ব্যবহার করা হবে। 

চলতি মাসে রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেট্রোব্রাস আমাজন নদীর মোহনায় অনুসন্ধানমূলক তেল খনন শুরু করে। 

এ উদ্যোগের সমালোচনা করে পরিবেশবাদীরা বলছেন, এটি ‘কপ৩০’ আয়োজক দেশ হিসেবে ব্রাজিলের অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে।