শিরোনাম
ঢাকা, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে ভুক্তভোগীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে এবং সহায়তা জোরদারে কাজ করছে সরকার।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (এইচআরডিসি) জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সচিব বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী হাজার হাজার মানুষের ওপরে যে ধকল গেছে, সেটি কখনোই ভুলবার নয়। অভ্যুত্থানে আহত অনেকেই এখন উন্নত চিকিৎসা নিচ্ছে। পাশাপাশি আহতদের উন্নত মানসিক চিকিৎসার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত প্রত্যেককে উন্নত মানসিক চিকিৎসা দেওয়া হবে। যাতে তারা সুস্থ হওয়ার পাশাপাশি মানসিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে।
অনুষ্ঠানে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে ভুক্তভোগীদের জন্য ওয়েলবিইং প্রকল্পের উদ্বোধনী কর্মশালা আয়োজন করা হয়। প্রকল্পটি ডিগনিটির সহযোগিতায় এবং ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (ড্যানিডা) আর্থিক সহায়তায় হয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবু জাফর বলেন, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ও নিটোরের সহায়তায় ৪০ জন জুলাই অভ্যুত্থান ভুক্তভোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো হয়েছে। তিনি এই উদ্যোগের জন্য এইচআরডিসির প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কামাল আকবর উল্লেখ করেন, ফাউন্ডেশন বর্তমানে সীমিতসংখ্যক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কাজ করলেও মোট ১২ হাজার ৪৫৪ জন ভুক্তভোগীর বিষণ্নতা ও মানসিক আঘাত থেকে পুনর্বাসন নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, কার্যকর পুনর্বাসন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে গবেষণা পরিচালনা করা জরুরি।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা বলেন, মানসিক অসুস্থ ব্যক্তিকে পাগল হিসেবে হেয় করা উচিত নয়, বরং মানসিক রোগকে অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতার মতোই উপযুক্ত চিকিৎসার প্রয়োজনীয় একটি রোগ হিসেবে দেখা উচিত।
তিনি এইচআরডিসি ও ফাউন্ডেশনের মধ্যে যৌথ সহযোগিতার গুরুত্বও তুলে ধরে জুলাই অভ্যুত্থান ভুক্তভোগীরা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন এবং চিকিৎসা, পুনর্বাসন, অন্তর্ভুক্তি ও মর্যাদা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
কর্মশালার লক্ষ্য ছিল— অভ্যুত্থানে ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের জন্য পুনর্বাসন ও মানসিক স্বাস্থ্য ও মানসিক সহায়তা সেবা (এমএইচপিএসএস) শক্তিশালী করা।
উদ্বোধনী কর্মশালায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন, শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বাবা মাহবুবুর রহমান বশির। তিনি এইচআরডিসির প্রতি ভুক্তভোগীদের পাশে থাকার দায়িত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
এইচআরডিসির সচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুল হক স্বাগত বক্তব্যে রাখেন এবং মো. জিয়ানুর কবির (এইচআরডিসির পরিচালক) অভ্যুত্থান থেকে উদ্ভূত মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার তথ্য উপস্থাপন করেন।
বিশেষ অতিথি অ্যান্ডার্স কার্লসেন, বাংলাদেশে ডেনমার্ক দূতাবাসের উপ-প্রধান বলেন, ডেনমার্ক বাংলাদেশের সংঘাত-প্রভাবিত ব্যক্তিদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য ও মানসিক সহায়তা সেবা (এমএইচপিএসএস) এবং পুনর্বাসন কার্যক্রমে তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছে।
তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নিরাময় ও উন্নয়নের যাত্রায় ডেনমার্কের সহায়ক ভূমিকা নিয়ে গর্ববোধ করেন।
কর্মশালায় সিভিল সোসাইটি, এনজিও ও সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন— জেনা দেরাখশানি হামাদানি (আইসিবিবিআর,ডি), সুমাইয়া তাসনিম (সোচ্চার), ফরহাদ হোসেন (লিডো), মো. মাসুদ রানা সৌরভ (জুলাই যোদ্ধা সংসদ), আমিনুর রসুল (পিএইচএম), মো. আনোয়ার হোসেন (পরিচালক ও যুগ্ম সচিব, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো)।
তারা অধিকারভিত্তিক, ভুক্তভোগী-কেন্দ্রিক পুনর্বাসন, মানসিক সহায়তা এবং দীর্ঘমেয়াদি যত্ন নিশ্চিত করার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন।
এনআইএমএইচের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালাটি সফলভাবে ওয়েলবিইং প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করে, যা জুলাই অভ্যুত্থান ভুক্তভোগীদের মানসিক, সামাজিক এবং পুনর্বাসন সংক্রান্ত প্রয়োজন মেটাতে যৌথ প্রচেষ্টার পথ সুগম করে।