বাসস
  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:০৭

শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদযাপনে প্রস্তুত সরকার

ঢাকা, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজা উদযাপনে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। 

তিনি জানান, আসন্ন দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবের আমেজে উদযাপনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত দেশজুড়ে মোট ৩২,৯৯০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হবে। 

এবার মণ্ডপগুলোর জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ২ কোটি টাকা।

গত বছর দুর্গাপূজায় মণ্ডপগুলোতে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। 

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে প্রতিটি মণ্ডপে ৫শ’ কেজি করে চালও দেওয়া হবে।

সরকার পূজা উদযাপন কমিটির নেতাসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে বিস্তারিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করেছে। দেশব্যাপী মণ্ডপগুলোর চারপাশে তিন স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। বিশেষ করে পূজা শুরুর আগে, পূজা চলাকালীন এবং প্রতিমা বিসর্জনের সময় ও পূজা শেষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।

পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি প্রায় ৩ লাখ আনসার সদস্য এবং নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক সারাদেশের পূজামণ্ডপে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দুর্গাপূজায় পুরো দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর (বুধবার) থেকে নিরাপত্তা কার্যক্রম শুরু হবে।

সীমান্তবর্তী মণ্ডপে বিজিবি, উপকূলীয় এলাকায় নৌ বাহিনী, কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশ দায়িত্বে থাকবে। বিশেষ করে, প্রতিমা বিসর্জন নিরাপদে সম্পন্ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নৌ পুলিশকে।

উপদেষ্টা আরও জানান, প্রতিটি পূজা মণ্ডপে আটজন আনসার সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট পূজা উদযাপন কমিটি কর্তৃক মনোনীত সাতজন স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন থাকবেন। সঙ্গে থাকবেন নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্বেচ্ছাসেবকরা।

তিনি আরও জানান, প্রতিটি মণ্ডপে সিসিটিভি স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়মিত টহল দেবে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যরা। সেনাসদস্যরা ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে প্রস্তুত থাকবেন।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও জানান, মণ্ডপকেন্দ্রিক যেকোন ঘটনা দ্রুত জানাতে বিশেষ একটি অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বছর দুর্গাপূজাকে ঘিরে কোন ধরনের নিরাপত্তা হুমকি নেই। পুলিশ, র‌্যাব ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখরভাবে পূজা উদযাপনের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার তদারকি করবে।

উপদেষ্টা বলেন, ‘কোন নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ নেই। এ বছর দুর্গাপূজা যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা, উৎসব ও শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হবে।’ দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে গুজবে কান না দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর উদযাপনের জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এ বছরের দুর্গাপূজা গত বছরের তুলনায় আরও ভালোভাবে উদযাপন করা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, পূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য পুলিশের তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও পূজার সময় যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোয়াট, ক্রাইম রেসপন্স টিম (সিআরটি) ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। এই সময় পুলিশ সদর দফতর ও অন্যান্য ইউনিটের মনিটরিং সেলও কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, দুর্গাপূজার সময় কেউ যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, পুলিশ সেটি নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।

যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর-৯৯৯ এ বা নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।