বাসস
  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩:১০

গ্রামে হিমাগার স্থাপনে ডাচ সরকারের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফ। ছবি : প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক

নিউইয়র্ক, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফের সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশের গ্রামে হিমাগার সুবিধা স্থাপনের জন্য নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের মৌসুমে নষ্ট হতে থাকা কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণ ও বাজারজাত করা সহজ হবে।

বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধনশীল ফল ও শাকসবজি উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু ফসলের মৌসুমে স্থানীয় বাজারে প্রচুর পরিমাণে পণ্য আসায় দাম হঠাৎ করে পড়ে যায়। এর ফলে লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। গ্রামীণ এলাকায় স্বল্পমেয়াদী হিমাগার সুবিধার অভাবে তারা তাদের উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণ করতে পারছেন না।’

তিনি বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস কৃষি প্রযুক্তিতে বিশ্বনেতা। আমাদের প্রয়োজন আপনার দেশের আধুনিক প্রযুক্তি, যাতে আমরা আমাদের ফল ও শাকসবজি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে পারি। এছাড়া, আপনারা চাইলে আমাদের কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করার জন্য গবেষক ও বিজ্ঞানী পাঠাতে পারেন।’

প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ‘প্রতিবছর বাংলাদেশে মূলত সংরক্ষণের অভাবে হাজার হাজার টন ফল ও শাকসবজি নষ্ট হয়। এতে কৃষকদের বড় ধরনের আর্থিক লোকসান হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা জাতীয় ফলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তবে রপ্তানি সম্প্রসারণের জন্য উন্নত সংরক্ষণ প্রযুক্তি ও কার্যকর লজিস্টিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।’

অধ্যাপক ইউনূস নেদারল্যান্ডসের পানি ব্যবস্থাপনা, নদী ব্যবস্থাপনা ও সামুদ্রিক প্রযুক্তিতে নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমরা চাই নেদারল্যান্ডস আমাদের জলবায়ু ও পানি ব্যবস্থাপনা, সমুদ্র গবেষণা এবং বাংলাদেশের নদীগুলোকে নৌগমনযোগ্য রাখার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।’

ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফ বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার উত্থাপিত বিষয়গুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং জবাবে বলেন, ‘আমি উত্থাপিত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করব। এছাড়া, আমরা বস্ত্র খাতেও সহযোগিতার সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে আগ্রহী।’

বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকার গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম, মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ঝুঁকি এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতির বিষয়েও আলোচনা করেন। প্রধান উপদেষ্টা আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সহায়তা কামনা করেন।

তিনি বলেন, ‘তথ্যবিকৃতির ভয়ঙ্কর এই ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের আপনার সহযোগিতা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া আমরা এর বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়তে পারব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৫ বছরের স্বৈরশাসনের সময়ে প্রকৃতপক্ষে কোনো নির্বাচন হয়নি, শুধু ভুয়া নির্বাচন হয়েছে। বর্তমান সময়ে আগের শাসকদের ঘনিষ্ঠরা মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে।’

প্রধান উপদেষ্টা তার সরকারের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে জানান, দেশে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রস্তুতির জন্য বৈশ্বিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে সহায়তায় তিনি এবং ছয়জন রাজনৈতিক নেতা নিউইয়র্ক সফর করছেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ তরুণ এখন ভোট দিতে আগ্রহী। তাদের মধ্যে অনেকে এখনও ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি।’

ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো গভীর উদ্বেগের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, ‘এটি বিশ্বের গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় হুমকি। এর বিরুদ্ধে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি।’

বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম উপস্থিত ছিলেন।