শিরোনাম
ঢাকা, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ঢাকা সফররত ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতি ড. মাহমুদ আল-হাব্বাশের সম্মানে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ নৈশভোজের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে দুই প্রধান বিচারপতি বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও করেন।
রাজধানীর হেয়ার রোডস্থ প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনে সোমবার রাতে এই নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতির সফরসঙ্গী হামজা ডানা ও সুহাইব সারহান, বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত মো. ইউসুফ রামাদান, ডেপুটি হেড অফ মিশন জিয়াদ হামাদসহ মিশনের অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ নৈশভোজে অংশ নেন।
এছাড়াও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকীসহ অন্যান্য কর্মকর্তা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম এশিয়া বিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামিল খান উপস্থিত ছিলেন।
সেসময় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতির বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে বিচার বিভাগের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ও গণমুখী বিচার ব্যবস্থা বিনির্মাণে তার গৃহীত সংস্কারের রোডম্যাপের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
তিনি ড. মাহমুদ আল-হাব্বাশকে জানান, ফিলিস্তিনি জনগণের মৌলিক মানবাধিকারসহ ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণ সবসময় সহমর্মী ও সংহতিশীল। এ প্রসঙ্গে তিনি দু’দেশের দীর্ঘদিনের সুদৃঢ় কূটনৈতিক সম্পর্কের কথাও উল্লেখ করেন।
অপরদিকে, ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশে একটি গণমুখী ও মানবিক বিচারব্যবস্থা গড়ে তুলতে ড. সৈয়দ রেফাতের নিরলস প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের কল্যাণে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ সহজতর এবং দখলদার বাহিনীর প্রত্যাহারের বিষয়ে তাদের সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
ড. আল-হাব্বাশ আরও উল্লেখ করেন যে, গাজা উপত্যকায় সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফিলিস্তিন সরকার কার্যকর রাজনৈতিক সমাধান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেন যে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নিউইয়র্কে একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যেটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বৈধতা নিশ্চিতকরণ, এই অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্কিত জাতিসংঘের প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়ন এবং আরব শান্তি উদ্যোগের আলোকে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি এই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের জনগণের অব্যাহত সমর্থনও প্রত্যাশা করেন।
নৈশভোজ ও দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের বিচার বিভাগীয় অঙ্গনে সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। উভয় দেশের প্রধান বিচারপতির মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ মতবিনিময় ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে এবং ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার যৌথ প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
এদিকে, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের কনফারেন্স কক্ষে ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতির সফরসঙ্গী এবং ইনফরমেশন সিস্টেম ইউনিটের পরিচালক সুহাইব সারহান বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রির কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কর্মশালা পরিচালনা করেন।
এতে ফিলিস্তিনের বিচার বিভাগের ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া কীভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং সম্পূর্ণ ডিজিটাইজড বিচারব্যবস্থা কীভাবে কার্যকরভাবে পরিচালিত হচ্ছে তা তুলে ধরা হয়। এর মাধ্যমে উভয় দেশের বিচার বিভাগীয় অঙ্গনে পারস্পরিক সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় নতুন মাত্রা লাভ করেছে, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম মঙ্গলবার বাসস’কে এ তথ্য জানান।