বাসস
  ২২ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:৩৪

বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে পশ্চাদপদতা অতিক্রম করা সম্ভব নয় : টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী

ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর, ২০২১ (বাসস) :  ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে পশ্চাদপদতা অতিক্রম করা সম্ভব নয়। প্রযুক্তির চাকা সচল রাখতে প্রযুক্তিগত শিক্ষায় সম্পৃক্ত শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অপরিসীম- এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, টেলিকমের ভূমিকাও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আজ বুধবার রাজধানীতে বাংলাদেশ প্রৌকশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে (বুয়েট)  ‘টেলিকমিউনিকেশন্স  ও ফটোনিক্স’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপি  চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। বুয়েট’র ইইই বিভাগের সহযোগিতায় আইইই কমিউনিকেশন্স বাংলাদেশ চ্যাপ্টার এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ডেনমার্কের আরহাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইই আইসিটিপি জেনারেল চেয়ার অধ্যাপক রামজি প্রাসাদ, বুয়েট’র উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার, বুয়েট’র ইইই বিভাগের প্রধান অধ্যাাপক কামরুল হাসান, আইইই বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান অধ্য পক এম মশিউল হক ও বুয়েট’র আইআইসিটি’র অধ্যাপক এমডি সাইফুল ইসলাম বক্তৃতা করেন।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু  সার্বিক বিবেচনায় টিএন্ডটি বোর্ড গঠন ও আইটিইউ’র সদস্য পদ অর্জনের বিষয়টিকে অগ্রধিকার দেন। এরপর তিনি (বঙ্গবন্ধু) বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি প্রযুক্তি শিক্ষা সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।  
মোস্তাফা জব্বার এ সময় উল্লেখ করেন, প্রযুক্তি বিকাশে বঙ্গবন্ধুর স্থাপিত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে দূরদর্শী রাজনীতিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি-দুনিয়ায়’ বাংলাদেশকে নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
টেলিকমিউনিকেশন্স  ও ফটোনিক্স বিষয়ক এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- এ কথা উল্লেখ করে  মোস্তাফা জব্বার বলেন,‘বিজ্ঞান-প্রযুক্তি  ব্যবহার না করে আমরা সামনে এগুতে পারব না। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি যে কত সহায়ক তা করোনার ভয়াবহ সময়টায় প্রমাণ হয়েছে।’ বিশ্বে করোনা মহামারি সংক্রমণের এক বছরের মধ্যে   কোভিড-এর টিকা আবিস্কারও বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় বড় দৃষ্টান্ত বলে তিনি জানান।
ডিজিটাল প্রযুক্তি নিয়ে তাঁর (মোস্তাফ জব্বার) ৩৫ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে  মন্ত্রী বলেন,‘আমাদের তরুণ সমাজ অত্যন্ত মেধাবি ও সৃজনশীল’ । তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১৮ সালে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যােটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের পর আমাদের ছেলেরাই মহাকাশ বিজ্ঞানের ছাত্র না হয়েও নিরবচ্ছিন্নভাবে তা পরিচালনা করছে।’
মন্ত্রী আইওটি, এআই, রোবটিক্স, ব্লকচেইনসহ ডিজিটাল প্রযুক্তি নিয়ে অধিকতর গবেষণা এবং এসব প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রযুক্তিতে অতীতে শত শত বছরের পশ্চাদপদতা অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজ প্রযুক্তি ডিভাইস উৎপাদন এবং রপ্তানিকারী দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রযুক্তি আমদানিকারক দেশ থেকে উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এরই ধারবাহিকতায় বাংলাদেশ নেপাল ও নাইজেরিয়ায় কম্পিউটার ও ল্যাপটপ রপ্তানি করছে।
তিনি বলেন, ‘এছাড়াও আমরা আমেরিকায় মোবাইল রপ্তানি করছি। সৌদি আরবেও আইওটি পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। দেশের শতকরা ৬৩ ভাগ মোবাইল ফোনের চাহিদা আমাদের মোবাইল কারখানা থেকে মেটানো হচ্ছে। আমরা সৌদি আরব ও ভারতে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করছি। খুব শিগগিরই মালয়েশিয়া ও ভুটানে ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করা হবে।’
টলিযোগাযোগ মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ২০২২ সালের মধ্যে  দেশের সকল ইউনিয়নে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সংযোগ পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, ১৬০টি দুর্গম ইউনিয়ন ছাড়া ইতোমধ্যে  দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইভার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
কৃষি ও মৎস্য চাষে আইওটি ডিভাইস কাজে লাগানোর মাধ্যমে দেশে কৃষি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করতে বুয়েটসহ ডিজিটাল প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিশেজ্ঞদের ভূমিকা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপরও তিনি  গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়াও, ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালুর ফলে দেশে কৃষি, শিল্প,স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য অনেক খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হবে বলেও মোস্তাফা জব্বার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি দেশের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোতে ফাইভ-জি প্রযুক্তি নিয়ে উন্নয়ন ও গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশে টেলিকমখাতের ভূমিকা অপরিসীম উল্লেখ করে বুয়েট’র ভিসি বলেন,‘এ খাতে আরও গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য টেলিকমখাতের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন। তিনি এ সময় বলেন, তাদের (বুয়েটের) শিক্ষার্থীদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এ্যানটাচমেন্টে পাঠাতে টেলিকম সেক্টর খুবই কার্যকর অবদান রাখবে।