বাসস
  ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ২০:৩৯

নির্বাচনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্র চলছে: মির্জা ফখরুল

মঙ্গলবার ঢাকায় এক শিক্ষক মহাসমাবেশে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: বাসস

ঢাকা, ৭ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার একটি গভীর ও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে। 

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে দেশকে একদলীয় শাসনের দিকে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে, যার বিরুদ্ধে দেশের শিক্ষক সমাজসহ সচেতন নাগরিকদের সতর্ক থাকতে হবে।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বিএনপি সমর্থিত শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট আয়োজিত শিক্ষক মহাসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

ফখরুল ইসলাম বলেন, দেশের মানুষ আজ গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়ছে। এ অবস্থায় শিক্ষক সমাজের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। কারণ শিক্ষকরা শুধু পেশাজীবী নন, তারা জাতির বিবেক। তাই আসন্ন নির্বাচনে কেউ যেন অগণতান্ত্রিক শক্তির হাতের খেলায় পরিণত হতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আজকে একটি গভীর ষড়যন্ত্র চলছে- যে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফলকে আগেই নির্ধারিত করার চেষ্টা চলছে। প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ও কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মাধ্যমে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানোর এই অপচেষ্টা ব্যর্থ করতে হবে জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য একটাই- শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের সেই সুখী, সমৃদ্ধ ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাংলাদেশ গড়া। এমন একটি বাংলাদেশ যেখানে জনগণ প্রকৃত অর্থে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে, যেখানে শিক্ষা ও ন্যায়বিচার সবার জন্য সমানভাবে নিশ্চিত থাকবে।’

শিক্ষকদের দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা, অবসর বয়স ৬৫ বছর নির্ধারণ, নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ-এই দাবিগুলো আমরা সমর্থন করি এবং এগুলো আমাদের দলের ৩১ দফা কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত। বিএনপি বিশ্বাস করে-যদি শিক্ষক সমাজ মর্যাদা ও নিরাপত্তা না পান, তাহলে একটি প্রজন্মও সঠিকভাবে গড়ে উঠতে পারবে না।’

তিনি বলেন, শিক্ষকরা যদি তাদের অবস্থান থেকে নৈতিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, তাহলে গোটা সমাজ আলোকিত হবে। আমরা চাই শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন সংস্কার, যেখানে শুধু পাস নম্বর নয়, মানবিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম শেখানো হবে।

মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া এবং সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত মহাসচিব জাকির হোসেন।

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, যে শিক্ষক জাতিকে শিক্ষিত করেন, তাদের ন্যায্য দাবি মানতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা আজ সময়ের দাবি।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও ভয় ও নিয়ন্ত্রণের রাজনীতি চাপিয়ে দিয়েছে। এর অবসান ঘটাতে হবে।

অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, জাতি তখনই আলোকিত হবে, যখন শিক্ষক মর্যাদাপূর্ণভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন।

সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আনম এহছানুল হক মিলন বলেন, আমরা শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও মানবিক করে তুলতে চাই।

এছাড়া বক্তব্য দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এএসএম আমানুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, এবং শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুগিসউদ্দিন চৌধুরী।

সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, আফরোজা বেগম রীতা, কেন্দ্রীয় নেতা, শিক্ষক সংগঠনের শীর্ষ প্রতিনিধি এবং দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

বিকেল থেকে শিক্ষক ও কর্মচারীদের ঢল নামে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ব্যানার, ফেস্টুন, ও নানা দাবি আদায়ের স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে সমাবেশ প্রাঙ্গণ। উপস্থিত শিক্ষকরা সরকারের নীতির সমালোচনা করে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানান।