শিরোনাম
ঢাকা, ২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): গাজায় ত্রাণ বহনকারী একটি নৌবহর জানিয়েছে, ইসরাইলি নৌবাহিনীর বাধা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার তাদের কয়েক ডজন জাহাজ যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের দিকে ‘জোরালোভাবে’ এগিয়ে চলেছে।
জেরুজালেম থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে সুইডিশ জলবায়ু প্রচারক গ্রেটা থানবার্গসহ রাজনীতিবিদ এবং কর্মীদের বহনকারী প্রায় ৪৫টি জাহাজ নিয়ে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা গত মাসে স্পেন ত্যাগ করে। জাতিসংঘ বলেছে, সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে।
বুধবার ইসরাইলি নৌবাহিনী নৌবহরটিকে তাদের অবরোধের আওতায় আসা জলসীমায় প্রবেশের বিরুদ্ধে সতর্ক করার পর বাধা দেয় এবং থানবার্গের জাহাজটিকে সামনের দিকে আরো এগিয়ে যেতে বাধা দেওয়া হয়।
কিন্তু নৌবহরটি জানিয়েছে, ইসরাইলি বাধা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার ভোরে তাদের বেশিরভাগ জাহাজ তাদের যাত্রা অব্যাহত রেখে গাজা উপত্যকার উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছেছিল।
নৌবহরটি এক্স-এ টাইম স্ট্যাম্পসহ পোস্ট করেছে, স্থানীয় সময় ভোর ৩টা ২০ মিনিটে (০০২০ জিএমটি) ‘ইসরাইলি দখলদার নৌবাহিনীর অবিরাম আগ্রাসন সত্ত্বেও মাত্র ৪৬ নটিক্যাল মাইল দূরে ৩০টি নৌকা এখনো জোরেশোরে গাজার দিকে যাত্রা করছে’।
ফ্লোটিলার মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক বলেছেন, ইসরাইলি বাহিনী ২শ’ জন যাত্রী ১৩টি নৌকা আটক করেছে। যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই স্পেন এবং ইতালির নাগরিক ছিলেন।
কিন্তু, ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মিশন চলছে’।
তিনি অবশিষ্ট জাহাজ সম্পর্কে বলেছেন, ‘তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা অনুপ্রাণিত এবং আজ ভোরের মধ্যে অবরোধ ভাঙতে তারা তাদের সাধ্যমতো যা যা করার দরকার সবকিছু করছে’।
নৌবহরটি জানিয়েছে, বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে এই বাধাগুলো দেয়া হয়। তারা আন্তর্জাতিক জলসীমা অতিক্রম করার সময় এই পদক্ষেপকে ‘অবৈধ’ বলে বর্ণনা করেছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘নিশ্চিত বাধার বাইরেও লাইভ স্ট্রিম এবং আরো বেশ কয়েকটি জাহাজের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’
ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স-এক পোস্টে বলেছে, ‘নৌবহরের বেশ কয়েকটি জাহাজ নিরাপদে থামানো হয়েছে এবং তাদের যাত্রীদের ইসরাইলি বন্দরে স্থানান্তর করা হচ্ছে’।
এক্সে ২২ বছর বয়সি থানবার্গের জিনিসপত্র উদ্ধারের ফুটেজ পোস্ট করেছে এবং আরো বলেছে, ‘গ্রেটা এবং তার বন্ধুরা নিরাপদ এবং সুস্থ আছেন।’
হামাস ‘আন্তর্জাতিক জলসীমায়’ নৌবহরের বাধাদানকে ‘জলদস্যুতা এবং সামুদ্রিক সন্ত্রাসবাদের অপরাধ’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাসের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ওপর অতর্কিত হামলা গাজায় যুদ্ধের সূত্রপাত করেছিল।
স্পেন এবং ইতালি উভয়ই নৌ-প্রহরী পাঠিয়েছিল। তারা গাজা উপকূলে ইসরাইলের ঘোষিত নিষিদ্ধ অঞ্চলে প্রবেশের আগে জাহাজগুলোকে থামার আহ্বান জানিয়েছিল। তারা বলেছিল, তাদের ফ্রিগেটগুলো সেই সীমা অতিক্রম করবে না।
তিউনিসিয়ায় ১০ দিন যাত্রাবিরতির পর আয়োজকরা দুটি ড্রোন হামলার কথা জানিয়েছেন। ফ্লোটিলা ১৫ সেপ্টেম্বর আবার যাত্রা শুরু করে।
গ্রুপটি জানিয়েছে, তাদের প্রধান জাহাজগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আলমা। জাহজটির চারদিকে ‘একটি ইসরাইলি যুদ্ধজাহাজ আক্রমণাত্মকভাবে প্রদক্ষিণ করেছিল।’ আরেকটি জাহাজ ‘সিরিয়াস’ ‘অনুরূপ হয়রানিমূলক মহড়ার’ শিকার হয়েছিল।
-‘আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন’-
ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর ‘ভীতি প্রদর্শন’ কৌশল সত্ত্বেও নৌবহরটি এর আগে বিধ্বস্ত উপকূলীয় অঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
গ্রুপটি এক্স-এ বলেছে, ‘পূর্ববর্তী নৌবহরগুলোকে যেখানে আটক করা হয়েছিল অথবা আক্রমণ করা হয়েছিল সেই এলাকায় প্রবেশ করার সময় আমরা সতর্ক রয়েছি’।
ইতালিতে ইতোমধ্যেই নৌবহরের সমর্থনে সাধারণ ধর্মঘট হয়েছে। বুধবার রাতে রোমে শত শত মানুষ তার সমর্থনে সমবেত হন।
নেপলসে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীরা দক্ষিণ ইতালীয় শহরের প্রধান স্টেশনে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ট্রেন অবরোধ করে এবং পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানাতে ইউনিয়নগুলো শুক্রবার আবারও ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো বলেছেন, তিনি নৌবহরকে বাধা দেয়ার কারণে তার দেশে অবস্থানরত সমস্ত ইসরাইলি কূটনীতিককে বহিষ্কার করবেন।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এটিকে ‘সন্ত্রাসবাদের একটি কাজ যা আন্তর্জাতিক আইনের সবচেয়ে গুরুতর লঙ্ঘন এবং নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের জীবনকে বিপন্ন করে তোলে’ বলে অভিহিত করেছেন।
জুন এবং জুলাই মাসে ইসরাইল একই ধরনের প্রচেষ্টা রুখে দেয়।
-‘এখন থামো’-
স্পেনের ডিজিটাল রূপান্তর মন্ত্রী অস্কার লোপেজ নৌবহরটিকে গাজা থেকে ১৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত ইসরাইলের ঘোষিত নিষিদ্ধ অঞ্চলে প্রবেশ না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
ইতালিও তাদের ফ্রিগেটটিকে সেই সীমায় থামার পর কর্মীদের ‘এখনই থামতে’ অনুরোধ করেছিল।
স্পেনের কর্মীরা বলেছেন, স্পেন এবং ইতালির সিদ্ধান্ত তাদের প্রচেষ্টাকে ‘নাশকতার’ একটি প্রচেষ্টা।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, কর্মীরা কোনো হুমকি নয় এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে তাদেরকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা না করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
ইতালির জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, এই ভ্রমণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ প্রস্তাবিত গাজা শান্তি পরিকল্পনাকে বিপদে ফেলতে পারে, যা এখনো আলোচনাধীনে রয়েছে।